মধ্যরাতে তল্লাশির নামে ‘ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়’

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গভীর রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে আটকে ইয়াবা ব্যবসায়ী-সেবনকারী বানানোর ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2016, 03:45 PM
Updated : 11 Jan 2016, 06:12 AM

বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিউনিকেশন বিভাগের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীর অভিযোগ, মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক মাসুদ শিকদার শনিবার রাতে তাকে আটক করে থানায় না নিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা গাড়িতে রেখে টাকা আদায়ের চেষ্টা চালান।

পুলিশের গাড়িতে বসে থাকার সময়ে পথচারীদের অনেককে ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে পুলিশ সদস্যদের অর্থ আদায়ের ঘটনা দেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক মাসুদ শিকদার

এ অভিযোগ তদন্তে পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার হাফিজ আল ফারুককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র গোলাম রাব্বী একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদ উপস্থাপনাও করেছেন এক সময়।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাতে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে বেরিয়ে কল্যাণপুরে নিজের বাসায় ফিরছিলেন। পায়ে হেঁটে কলেজগেইটে গিয়ে বাসে উঠতে চেয়েছিলেন।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে জেনেভা ক্যাম্পের কাছে পৌঁছালে পুলিশ তাকে আটক করে জানিয়ে তিনি বলেন, “ইয়াবা ব্যবসায়ী-সেবনকারী বলে আমার দেহ তল্লাশি করে। পরে গাড়িতে উঠিয়ে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হয়।”

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী (ফেইসবুক থেকে নেওয়া ছবি)

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়ার পরেও উপ-পরিদর্শক মাসুদ তাকে গালি দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।  

পরে খবর পেয়ে কয়েকজন সংবাদকর্মী ও স্বজন রাত আড়াইটায় আসাদগেইট এলাকায় গিয়ে পুলিশের কাছ থেকে তাকে নিয়ে আসেন।

ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই মাসুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গোলাম রাব্বী বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা হওয়ায় তার মানসম্মানের দিকে তাকিয়ে থানায় নেওয়া হয়নি।”

রাব্বীকে আটকের কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “এতো রাতে তিনি সেখানে কেন আসলেন তার কেনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

“নিয়ম অনুযায়ী তার দেহ তল্লাশি করতে চাইলে তিনি বাধা দেন এবং পুলিশ সম্পর্কে নানা কথা বলেন। পরে ওসির সাথে কথা বলে তাকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।”

গভীর রাতে তার নিরাপত্তার কথা ভেবে স্বজনদের ডেকে তাদের কাছে তাকে ‘বুঝিয়ে দেওয়া হয়’ বলেও দাবি করেন তিনি।

পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ করে ব্যাংক কর্মকর্তা রাব্বী বলেন, “পুলিশের গাড়িতে বসে থেকে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। রিক্সা থেকে লোক নামিয়ে বা রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া লোক ধরে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে টাকা আদায় করছে, আর ছেড়ে দিচ্ছে।

“কোট-প্যান্ট পরা এক ভদ্রলোককে রিক্সা থেকে নামিয়ে লাখ টাকা দাবি করে মাসুদ শিকদার। পরে গাড়ি থেকে একটু দূরে সমঝোতা হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।”

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসআই মাসুদ।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার হাফিজ আল ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। দুই পক্ষ ছাড়াও সংশ্লিষ্টদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পরে তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”