বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা সরকারি কলেজের শিক্ষকরা সরকারের আশ্বাস পেয়ে তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।
Published : 27 Jan 2016, 04:09 PM
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আ ই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বুধবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং শিক্ষা সচিবের আশ্বাসের পর আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেছেন তারা।
“এই সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে মার্চ থেকে আবারও কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব আমরা।”
দুই সচিবই অধ্যাপকদের ‘আপগ্রেডেশনের’ বিষয়টি আগে সমাধান করে শিক্ষকদের অন্য দাবি পর্যায়ক্রমে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান আন্দোলন চালিয়ে আসা শিক্ষকদের এই নেতা।
গত ২২ জানুয়ারি সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে তিনদিনের কর্মবিরতি শুরু করেন ২৭০টি সরকারি কলেজ, তিনটি আলিয়া মাদ্রাসা, ১৪টি টিটি কলেজ ও ১৬টি কমার্শিয়াল কলেজের ১৫ হাজার শিক্ষক।
এছাড়া আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দাবি না মানলে ৬ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি ক্লাস বর্জনের কর্মসূচি দেন তারা।
এরপরও দাবি পূরণ না হলে ১৩ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালনের ঘোষণাও সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে বিসিএস শিক্ষা সমিতির নেতারা শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
সেখানে সচিবের আশ্বাস পেয়ে বিকালে সমিতির সাধারণ সভায় বসেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। সেখানেই এক মাসের জন্য কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয় বলে অধ্যাপক সেলিম উল্লাহ জানান।
অষ্টম বেতন কাঠামোয় সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বহাল ছাড়াও শিক্ষকদের পদ ‘আপগ্রেডেশন’ এবং ‘বৈষম্য’ নিরসনে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক পদ সৃষ্টির মাধ্যমে পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষকরা।
এছাড়া অধ্যাপকদের পদমর্যাদা ও বেতনক্রম অবনমনের প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি।
অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পঞ্চম থেকে সরাসরি তৃতীয় গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের পঞ্চম গ্রেডের সহযোগী অধ্যাপকরা পদোন্নতি পেয়ে চতুর্থ গ্রেডে অধ্যাপক হয়ে আসছিলেন। চতুর্থ গ্রেডের অর্ধেক অধ্যাপক সিলেকশন গ্রেড পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হতেন।
শিক্ষকদের অভিযোগ, নতুন বেতন কাঠামোয় সিলেকশন গ্রেড বাতিলের ফলে অধ্যাপকদের চতুর্থ গ্রেড থেকেই অবসরে যেতে হবে। মর্যাদা ছাড়াও বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।
এ যুক্তি দেখিয়ে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতো ১ জুলাই থেকেই পঞ্চম গ্রেডের সহযোগী অধ্যাপকদের পদোন্নতি দিয়ে অধ্যাপক হিসেবে তৃতীয় গ্রেডের বেতন দিতে সরকারি আদেশ জারির দাবি জানিয়ে আসছে বিসিএস শিক্ষা সমিতি।
নায়েম মহাপরিচালক, এনসিটিবি চেয়ারম্যান, সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা সদরের অনার্স ও মাস্টার্স কলেজের অধ্যক্ষের পদকেও গ্রেড-১ এ উন্নীতকরণ এবং মাউশি, নায়েম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক; অনার্স/মাস্টার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ, শিক্ষা বোর্ডের সচিব এবং এনসিটিবির সদস্যদের পদকে দ্বিতীয় গ্রেডে উন্নীতের দাবি রয়েছে সমিতির।
এছাড়া অনার্স ও মাস্টার্স রয়েছে এমন বিভাগে দ্বিতীয় গ্রেডের একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি, ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি এবং বিকল্প ব্যবস্থা চালু না হওয়া পর্যন্ত সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা।
বেতন কাঠামোর বৈষম্য দূর করার দাবিতে এর আগে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা লাগাতার কর্মবিরতিতে গিয়েছিলেন।
তাদের কর্মসূচিতে নয় দিন দেশের উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠগুলো অচল হয়ে থাকার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসে গত ২০ জানুয়ারি শিক্ষকরা ক্লাসে ফেরেন।