বাংলাদেশকে ‘আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মত’ ব্যবহার করার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া হত্যা ও হামলার পেছনে আইএস বা জঙ্গি গোষ্ঠী থাকার স্বীকারোক্তি দিতে ‘চাপ’ আসছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 08 Nov 2015, 11:24 AM
তিনি বলেছেন, “তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চায়। আফগানিস্তান, পাকিস্তান বানাতে চায়। যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে।”
বাংলাদেশকে ‘যে কোনোভাবে অনিরাপাদ’ প্রমাণ করার জন্য ‘আর্টিফিশিয়ালি’ এসব হত্যা-হামলা ঘটানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তার সদ্য সমাপ্ত নেদারল্যান্ডস সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন হলেও স্বাভাবিকভাবেই দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ড এবং তল্লাশি চৌকিতে পুলিশ হত্যার প্রেক্ষিতে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্ন আসে, প্রধানমন্ত্রী তার জবাবও দেন।
গুলশানে এক ইতালীয় নাগরিক এবং রংপুরে জাপানি খুন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বিদেশে থাকার সময়ই আশুলিয়ায় তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়ে এক কনস্টেবলকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
তার আগে গতমাসের শেষ দিকে গাবতলীতে এক তল্লাশি চৌকিতে একইভাবে হামলা চালিয়ে আরেক পুলিশ হত্যা করা হয়। পুরান ঢাকার ইমামবাড়ায় আশুরার তাজিয়া মিছিলের সময় বোমা হামলায় নিহত হয় দুইজন।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। কিন্তু বাংলাদেশকে যে কোনোভাবে অনিরাপদ আর (এখানে) জঙ্গি আছে স্বীকার করা… আর স্বীকার করলে হামলে পড়া- এই ধরনের পরিকল্পনা অনেকের আছে।”
তিনি প্রশ্ন করেন, “একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে হত্যা করছে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে মারছে। সূত্রটা কার হাতে? ক্রীড়ানক কে? খেলছে কে?”
এসব ঘটনায় আইএস ও আল কায়েদার নামে দায় স্বীকার করা করা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট খবর দিলেও তার কোনো ভিত্তি নেই বলে সরকারের দাবি।
বাংলাদেশে এ ধরনের আরও হামলার আশঙ্কার কথা তুলে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের এ দেশে চলাফেরায় সতর্কতা জারি করেছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল এবং দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে ‘বিএনপি-জামায়াত জোটই’ এসব করাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি দেশের ভেতর থেকেও বাংলাদেশকে ‘অনিরাপদ প্রমাণ করার অপচেষ্টা’ চলছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “আগুন দিয়ে মানুষকে হত্যার পরও যখন দেখা যাচ্ছে যে তারা কিছু করতে পারছে না, তাই একটি গ্রুপ নেমেছে গুপ্ত হত্যায়।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারাই ‘বাংলাদেশে আইএস আছে’- এটি প্রমাণ করতে চাইছে। আর তা ‘প্রমাণ করা গেলে’ বাংলাদেশে কী ঘটতে পারে তা দেশবাসীকে অনুধাবন করতে বলেন তিনি।
“সিরিয়ায় কী হচ্ছে, লিবিয়ায় কী হচ্ছে, ইরাকে কী হচ্ছে… সেসব দেশে যা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশেও সেই অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ‘ওই অবস্থা সৃষ্টি হোক’ তা তার সরকারের কাম্য নয়।
“প্রচণ্ড চাপ.. যে আমরা কেন স্বীকার করি না। আমরা দেখতে পাচ্ছি… কে, কারা এসব করছে। আমাদের যে সমাজ, তাতে সবাই তো চেনা।”
শেখ হাসিনা বলেন, “যারা ধরা পড়ছে, তারা একটি বিশেষ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, হয়ত ছাত্রজীবনে শিবির করেছে, ছাত্রদল করেছে। আর কাউকে তো আমরা দেখছি না।”
বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই ‘অনিরাপদ-অনিরাপদ’ বলে চিৎকার করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“তাদের আরও অনেক পরিকল্পনা আছে। তারা অনেকদূর এগোতে চায়। যারা বলছে, বাংলাদেশ নিরাপদ নয়, তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে অনেকে বাংলাদেশকে অনিরাপদ করতে চায়।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অনেক স্পষ্ট কথা বলছি। কারণ, আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। আমি আমার বাবার সন্তান।”
বাংলাদেশের নাগরিকদের ‘অসাম্প্রদায়িক’ অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, আশুরার আগের রাতের বোমা হামলার ঘটনাকে ‘শিয়া-সুন্নি গোলমাল’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টাও হয়েছে।
এ ধরনের হামলা যারা চালিয়েছে এবং যারা এর পেছনে রয়েছে, তাদের অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অর্থায়ন মূলত একটি দল করছে, আর মাঠে খুন খারাবির কাজ আরেকটা দল করছে। এর বেশ কিছু তথ্য আছে, আরও তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা হচ্ছে।”
কোনো তদন্ত ছাড়াই এসব ঘটনাকে সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলা হচ্ছে, যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এক সাংবাদিক।
উত্তরে সরকারপ্রধান বলেন, “তাদের ষড়যন্ত্রের মধ্যে কি পা দেব? পরিকল্পিত ঘটনা। বিচ্ছিন্ন ঘটনা তো কি বলব?”
বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো ‘সহজ’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমেরিকায় প্রতি মিনিট কত ক্রাইম হচ্ছে? সে হিসাবে বলব, বাংলাদেশ নিরাপদ। অনিরাপদ না।”