উজান থেকে নেমে আসা পানিতে তিস্তার পানি বিপদসীমার উপরে উঠে এখনই প্লাবিত লালমনিরহাটের একটি গ্রাম; এর মধ্যে ওই অঞ্চলে চলতি মাসে ভারিবর্ষণের আভাস রয়েছে।
Published : 02 Jul 2017, 07:51 PM
তিস্তার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা-কুশিয়ারায়ও পানি বাড়তে থাকায় স্বাভাবিক বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
জুলাই মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসের বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাসের প্রথমার্ধ্বে সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অববাহিকায় ভারি বর্ষণ হতে পারে।
মৌসুমী বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু কিছু স্থানে স্বাভাবিক বন্যার শঙ্কার কথা জানান তিনি।
ইতোমধ্যে ভারি বর্ষণের পাশাপাশি উজানের ঢলও আসতে শুরু করেছে। কয়েকদিনে সিলেট, মৌলভীবাজার, লালমনিরহাট ও শরীয়তপুরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত এলাকায় পানিবন্দি হয়েছে অনেক পরিবার। বন্যার সঙ্গে ভাঙনও দেখা দিয়েছে।
দেশের নদীগুলোর ৯০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে রোববার ৫টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫টি পয়েন্টে পানি বেড়েছে, কমেছে ৩২টি পয়েন্টে।
“আরও পাঁচদিন পানি বাড়তে থাকবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি এলাকায় বিপদসীমার উপরে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে উত্তরের কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দেবে।”
আবহাওয়াবিদরা জানান, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। এ মাসে ১৬-২২ দিন বৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।
সোমবারের পূর্বাভাসের বিষয়ে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণও হতে পারে।
ভারি বর্ষণে স্বাভাবিক বন্যা হলেও এখন বন্যার তীব্রতা বাড়ার শঙ্কা করছেন না বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ।
তিনি বলেন, “উজানে পানি বাড়তে থাকলে আমাদের এখানকার পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। মাসের শেষার্ধের আবহাওয়ার উপরই নির্ভর করবে সবকিছু।”
২০১৬ সালের জুলাইয়ে উজান থেকে নামা ঢল ও বৃষ্টির পানিতে দেশের ১৬টি জেলার ৫৯টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়।
প্রতিবছর জুলাই-আগস্ট মাসে ভারিবর্ষণের সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে গড়ে ২০-২৫ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। এ সময়ে স্বাভাবিক মৌসুমী বন্যা এমনই হয়।
তবে মধ্য অগাস্ট পর্যন্ত দেশে ও উজানে ধারাবাহিক বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে খারাপের দিকে যায় বন্যা পরিস্থিতি। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র একসঙ্গে ফুঁসে উঠলেই ভয়াবহ রূপ নেওয়ার শঙ্কা থাকে।
২০০৭ সালে বাংলাদেশের ৪০ শতাংশের বেশি এলাকা প্লাবিত হয়েছিল।
২০১৩ সালে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতে মাত্র ১০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। ২০১৫ সালেও প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা বন্যা কবলিত হয় বলে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য।
গত কয়েক দশকে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে, তখন ৬৮ শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গিয়েছিল। ১৯৮৮ সালের বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল ৬১ শতাংশ এলাকা।