ছয়দিন আগে পুলিশের গাড়িতে হওয়া আড়াই ঘণ্টার দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে নানা চেষ্টা চালিয়েও পারছেন না ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী। নতুন করে যোগ হয়েছে নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা।
Published : 15 Jan 2016, 08:12 PM
শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অনেকভাবে চেষ্টা করছি, কিন্তু সেই রাতের কথা ভুলতে পারছি না। সবকিছুর মাঝে সেই দুঃসহ স্মৃতিই বারবার তাড়া দিচ্ছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিউনিকেশন বিভাগের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীর অভিযোগ, মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ শিকদার গত শনিবার রাতে তাকে আটক করে থানায় না নিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা গাড়িতে রেখে টাকা আদায়ের চেষ্টা চালান।
এসময় তাকে মারধরও করা হয়। রাব্বীর ডান হাতের কনুই ও বাম পায়ে ক্ষত রয়েছে।
গাড়িতে থাকার সময়ে পথচারীদের অনেককে ভয় দেখিয়ে পুলিশ সদস্যদের অর্থ আদায়ের ঘটনা দেখেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপসাতালের মানসিক রোগ বিভাগের এক কেবিনে চিকিৎসাধীন রাব্বীর সঙ্গে কথা হয় শুক্রবার দুপুরে।
শনিবার রাতের কথা জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাই, সেই রাতের কথা ভুলতে চাই। আড়াই ঘণ্টার ওই ঘটনার সময় ঘটে যাওয়া অনেক কিছুর বর্ণনা দিতে পারব।
“আমাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে কীভাবে আমাকে গুলি করবে এবং তারপর কী গল্প সাজাবে- তা আমাকে শুনিয়ে এক পুলিশ আরেক পুলিশকে বলছিল।
“এরকম অনেক ভয়ানক গল্প তারা সাজাচ্ছিল, যা স্মরণ করতে পরছি না; আর করতেও চাই না।”
অবসর কাটাতেন পড়াশুনা আর লেখালেখি করে জানিয়ে রাব্বী বলেন, “সেই রাতের স্মৃতির কথা ভুলতে অনেক চেষ্টা করছি। কখনও কবিতা লেখার চেষ্টা করছি, কখনও বা গল্প। কিন্তু কিছুই লিখতে পারছি না। সেইসব দুঃসহ স্মৃতি বারবার ফিরে আসছে।”
তিনি বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত সাড়ে ১২টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুজন মধ্যবয়সী লোক তার কেবিনে এসেছিল। তাদের কথাবর্তা সন্দেহজনক। তারপর থেকে নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করছেন।
শুক্রবার সকালে রাব্বীকে হাসপাতালে দেখতে যান আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিচালক (তদন্ত ও তথ্য সংরক্ষণ ইউনিট) নুর খান লিটন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশ রাব্বীকে নির্যাতন করেছে। এতে প্রতীয়মান হয়, পুলিশ এখন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে।
“রাব্বী এখন নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগছে। তার নিরাপত্তা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।”
রাব্বীর বরাত দিয়ে আসক কর্মকর্তা নুর খান বলেন, “রাব্বী আড়াই ঘণ্টা পুলিশের গাড়িতে থেকে দুটি ঘটনা দেখেছেন। তিনি একজন নারীর ব্যাগে কনডম দিয়ে টাকা আদায় করার দৃশ্য দেখেছেন। দেখেছেন এক রিকশার যাত্রীকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে স্বজনদের ডেকে টাকা আদায় করার দৃশ্যও।
এ রকম ঘটনা প্রতিক্ষণই ঘটছে দাবি করে তিনি বলেন, “তাই এটাকে এখন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যাবে না।”
পরে রাব্বীও সেই রাতে ওই নারী ও রিকশার যাত্রীর কাছ থেকে কীভাবে এসআই মাসুদ টাকা আদায় করেন তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
রাব্বীর পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. রাশিদুল হক বলেন, এ ধরনের মানসিক চাপে পড়লে মাথা ব্যথা, ঘুম না হওয়া, মনে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করা, বুক ধড়ফড় করা, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়াসহ বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়।
“রাব্বীর মধ্যে মাথা ব্যথা, ঘুম না হওয়া ও ভয়ের লক্ষণগুলো রয়েছে। এ ধরনের রোগী আমরা আগেও পেয়েছি। তারা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। আশা করছি, রাব্বীও আস্তে আস্তে ঠিক হবেন।”
অভিযোগের পর এসআই মাসুদকে মোহাম্মদপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার হাফিজ আল ফারুক বিষয়টি তদন্ত করছেন। খুব শিগগির প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন তিনি।