জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের মধ্যে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করতে পারেননি বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
Published : 20 Dec 2016, 04:16 PM
আট দিন পর দেশজুড়ে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে প্রার্থীদের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরতে মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটি।
লিখিত বক্তব্যে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, জেলা পরিষদের ভোটার জনপ্রতিনিধিরা বেশিরভাগ ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় জয়ের সম্ভাবনা কম ভেবে অন্য দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহ দেখা যায়নি।
“সুতরাং এই নির্বাচনকে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বলার কোনো সুযোগ নেই। ইতোমধ্যেই ২২ জেলার চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে।”
আইন অনুযায়ী প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এ নির্বাচনে ভোট দেবেন।
সব মিলিয়ে ৬৩ হাজার ১৪৩ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৪৮ হাজার ৩৪৩ জন পুরুষ; নারী ১৪ হাজার ৮০০ জন।
তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলায় চেয়ারম্যান পদে এই নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি ও সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।এর মধ্যে ২২ জেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের বাদ দিয়ে বাকি ৩৯ জেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১২৪ জন প্রার্থী।
সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন গণতন্ত্রের একটা বড় ভিত্তি হলেও সাম্প্রতিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সেভাবে হয়নি।
“সিটি করপোরেশন নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন কীভাবে হয়েছে তা সবাই দেখেছেন। একেবারে ডাইরেক্ট ব্যালট পেপারে সিল মারার ছবিও আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি।”
২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে কয়েকজন সংসদ সদস্য এর মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করেন সুজন সভাপতি।
“পত্রিকায় তাঁদের ছবিও এসেছে, কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
“সংসদ সদস্যরা প্রতিটি স্থানীয় সরকারের উপদেষ্টা। এর মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে।এটি গণতন্ত্র বিকাশে প্রধান অন্তরায়। এর ফলে জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা থাকে না।”
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ১৪৬ জন ছাড়াও সাধারণ সদস্য পদে ২ হাজার ৯৯৮ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৮২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। সংরক্ষিত আসনগুলো ছাড়াও ৪ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও ৯ জেলায় সাধারণ সদস্য পদে ১২ জন নারী প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
সুজনের তথ্যমতে, চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী রয়েছেন ৬৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রার্থী, যার মধ্যে স্নাতক ৫২ দশমিক ০৫ শতাংশ ও স্নাতকোত্তর ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রার্থী।
চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে এসএসসি পাস করেছেন ৪ দশমিক ৭৯ ভাগ প্রার্থী, আর হাই স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেননি ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ প্রার্থী।
প্রার্থীদের মধ্যে ৫০ জনের আয়কর বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। করদাতা ৫০ জনের মধ্যে ২১ জন ১০ হাজার টাকার কম এবং ১১ জন লাখ টাকার বেশি কর দেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৪৬ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে তিন জনের কোনো তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। ৭৩ জন সাধারণ সদস্য প্রার্থী ও ১৪ জন সংরক্ষিত আসনের সদস্য প্রার্থীর হলফনামাও নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি।
সুজনের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১ দশমিক ২৬ শতাংশের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩০২ ধারায় মামলা রয়েছে। ২ শতাংশের বিরুদ্ধে আগেই মামলা ছিল। প্রায় ২৫ শতাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো না কোনো সময় মামলা ছিল বা আছে।
৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ প্রার্থী ঋণগ্রহীতা, যাদের ৩৫ দশমিক ৭১ ভাগ প্রার্থী কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন।
প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ৫৬ শতাংশ ব্যবসায়ী, ৯ শতাংশ কৃষক ও আইন পেশায় জড়িত আছেন প্রায় ১৫ শতাংশ প্রার্থী। ৩০ শতাংশের সম্পদ ৫ লাখ টাকার নিচে আর কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক ৪ শতাংশের বেশি প্রার্থী।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ভবিষ্যতে জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে সুজনের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
এগুলো হলো- নির্বাচকমণ্ডলীর পরিবর্তে সরাসরি জনগণের ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা; সংসদ সদস্যদের জেলা পরিষদের উপদেষ্টার বিধান পরিবর্তন করা; চেয়ারম্যানসহ জেলা পরিষদের সদস্যদের আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান বাতিল করা।