‘স্বামীর শেয়ারের টাকা’ না পেয়ে কৃষ্ণা কাবেরী হত্যা

আদাবরের কলেজ শিক্ষক কৃষ্ণা কাবেরী হত্যা মামলায় গুলশানের একটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপক এম জহিরুল ইসলাম পলাশকে একমাত্র আসামি করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2016, 11:48 AM
Updated : 10 June 2016, 11:49 AM

তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, স্বামী সীতাংশু বিশ্বাসের শেয়ার ব্যবসার টাকা হাতিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে ক্ষুব্ধ জহিরুল কৃষ্ণাকে হত্যা করেন বলে অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন তিনি।

আলোচিত ওই হত্যার প্রায় ১৪ মাস পর গত ৩১ মে তিনি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলেও সে তথ্য জানা গেছে বৃহস্পতিবার।

জহিরুল কারাগারে রয়েছেন। সর্বশেষ গত ২ মার্চ তার জামিন আবেদন নাকচ করেন মহানগর দায়রা জজ কামরুল ইসলাম মোল্লা।

অভিযোগপত্রে মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার মারুফ হায়দারী সোহাগ নামে একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মচারীকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে; যার নাম ছিল না এজাহারেও।

সংশ্লিষ্ট আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই কুতুবুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহানগর হাকিম মেহের নিগার সূচনা অভিযোগপত্রটি ‘দেখিলাম’ বলে স্বাক্ষর করলেও এখনও নিয়ম মেনে তা গ্রহণ করা হয়নি। অভিযোগপত্রের বিষয়ে বাদীকে জানানো হবে।

“বাদী যদি অভিযোগপত্রের বিষয়ে কোনো আপত্তি না দেন অথবা নারাজি আবেদন না করেন তবে অভিযোগপত্রটি গ্রহণ, আমলে নেওয়ার জন্য ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে নথি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

২০১৫ সালের ৩০ মার্চ মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ভাড়া বাসায় হামলায় মারাত্মক আহত ও দগ্ধ হয়ে পরদিন হাসপাতালে মারা যান আদাবরের মিশন ইন্টারন্যাশনাল কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক কৃষ্ণা কাবেরী মণ্ডল (৩৫)।

তার স্বামী সীতাংশু শেখর বিশ্বাস বিআরটিএর প্রকৌশল বিভাগের উপ-পরিচালক ছিলেন।

কৃষ্ণা কাবেরী (ফাইল ছবি)

ঘটনার পর তার বড় ভাই সুধাংশু শেখর বিশ্বাস পূর্বপরিচিত গুলশানের ব্রোকারেজ হাউজ হাজী আহমেদ ব্রাদার্স সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপক ব্যবসায়ী জহিরুলকে একমাত্র আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।

পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। মামলায় এর আগে ১৬টি তারিখ পার হয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য।

মামলার নথিপত্রে দেখা গেছে, সীতাংশুর শেয়ার বাজারে আট লাখ টাকা ছিল। সেই সূত্রেই জহিরুলের সঙ্গে তার পরিচয়। হত্যার কারণ নিয়ে জহিরুল স্বপ্রণোদিত হয়ে হাকিমের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। সেখানে শেয়ারের টাকা পয়সার লোভে এই আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন অনুসারে, সেদিন সন্ধ্যার পর সীতাংশু কুমার বিশ্বাসের ইকবাল রোডের বাসায় তার জন্মদিনের কেক, মিষ্টি ও মোমবাতি নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে যান জহিরুল। কেক কাটার পর কৌশলে সিতাংশুকে চেতনানাশক মেশানো ফলের জুস পান করিয়ে অচেতন করে হাতুড়িপেটার চেষ্টা করেন জহিরুল। এসময় কৃষ্ণা বাধা দিতে গেলে জহিরুল দুই জনকেই এলোপাতাড়ি পেটান। পরে মোমবাতি থেকে কৃষ্ণার শাড়ি ও ঘরে আগুন ছড়িয়ে যায়। রাতে দগ্ধ ও আহত কৃষ্ণাকে হাসপাতালে ভর্তির করার পরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সেসময় হাতুড়িপেটায় আহত হন তাদের দুই মেয়ে শোভনা ও অদিতি।

তদন্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গুলশানের একটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপক জহিরুল শেয়ার ব্যবসায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

“সিতাংশুর বিও হিসাব ওই ব্রোকারেজ হাউজে ছিল। সিতাংশুর শেয়ার আত্মসাৎ করতেই ওই হামলা বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছি।”

মামলার অন্যতম সাক্ষী নিহতের মামা পিন্টু বিশ্বাস শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি এখনও অভিযোগপত্র জমার বিষয়ে জানেন না। তবে জহিরুলকে আসামি করা হলে তারা আদালতে কোন নারাজি আবেদন করবেন না।