প্রথমবারের মত প্রবর্তিত ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
Published : 20 Sep 2016, 11:31 AM
সোমবার নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কাছে ইউএন প্লাজা হোটেল মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে জয়ের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন হলিউডের অভিনেতা রবার্ট ডেভি।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “জয়ের কাছ থেকেই আমি কম্পিউটার চালানো শিখেছি। এজন্য সে আমার শিক্ষক।
“শুধু তাই নয়, তথ্য-প্রযুক্তির সামগ্রিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দরিদ্র মেহনতি মানুষ থেকে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তার মন্ত্র এসেছে জয়ের কাছে থেকে।… এমন সন্তানের মা হতে পেরে আমি গৌরবান্বিতবোধ করছি।”
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) গৃহীত হওয়ার প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব গভর্নেন্স অ্যান্ড কম্পিটিটিভনেস, প্ল্যান ট্রিফিনিও, গ্লোবাল ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট স্টেটের নিউ হেভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস সম্মিলিতভাবে এ পুরস্কারের প্রবর্তন করেছে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ২০০৭ সালে ‘ইয়াং গ্লোবাল লিডার’ নির্বাচন করেছিল ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওই সম্মান পান তিনি।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়া। সরকারের এই উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন জয়।
তারপর থেকে বাংলাদেশে ডিজিটাল মাধ্যমে সরকারি সেবা পাওয়ার হার দ্রুত বেড়েছে। ২০০৮ সালে ওই হার শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ ছিল, আট বছরে তা বেড়ে ৩৫ শতাংশ হয়েছে। আইসিটি খাতের রপ্তানি আয় ২০০৯ সালের ২৬ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০১৫ সালে ৩০০ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।
সরকার বাংলাদেশে পাঁচ হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। আট হাজার পোস্ট অফিসেও ডিজিটাল সেন্টার বসানোর কাজ চলছে।
গতবছর বাংলাদেশে একটি সফটওয়্যার টেকনোটলজি পার্ক চালু হয়েছে, যেখানে ইতোমধ্যে ১৬টি কোম্পানি কাজ শুরু করেছে; আরও ৩৪ কোম্পানি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলতি বছর জুলাই মাসে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশের প্রথম আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার, যেখানে এক লাখ লোকের কাজের সুযোগ হবে বলে সরকার আশা করছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অফ গভর্নমেন্ট থেকে লোক প্রশাসনে স্নাতকোত্তর করেন তিনি।
জয়ের মা শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছিল।
“তেমনি সময়ে জয়ের জন্ম। সে সময় আত্মীয়-স্বজন কাউকে পাশে পাইনি।”
আর জয় যখন হার্ভার্ডে, তখনও বাংলাদেশে জরুরি অবস্থার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে নিজের বন্দি থাকার কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ পুরস্কারের প্রবর্তকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভূমিকার স্বীকৃতি প্রকারান্তরে বাংলাদেশের মানুষের অদম্য কর্মস্পৃহার প্রতিই সম্মান বলে মনে করছি।”
পুরস্কার পেয়ে সম্মানিত বোধ করছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, “এ পুরস্কারের কৃতিত্ব একইসাথে বাংলাদেশ সরকারের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও। তারা সকলে একযোগে কাজ করছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে।”
স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।