দেওয়ানি মামলা বিচারের ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের বিচারকদের আর্থিক এখতিয়ার বাড়িয়ে আনা সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট সংশোধনের গেজেটের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাই কোর্ট।
Published : 15 Jun 2016, 09:49 PM
ওই সংশোধনীতে অধস্তন আদালতে দেওয়ানি মামলায় বিচারকদের এখতিয়ার বাড়িয়ে জেলা জজদের পাঁচ লাখ টাকার পরিবর্তে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যমানের মামলা নিষ্পত্তির এখতিয়ার দেওয়া হয়।
বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার রুলসহ ওই আদেশ দেয়।
রুলে সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট সংশোধনী আইন-২০১৬ কেন অসাংবিধানিক ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
আইন সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সরকার সম্প্রতি ১৮৮৭ সালের সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট সংশোধন করে। গত ১২ মে তার গেজেট প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, একজন সহকারী জজ দুই লাখের পরিবর্তে ১৫ লাখ, সিনিয়র সহকারী জজ ৪ লাখের পরিবর্তে ২৫ লাখ এবং জেলা জজ ৫ লাখের পরিবর্তে ৫ কোটি টাকা মূল্যমানের (সম্পত্তি বা অর্থে যে অংকের টাকা নিয়ে বিরোধ) মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবেন।
ওই গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৫ জুন একটি দেওয়ানি মামলার বাদী আলী আজম ফরাজী হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করেন, যার ওপর বুধবার শুনানি হয়।
আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ কে রাশেদুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
ব্যারিস্টার রাশেদুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই সিন্ধান্ত নেয় নির্বাহী বিভাগ। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ ব্যতিরেকেই সংশোধনী আনা হয় বলে জানতে পেরেছি। এটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপের সামিল ও মাসদার হোসেন মামলার চেতনার পরিপন্থি।
“আইনটির ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেওয়া হয়েছে। এটি আইনসম্মত নয়। এসব যুক্তিতে রিটটি করা হলে আদালত গেজেটের কার্যকারিতা স্থগিতের পাশপাশি রুল দিয়েছে।”
সংশোধিত আইনের ৪ (৩) ধারায় ৫ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকার যেসব দেওয়ানি মামলায় হাই কোর্টে আপিল হয়েছে, সেগুলো গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়।
এই ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ব্যারিস্টার সাইদুল আলম খানসহ চার আইনজীবী মে মাসের শেষ সপ্তাহে একটি রিট আবেদন করেন, যার ওপর শুনানি নিয়ে ৩০ মে হাই কোর্টের অপর একটি বেঞ্চ রুল ও অন্তবর্তীকালীন নির্দেশ দেয়।
সংশোধিত ‘দেওয়ানি আদালত আইন’ অনুযায়ী উচ্চ আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানি আপিল, রিভিশনসহ অন্যান্য মামলা তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা আদালতে স্থানান্তর না করতে পদক্ষেপ নিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।