প্রায় পনেরশ’ বছর আগে ইমাম হোসেইনের হত্যার দিনটি স্মরণে কর্মসূচি পালনে গিয়ে বোমা হামলার শিকার বাংলাদেশের শিয়া নেতারা বলছেন, হামলাকারীরা ইসলামের শত্রু।
Published : 24 Oct 2015, 02:02 PM
রাজধানীর হোসাইনী দালানের ইমামবাড়ায় শনিবার ভোররাতে হামলার কারণে ওই সময়কার তাজিয়া মিছিল না হলেও সকালে যথারীতি তাজিয়া মিছিল হয়েছে এবং তাতে ‘হায় হোসেন-হায় হোসেন’ মাতম তুলেছেন কয়েক হাজার শিয়া।
শিয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের এক বিবৃতিতে হামলাকারীদের ‘ইসলাম, দেশ ও জাতির শত্রু’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, তারা ভয় পাননি।
এই হামলা কারা চালিয়েছে বলে মনে করেন- জানতে চাইলে তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারী আব্দুল জব্বার নামে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইয়াজিদের বংশধরেরা এই হামলা চালিয়েছে। ইমাম হোসেনকে যারা হত্যা করেছিল, তারা এখনও আছে।”
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের (রা.) শহীদ দিবস আরবি মহররম মাসের ১০ তারিখকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে পালন করে মুসলমানরা।
সপ্তম শতকে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন ইমাম হোসাইন।ক্ষমতা ধরে রাখতে মুয়াবিয়াপত্র ইয়াজিদ ইমাম হোসাইনকে হত্যার পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন।
আশুরার দিনটি ঘটা করে পালন করে শিয়া মুসলিমরা। রাজধানীর ইমামবাড়ায় প্রায় ৪০০ বছর ধরে তাজিয়া মিছিল চলে আসছে বলে ‘হোসাইনী দালান ইমামবাড়ার’ এক বিবৃতিতে বলা হয়।
“এ জাতীয় কাপুরুষোচিত ও ন্যক্কারজনক কাজ ৬১ হিজরি সনে প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদ (স.) ও তার দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের (আ.) সঙ্গে ঘটেছিল। ঐতিহাসিক হোসাইনী দালান ইমামবাড়ায় এর পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।”
হোসাইনী দালান ইমামবাড়ার সুপারিনটেনডেন্ট এম এম ফিরোজ হোসেন বিবৃতিতে বলেন, “বিগত রাতে দুষ্কৃতকারী কর্তৃক যে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, তা শুধু হোসাইনী দালান নয়, পুরো দেশের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর বিরাট আঘাত।”
ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ঘটনার বিচার দাবি করার পাশাপাশি ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
সকাল ১১টার দিকে নাজিমউদ্দিন রোডের হোসাইনী দালান থেকে মূল তাজিয়া মিছিল শুরু হয়ে আজিমপুর, নিউ মার্কেট হয়ে ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়কের পশ্চিম প্রান্তে ‘কারবালা’ প্রাঙ্গণে গিয়ে দুপুর দেড়টার শেষ হয়।
এর আগে ভোরে আরেকটি মিছিল ইমামবাড়া থেকে বের হয়ে বকশী বাজার, নাজিমুদ্দিন রোড, চকবাজার, রহমতগঞ্জ, চাঁদনী ঘাট, উর্দু রোড ও বকশীবাজার ঘুরে আবার ইমামবাড়ায় ফিরে আসে।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও মিরপুরেও বের হয় তাজিয়া মিছিল। বিকালে চিটাগাং রোড থেকে শুরু হয়ে একটি তাজিয়া মিছিল নারায়ণঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সামনে গিয়ে শেষ হয়।
বোমা হামলা ‘তাজিয়া মিছিল’ ও ‘জসনে জুলুস’ এ কোনো কমতি আনতে পারেনি বলে জানান হোসাইনী দালান ইমামবাড়ার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও মুখপাত্র সৈয়দ বারেক রেজা (মজলুম)।
পাকিস্তানসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা ঘটলেও এই ধরনের হামলা বাংলাদেশে আগে দেখা যায়নি। এই হামলায় একজন নিহত এবং অর্ধ শতাধিক আহত হয়।
হামলার পর শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে এই ধরনের বিরোধ লালন করা হয় না।