সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী ও পুলিশের পর এবার সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবিতে নারী সৈনিকের যাত্রা শুরু হল।
Published : 05 Jun 2016, 12:15 PM
বিজিবির ৮৮তম ব্যাচে ১০০ জন নারী সৈনিক প্রশিক্ষণ শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ৯৭ জন রোববার সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নেন।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুল মাঠে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
বিজিবিতে যোগ দেওয়া নারীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “আপনারাই বিজিবিতে প্রথম মহিলা সৈনিক হিসেবে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছেন। মনে রাখবেন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মহিয়সী নারীদের অংশগ্রহণ, অবদান ও আত্মত্যাগ অবিস্মরণীয়।”
নারীরা এখন বিভিন্ন অঙ্গনে যথাযথ যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলেছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ ও দিক-নির্দেশনায় কর্মক্ষেত্রে নানা পেশায় পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিজিবিতে প্রথম মহিলা সৈনিক ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।”
বিজিবির এই ব্যাচে ৯৭ জন নারীসহ মোট ১১৪৪ জন নবীন সৈনিক প্রশিক্ষণ নেন। ছয় মাসের এই প্রশিক্ষণে সব বিষয়ে প্রথম হয়েছেন সিপাহী (জিডি) মো. ফজলুল করিম মিজান, আর নারী সৈনিকদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন জাহানারা আক্তার।
বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই প্রশিক্ষণে যোগ দেওয়া জাহানারা প্রশিক্ষণে নারী-পুরুষ সবাইকে পিছনে ফেলে হয়েছেন ১৫টি বিভাগ মিলিয়ে ‘সবার সেরা’।
“বাবা সেনা বাহিনীর সার্জেন্টে ছিলেন, তার কাছ থেকেই নিয়ম শৃঙ্খলা শিখেছি। এখানে আসতেও তিনিই সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত করেছেন,” বলেন এ নারী।
বিজিবির সদস্য হিসেবে নিজের কাজের অগ্রাধিকারও ঠিক করেছেন জাহানারা- “এ পেশায় আসার মূল উদ্দেশ্য হল, সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনো মাদক বাংলাদেশ প্রবেশ করতে না পারে। কোনো নারী সীমান্ত দিয়ে মাদক নিয়ে ঢুকতে গেলেই যেন আমাদের হাতে ধরা পড়ে।”
জাহানারার মতো না হলেও পিছিয়ে ছিলেন না যশোরের রুমা আক্তার। শার্শার কানাইনগরের কৃষক তোফাজ্জেল হোসেনের এ মেয়ে প্রশিক্ষণের কুচকাওয়াজ বিভাগে প্রথম হয়েছেন।
২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে সৈনিক হতে আবেদন করেন রুমা। ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে রোববারের সমাপনী কুচকাওয়াজ দিয়ে যুক্ত হলেন ‘স্বপ্নের বাহিনীতে’।
মেয়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণে খুশি মা আনোয়ারা বেগমও- “রুমা খুব মেধাবী ছিল। ও যে বিজিবিতে যোগ দিতে পেরেছে, এ জন্য আমরা অনেক খুশি।”
সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্য হিসেবে ‘মাদক নির্মূল’কে প্রাধান্য দেবেন বলে জানিয়েছেন রুমা।
“মাদক একটি সমাজের ছেলে-মেয়েদের ধ্বংস করে। এজন্য মাদক রোধই হবে আমার প্রথম কাজ।”
মাদককে সমস্যা মনে করছেন পিরোজপুরের শ্রাবন্তী সমাদ্দারও। প্রশিক্ষণের ‘প্রদর্শনী’ বিভাগে প্রথম হওয়া এ নারী বরিশাল মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এসময় তার সঙ্গে বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের কমাডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আনোয়ার শফিক, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, ১০ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সাতকানিয়ার সাংসদ আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী এবং চন্দনাইশের সাংসদ মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।
কুচকাওয়াজ শেষে বক্তব্যে বাহিনীর চার মূলনীতি- মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা স্মরণ করিয়ে আগামীতে এগুলোর ওপর বিশ্বস্ত থেকে এবং তা ‘হৃদয়ে ধারণ করে’ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।