জি-সেভেন আউটরিচ মিটিংয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব ‘স্পষ্ট হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।
Published : 27 May 2016, 07:35 PM
জাপানের নাগোয়ায় বিশ্ব অর্থনীতির সাত পরাশক্তির জোট জি-সেভেনের সম্মেলনের পরদিন শুক্রবার এই আউটরিচ মিটিং হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দ, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং এবারের সম্মেলনের আয়োজক জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সকালে নাগোয়ার কাশিকো দ্বীপে শিমা কানকো হোটেলে এই বৈঠকের বিষয়ে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান মুখ্য সচিব আজাদ ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।
“কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতিতে আমাদের যে উল্লেখযোগ্য অবদান, সেজন্য বাংলাদেশকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।”
বাংলাদেশ ছাড়াও লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাপুয়া নিউ গিনি ও শাদের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা আউটরিচ বৈঠকে এশিয়া ও আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আমন্ত্রণে এসেছেন আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপারসন এবং বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ এর প্রধানরাও।
বৈঠকের দুটি সেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মূলত চারটি বিষয় নারীর ক্ষমতায়ন, মানসম্মত অবকাঠামো, জলবায়ু ও স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কথা বলেছেন বলে পররাষ্ট্র সচিব জানান।
এই চার ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে দাবি করে মুখ্য সচিব বলেন, “বড় বড় অবকাঠামো আমরা যেভাবে করছি, নারীর ক্ষমতায়নে আমরা রোল মডেল, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় নেওয়া পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রী অনেকগুলো পুরস্কার পেয়েছেন এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নারী ও শিশু মৃত্যু রোধে নেওয়া পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে।
“এই বৈঠকে বাংলাদেশের গুরুত্ব বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে স্পষ্ট হয়েছে।”
বৈঠকের শুরুতেই শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছেন।
নারীর ক্ষমতায়ন, গুণগত অবকাঠামো, জলবায়ু ও স্বাস্থ্য সেবায় বাংলাদেশের অর্জন এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেছেন।
“প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, উন্নত দেশগুলো যদি কারিগরি সহায়তা, অর্থায়ন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, তাহলে বিশ্ব আজকে যে সব সমস্যায় পড়ছে, সেটা পড়বে না।”
বিভিন্ন বড় প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “অবকাঠামোর ক্ষেত্রে আমরা অনেক বড় দিকে যাচ্ছি। যোগাযোগের পাশাপাশি তৈরি পোশাক শিল্প এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ধারণার কথা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী।”
পরিবেশবান্ধব জ্বালানির গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি।
স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে বলতে গিয়ে আউটরিচে শেখ হাসিনা ৩০ হাজার মাতৃসদনের মাধ্যমে নারীদের সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি অবদান রাখে-স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
নারী ক্ষমতায়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং রাজনীতিতে নারী- এই জায়গায় বাংলাদেশ একটা অবস্থান তৈরি করেছে।
তিনি নারী ক্ষমতায়নের একটা নতুন ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মন্তব্য করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, নারীর অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে একটি বাড়ি-একটি খামারের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। সমাজে নারীর মর্যাদা ও অধিকারের কথাও বলেছেন।
বিশ্বব্যাপী নারীর মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা নিয়ে বৈঠকে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি।
জি-সেভেনের সম্মেলনের পাশাপাশি আঞ্চলিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনার জন্য জোটের বাইরে থেকে বিভিন্ন দেশকে আলাদা বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। একেই বলা হচ্ছে জি-সেভেন আউটরিচ মিটিং।
এই মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।
এর আগে ২০০১ সালে ইতালিতে জি-এইটের বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেখ হাসিনা অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দারিদ্র্য দূরীকরণ নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি।
শনিবার দুপুরে নাগোয়া থেকে টোকিও যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসের নতুন চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধন করবেন।