নির্বাচন শুরুর আগেই যে সব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল, তিন মাসে চার ধাপের ইউপি ভোটে অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানির পর সেসব পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তাগাদা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 10 May 2016, 02:20 PM
সুষ্ঠু ভোটের জন্য পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে ইসি সোমবার একটি চিঠি পাঠিয়েছে, যাতে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজদের গ্রেপ্তার, অস্ত্র উদ্ধার, নির্বাচনী এলাকায় টহল বাড়ানো ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যতই সমালোচনা হোক আমরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হচ্ছে।”
ইউপি নির্বাচন ঘিরে গত তিন মাসে গোলযোগ, সহিংসতায় প্রায় ৮০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া ভোটে অনিয়ম নিয়েও ব্যাপক সমালোচনার মুখে রয়েছে নির্বাচন কমিশন।
দলভিত্তিক স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অনিয়ম-সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশন এরইমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ইতোমধ্যে দুই দফা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একজন নির্বাচন কমিশনার আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদরদপ্তরে গিয়ে বাহিনী প্রধানদের সঙ্গেও বসেছেন। তৃতীয় ধাপের ভোটের আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ‘অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা দেখতে চান না’ বলে ইসির কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন।
এরপরেও দিন দিন ভোটে সহিংসতা বাড়ার কথা তুলে ধরে নির্বাচন কমিশন বলছে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া, সংশ্লিষ্টদের পক্ষপাতিত্ব ও নিষ্ক্রিয়তা এবং তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করায় এটা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো নিয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আরও দুটি ধাপের ইউপি ভোট বাকি রয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতে আবারও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
এবার ছয় ধাপে ৪ হাজার ২৭৫টি ইউপিতে ভোট হচ্ছে। ইতোমধ্যে চার ধাপে (২২ মার্চ, ৩১ মার্চ, ২৩ এপ্রিল ও ৭ মে) আড়াই হাজারেরও বেশি ইউপির ভোট শেষ হয়েছে। আগামী ২৮ মে পঞ্চম ধাপে ৭৩৩ টি ইউপি এবং ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপে ৭২৭ টি ইউপিতে ভোট হবে।
প্রথমবারের মতো চেয়াম্যান পদে দলীয় প্রতীকের এ ভোটে দেড় ডজন দল অংশ নিলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। সহিংসতা অনিয়ম নিয়ে দুই দল থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আসছে। এছাড়া দলের মনোনয়ন বঞ্চিতরাই অধিকাংশ জায়গায় গোলযোগ ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খানের স্বাক্ষরে ‘ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা রোধ ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ’ শিরোনামে স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে চিঠিটি পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দিন দিন নির্বাচনী সহিংসতা বাড়ছে। কোথাও কোথাও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
“বেশ কিছু লোক হতাহত হয়েছেন, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।”
এছাড়া মনোনয়নপত্র নেওয়া ও জমায় বাধা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাপ প্রয়োগ করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার, কোথাও কোথাও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীসহ মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের পক্ষপাতিত্ব ও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উল্লেখ করেছে নির্বাচন কমিশন।
চিঠিতে বলা হয়, “তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে জোরালো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় দিন দিন সহিংসতা বাড়ছে বলে বিভিন্ন পর্যায় থেকে অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে।”
পরিস্থিতির উত্তরণে করণীয় বিষয়ে কমিশন বলেছে, “তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজদের গ্রেপ্তার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, যে কোনো সহিংসতা কঠোর হস্তে দমন, সহিংসতাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার, নির্বাচনী এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানো এবং দৃশ্যমান করে প্রার্থী, ভোটার তথা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
“ভোটারদের নিরাপত্তা বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচনী সহিংসতা রোধ, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকির মাধ্যমে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সব আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল,।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিজিবি, র্যাব, আনসার-ভিডিপি ও কোস্টগার্ড মহাপরিচালককেও চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
এ পর্যন্ত চার পর্বের ভোটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা এক হাজার ৮৩৬টি ইউপিতে এবং ধানের শীষের বিএনপি প্রার্থীরা ২৪৩ ইউপিতে জয়ী হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন ৪০৯ জন; যাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।