লুই আই কানের করা জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশাটি এসেছে বাংলাদেশে, যা পেলেই জিয়াউর রহমানের কবরসহ ওই এলাকার অন্য সব স্থাপনা সরানোর ঘোষণা রয়েছে সরকারের।
Published : 01 Dec 2016, 06:03 PM
সংসদের নকশা আসার পর কবর সরাতে পদক্ষেপ: মন্ত্রী
জিয়ার কবর সরানোর প্রক্রিয়া চলছে: মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনির্ভাসিটির মহাফেজখানা (আর্কাইভ) থেকে পাঠানো নকশাগুলো বৃহস্পতিবার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন সংসদ সবিচালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ ওয়াই এম গোলাম কিবরিয়া।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নকশাগুলো সন্ধ্যায় পেয়েছি। এখন মাননীয় স্পিকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।”
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪১টি বাক্সে করে নকশা এসেছে বলে জানান তিনি।
লুই কানের নকশা ভেঙে সংসদ ভবন এলাকায় বেশ কয়েকটি স্থাপনা বিভিন্ন সময়ে নির্মিত হয়। মূল নকশা পাওয়ার পর সেগুলো সরানো হবে বলে জানিয়েছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
অন্যদিকে বিএনপি তার দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়ার কবর সরানোর যে কোনো চেষ্টার বিষয়ে সরকারকে হুঁশিয়ার করে আসছে।
২০১৪ সালে সংসদ ভবনের স্থপতি লুই কানের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংসদ ভবনের মূল নকশা আনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর পর লুই কানের প্রতিষ্ঠান ডেভিড অ্যান্ড উইজডম-এর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে স্থাপত্য অধিদপ্তর। নকশাগুলো পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচারাল আর্কাইভে থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে সেখানেও যোগাযোগ করা হয়।
গত জানুয়ারিতে সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মোশাররফ বলেছিলেন, সংসদ ভবনের অঙ্কিত বর্ণনামূলক তালিকা (ড্রয়িং ইনভেনটরি লিস্ট) যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে এসেছে।
এরপর গত অক্টোবর মাসে তিনি সংসদে বলেছিলেন, নকশা পাওয়ার পর সংসদ এলাকা থেকে কবর সরিয়ে ফেলা হবে।
সংসদ এলাকায় সাতটি কবর রয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ও আতাউর রহমান খান, সাবেক মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়া, মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার তমিজউদ্দীন খানের কবর রয়েছে সেখানে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী শাহ আজিজ ও খান এ সবুরের কবর সংসদ এলাকা সেখান থেকে সরানোর দাবি বহু দিনের।
সংসদ এলাকার পাশে চন্দ্রিমা উদ্যানে রয়েছে জিয়াউর রহমানের কবর। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় জিয়া নিহত হওয়ার পর প্রথমে তাকে চট্টগ্রামে সমাহিত করা হয়েছিল, পরে সেখান থেকে কবর তুলে আনা হয় ঢাকায়।
এছাড়া লুই কানের নকশা ভেঙে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাড়িও নির্মাণ করা হয়েছিল বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তখন ভবন দুটি তৈরি হয়। এ সংক্রান্ত একটি মামলা এখনও বিচারাধীন।
কয়েক বছর আগে সংসদ ভবনের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনি নির্মাণ নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থপতি লুই কানের করা মূল নকশা আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
তখন গণপূর্ত অধিদপ্তর, স্থাপত্য অধিদপ্তর এবং সংসদের নিরাপত্তা শাখার সঙ্গে এক বৈঠকে শেখ হাসিনা নকশার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চান। তখনই মূল নকশার ‘কিছু অংশ’ বাংলাদেশের কাছে না থাকার বিষয়টি উঠে আসে।
এই নকশা আনতে পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির সঙ্গে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র সফরও করে সংসদ সচিবালয়ের একটি প্রতিনিধি দল।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, সংসদ ভবন ও এর আশ-পাশের এলাকার ছোট-বড় প্রায় আট হাজার নকশা ও ডকুমেন্ট রয়েছে পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটিতে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রয়োজন ৮৫৩টি নকশা। স্থাপত্য অধিদপ্তরের পরামর্শে এসব নকশা চূড়ান্ত করা হয়। এর আগে প্রতিটি নকশার যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশকে গুনতে হয়েছে সাড়ে তিন হাজার ডলার।
সংসদ সচিবালয়ের নিজস্ব তহবিলে এ পরিমাণ টাকা না থাকায় বিশেষ বরাদ্দ নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ বরাদ্দ পায় সংসদ সচিবালয়।
১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সে সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এই ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই কান এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে লুই কান কয়েকবার বাংলাদেশে কাজের জন্য আসেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মূল নকশা সংশ্লিষ্ট কিছু ‘প্ল্যান’ তিনি হস্তান্তর করেত পারেননি। পরে এ নিয়ে কোনো সরকার আগ্রহ দেখায়নি।
২০১৩ সালের ২ জুন সংসদ কমিশনের বৈঠকে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ ভবন সংরক্ষণে মূল নকশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এমন কিছু না করার বিষয়ে মত দেন। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলারও পরামর্শ দেন তিনি।