প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোটের রাজনীতির ‘ক্যালকুলেশন’ থেকে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আপস করছেন মন্তব্য করে অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেছেন, ধর্মীয় মৌলবাদীদের সঙ্গে উঠবস তাকে মানায় না, এতে তার ভরাডুবি হবে।
Published : 10 Jun 2017, 12:14 AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির এই অধ্যাপক বিদ্যমান পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে কওমি মাদ্রাসার সনদকে স্নাতকোত্তরের মর্যাদা দেওয়ার তীব্র নিন্দা করেছেন।
শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে ছাত্র-জনতার ব্যানারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি বলেন, “তারা আরবি, ফারসি পড়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিক, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু তাদের তো বাংলাদেশের ইতিহাস পড়তে হবে, সমাজবিজ্ঞান পড়তে হবে।
“কওমি মাদ্রাসার সিলেবাস পরিবর্তন করে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়নি। এতো সস্তায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার মতো!”
মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার এই অবস্থানের সমালোচনা করে সিপিবি নেতা এম এম আকাশ বলেন, “হেফাজতের সঙ্গে তিনি আপস করে ক্ষমতায় থাকতে চান। কিন্তু নির্বাচনে তিনি তো হেফাজতের ভোট পাবেন না। যাদের সঙ্গে আজ তিনি উঠবস করছেন, তা মোটেও মানায় না তাকে। তিনি ডুববেন…”
আকাশ বলেন, “যদি তারা পার্বত্য শান্তি চুক্তির বিরোধী কিছু করে থাকে, তবে প্রশাসন কেন আটকাল না? এভাবে তো পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন হবে না।”
তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারারও কঠোর সমালোচনা করেন এম এম আকাশ।
জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ রুখতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
‘পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন রুখে দাঁড়াও’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত এই সমাবেশে অধিকারকর্মী খুশি কবির সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “জনগণের মতামত উপেক্ষা করে, জনগণকে বিচ্ছিন্ন করে কোন গণতন্ত্রের কথা বলে! যদি তারা জনগণকেই উপেক্ষা করল, তবে বলব- সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।”
তার অভিযোগ, রাঙামাটির লংগদুতে হিল উইমেনস ফেডারেশনের বিক্ষোভ মিছিল থেকে চায়না পাটোয়ারীকে ‘অবৈধভাবে’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“চায়নার বয়স ১৮ বছরের নিচে। অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের কাউকে গ্রেপ্তার সম্পূর্ণ বেআইনি।”
সুলতানা কামালকে হত্যার হুমকি দাতাদের গ্রেপ্তার দাবি করে খুশি কবির বলেন, “সারা বাংলাদেশকে এখন সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার কৌশল চলছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে পরিচিত করিয়ে তোলার পাঁয়তারা চলছে। সরকার এখন সেই মৌলবাদীদের মদদ দিচ্ছে।”
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় ছাত্র-জনতাকে যুথবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এ অবস্থা আর মানব না, আমরা আর চুপ থাকব না।”
পাহাড়িদের ওপর নির্যাতন নিয়ে আদিবাসী অধিকারকর্মী উদাদ এ চাক বলেন, “শিশুদের ভয় দেখাতে চাইলে আমরা সেই হায়েনাদের গল্প শোনাই। এখন শিশুরা দেখল, সেই হায়েনাদের মতোই সেটেলাররা তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের উচ্ছেদ করল। বাস্তবতা আজ এমনই। তবে কী, পাহাড়ে তো এর চেয়েও বড় বড় ঘটনা ঘটেছে, বড় গণহত্যা হয়েছে। সেসব লেখার মতো সেদিন পাহাড়ে কেউ ছিল না। আজ আছে। পাহাড়ের মানুষ আজ কলম ধরতে জানে।”
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন প্রিন্স, উদীচী সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন বক্তব্য দেন।