বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আগামী ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
Published : 02 Jan 2016, 01:37 PM
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে টানা তিন ঘণ্টা বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন।
ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালযের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য প্রথম নরম ও অহিংস কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাই বলছি। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে, আর পিছনে ফেরার সময় নেই।”
ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “আগামী ১১ জানুয়ানি থেকে ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিদিষ্টকালে জন্য শিক্ষকরা সর্বাত্নক কর্মবিরতি পালন করবে। কোনো ধরনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। এমনকি সান্ধ্যকালীন কোর্স পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।”
সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরুর আগে ৩ জানুয়ারি থেকে শিক্ষকরা কালো ব্যাজ পরে ক্লাসে যাবেন এবং ৭ জানুয়ারি তিন ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবেন।
তবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আগামী ১০ জানুয়ারি তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে কালোবাজ ধারণ করা হবে না বলে জানান ফেডারেশনের মহাসচিব।
তিনি বলেন, “এই কর্মসূচি চলাকালে সরকারে পক্ষ থেকে যদি কোনো আলোচনায় ডাকা হয়ে থাকে, তাহলেও এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। নতুন প্রজ্ঞাপন প্রকাশ না হওয়া পযন্ত এই কর্মসূচি চলবে।”
শিক্ষকদের বিরোধিতার মধ্যে সরকার অষ্টম বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি দাবি আদায়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতির হুমকি দিয়েছিল।
অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই গ্রেডে মর্যাদার অবনমন এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষকরা।
এরপর সরকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই দাবি পর্যালোচনায় কমিটি করে। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকও করেন।
গত ৬ ডিসেম্বর বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তার ১০ দিন পর বেতন কাঠামোর গেজেটে তার মধ্যে প্রথম দুটির প্রতিফলন ঘটেনি বলে শিক্ষকদের অভিযোগ।
প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, “আমরা প্রতারিত হয়েছি। কিন্তু সচিবদের জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।”
শিক্ষকদের বক্তব্য অনুযায়ী, যে তিনটি দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি অর্থমন্ত্রী দিয়েছিলেন, সেগুলো হচ্ছে- অষ্টম বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর অনুরূপ সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল থাকবে এবং এক্ষেত্রে সপ্তম বেতন স্কেলে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা কমানো হবে না; জ্যেষ্ঠ সচিবদের জন্য সৃষ্টি করা সুপার গ্রেডে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করার বিধান এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন সপ্তম গ্রেডে সম্ভব না হলে অষ্টম গ্রেড থেকে শুরু করা হবে।
কিন্তু প্রজ্ঞাপনে প্রথম দুটি দাবির প্রতিফলন না ঘটায় সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করে অষ্টম বেতন কাঠামো সংশোধনের পর আবার গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিল শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
তবে তৃতীয় প্রতিশ্রুতিটি পূরণ করায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন শিক্ষকরা।