সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ১৪ জনই জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অনুসারী দাবি করে পুলিশ বলেছে, তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
Published : 21 Jan 2016, 03:49 PM
সিঙ্গাপুর সরকার ওই বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিস্তারিত অভিযোগ প্রকাশ করার পর বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার পুলিশের তদন্তে পাওয়া তথ্য তুলে ধরেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “তারা প্রায় সকলেই জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অনুসারী। তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়নি পুলিশ।”
অনুসারী হলেও এ ১৪ জন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
বুধবার সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২৭ বাংলাদেশিকে তারা গ্রেপ্তার করে যারা, সে দেশে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। তাদের মধ্যে ২৬ জনকে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
সিঙ্গাপুর সরকারের ভাষ্য, ওই বাংলাদেশিরা আল কায়েদা ও আইএস-এর মতো জঙ্গি সংগঠনের সশস্ত্র জিহাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সিঙ্গাপুরে বসে বাংলাদেশে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের পরিকল্পনায় ছিলেন। জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তারা আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন।
সিঙ্গাপুর সরকার ২৬ জনকে ফেরত পাঠানোর পর গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকার উত্তরার এক বাসা থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। পরে উত্তরা পূর্ব থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে ১৪ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের কারাগারে পাঠানোর জন্য আদালতে তোলা হলে ২৭ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো বিষয়টি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আসে। তবে ঠিক কী কারণে কবে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে তা স্পষ্ট হয় বুধবার সিঙ্গাপুর সরকারের বিবৃতি পাওয়ার পর।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয়ে সংবাদিকদের মনিরুল বলেন, কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর ১৪ জনকে কারাগারে রাখা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে বাকি ১২ জনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলেও পুলিশ তাদের ওপর নজর রাখছে।
ওই ২৬ বাংলাদেশি শ্রমিক হিসেবে সিঙ্গাপুর গিয়ে দুই থেকে আট বছর সেখানে ছিলেন বলে জানান মনিরুল।
“সিঙ্গাপুরের মোস্তফা সেন্টারের কাছে একটি মসজিদে নামাজ পড়তেন তারা। সেখানে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অন্য সদস্যদের বয়ানে অনুপ্রাণিত হয়ে তারাও আস্তে আস্তে অনুসারী হয়।”
এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, “সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে এদের প্রায় কেউই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবে জামায়াতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন কয়েকজন আছেন।"
এই বাংলাদেশিদের কাছ থেকে জিহাদি বই ছাড়াও এমন কিছু ভিডিও পাওয়ার কথা সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ বলছে, যেখানে জঙ্গি আস্তানায় শিশুদের অস্ত্র চালনা এবং খালি হাতে লড়াইয়ের প্রশিক্ষণ দিতে দেখা যায়। এছাড়া কীভাবে ধারালো অন্ত্র ব্যবহার করে নিঃশব্দে হত্যা করতে হয় তার নির্দেশনা দিয়ে হাতে আঁকা ছবিও তাদের কাছে পাওয়া গেছে।
অবশ্য বাংলাদেশের পুলিশ মনে করছে, সিঙ্গাপুরে তেমন কোনো জঙ্গি প্রশিক্ষণ এই বাংলাদেশিরা পাননি।
“এরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের (আনসারুল্লাহ) নেতা জসিমউদ্দীন রাহমানীর বয়ান শুনতেন, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ওয়াজ শুনতেন। তাবে তারা আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অনুসারী।”
মনিরুল বলেন, সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
বাংলাদেশে তাদের জিহাদের পরিকল্পনা নিয়ে যে তথ্য সিঙ্গাপুর দিয়েছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ১৪ জনকে কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেও তেমন কিছু পুলিশ জানতে পারেনি। তবে ওই বাংলাদেশিরা সিঙ্গাপুর থেকে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে টাকা পাঠাতেন।