বর্তমানে নির্বাচনের কাজের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ইসি সচিবালয় পালন করলেও দুটি কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে আলাদা বিভাগ করার প্রস্তাব এসেছে।
Published : 02 May 2017, 09:31 AM
সদ্য সাবেক নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ চাকরি জীবনে প্রশাসনিক দায়িত্ব, আন্তর্জাতিক নির্বাচন সংস্থা ও নির্বাচন কমিশনে ৫ বছর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতায় এই প্রস্তাব দিয়েছেন।
২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজ শুরুর পর থেকে এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ কোটির ১৭ লাখের মতো ভোটার রয়েছে, আগামীতে কমবয়সীদের তথ্যও নিবন্ধন করতে হবে, স্মার্টকার্ডও বিতরণও চলছে।
এসব কাজ করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মূল কাজে বিঘ্ন ঘটছে বলে মনে করেন আবু হাফিজ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইসি সচিবালয়ের অর্গানোগ্রামে পরিবর্তন আনতে হবে। ইসি সচিবালয়ের একার পক্ষে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র সেবার কাজ করা দুরূহ হয়ে পড়বে।”
জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজটি আলাদা হলেও এর সঠিকতা যাচাই করতে তা ইসির কাছেই রাখার পক্ষপাতি সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার।
“নির্বাচন কমিশন সারা বছরই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কাজের সুবিধার্থে ইসি সচিবালয়ে দুটি বিভাগ করা যেতে পারে। এরমধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা বিভাগে একজন জ্যেষ্ঠ সচিব ও এনআইডি বিভাগে এক সচিব থাকতে পারে। দুজনের আলাদা আলাদা কাজ থাকবে; তাতে ইসি সচিবালয়ের সার্বিক কার্যক্রম সুচারূ হবে।”
কাজের সুবিধায় গত কয়েক বছরে দুটি মন্ত্রণালয়ে আলাদা বিভাগ হয়েছ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘জননিরাপত্তা’ বিভাগ ও ‘সুরক্ষা সেবা বিভাগ’ নামে দুটি বিভাগ হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে ভাগ করা হয়েছে।
বর্তমান কে এম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির সময়ে না হলেও ভবিষ্যতে কাজের সুবিধায় ইসি সচিবালয় বিভাজন করতেই হবে বলে মনে করেন তিনি।
‘আইন-বিধিগুলো একীভূত প্রয়োজন’
বর্তমানে স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য আলাদা আইন, নির্বাচন বিধি ও আচরণবিধি রয়েছে।
মেয়াদের শেষ সময়ে এসে গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় অ্যাসোসিয়েশন অব ওয়ার্ল্ড ইলেকশন বডি (এডব্লিউইবি)-এর সেমিনারে যোগ দিয়ে নতুন অভিজ্ঞতার কথা জানান আবু হাফিজ।
তিনি বলেন, “সেখানে বিশ্বের অন্যদের সঙ্গে আলোচনার পর আমারও মনে হয়েছে, আমাদের স্থানীয় সরকারে একেক স্তরের একেক বিধান থাকায় মাঠ কর্মকর্তাদের আইন-বিধি নখদর্পণে রাখা ও তা প্রয়োগে জটিল হয়।
“সব আইন-বিধিকে অভিন্ন বা একীভূত করে একই আইন-বিধিতে রাখতে পারলে কমিশনের কর্মকর্তাদের জন্য ভালো হবে বলে মনে করি।”
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় সরকারের এ অভিন্ন আইন-বিধির বিষয়ে তাগিদ দেন তিনি।
আন্তর্জাতিক এ সেমিনার থেকে এসে একীভূত আইন-বিধি রূপান্তরের কাজটি হাতে নেওয়ার বিষয়টি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশনে আলোচনা হয়েছে বলে জানান ওই কমিশনের সদস্য আবু হাফিজ।
“কিন্তু এ ধরনের বড় উদ্যোগের জন্য অনেক সময়ের দরকার পড়ে। মাত্র এক বছর সময়ের মধ্যে আমরা তা শেষ করতে পারতাম না। আগামীতে কোনো না কোনো কমিশন তা নিয়ে কাজ করতে পারে।”
২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালনকারী বিসিএসের ’৭৩ ব্যাচের কর্মকর্তা আবু হাফিজের জন্ম ১৯৪৯ সালের ৩০ জুন কুড়িগ্রামে।
রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ’৭০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি।
২০০৭ সালে সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক থাকাকালে অবসরে যান হাফিজ। তিনি ১৯৯৫-৯৬ সালে নির্বাচন কমিশনের ভোটার আইডি প্রকল্পর উপ পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।