গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে শিশুকে গুলির অভিযোগ নিয়ে আলোচনায় আসা আওয়ামী লীগের সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার দলের কয়েক নেতা।
Published : 03 Oct 2015, 10:13 PM
এই সংসদ সদস্য এর আগেও নানা ‘অপকর্ম’ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “সাংসদ লিটন বেশিরভাগ সময় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নানা অঘটন ঘটিয়ে থাকেন। কিন্তু এসব অপকর্মের জন্য এখন পর্যন্ত দলীয়ভাবে কিংবা আইনগতভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। এ কারণে তিনি দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।”
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গোলাম কবির মুকুলও তাদের আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন।
সাংসদের এসব কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে অভিযোগ করে তার বিচার দাবি করেন তারা।
গত শুক্রবার ভোরে উপজেলা শহরের ব্র্যাক মোড়ের গোপালচরণ এলাকায় কালাইয়ের ব্রিজের কাছে সাংসদ লিটনের ছোড়া গুলিতে শাহাদাত হোসেন সৌরভ (৮) নামে এক শিশু দুইপায়ে গুলিবিদ্ধ হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সাংসদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন স্কুলছাত্র সৌরভের বাবা।
সাংসদ লিটনের বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেটকে লাঞ্ছিত, যাত্রামঞ্চ থেকে নৃত্যুশিল্পীকে নামিয়ে আনা, স্কুলশিক্ষককে জুতাপেটা করা হয় নানা অভিযোগ করেছেন তার দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা বাবুল বলেন, “গত বছর ২৫ মে উপজেলার বামনডাঙ্গা আব্দুল হক কলেজ মাঠে অবৈধভাবে চালানো অশ্লীল নৃত্যের সার্কাস প্যান্ডেল ভেঙে দিতে গেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেজবাহ আহম্মেদ ও শরীফ আহম্মেদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এমপি।”
একইমাসে বামনডাঙ্গা কালীতলা বাজারে যাত্রা প্যান্ডেলে নৃত্য দেখার সময় সাংসদ লিটন শিল্পীকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে আনেন এবং পরে যাত্রা কমিটির সহায়তায় ওই শিল্পীকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সাংসদ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভোরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঢুকে ফাঁকা গুলি ছোড়েন। তার আগের দিন ভোরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতর ঢুকে ওয়ার্ডবয় মামুনের বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করতে যান। এ সময় মামুন দৌড়ে পালিয়ে বাঁচেন।
রামদেব উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গত ৫ জুলাই সাংসদ ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনকে জুতাপেটা করেন বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
গত ১৯ জুন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমদাদুল হক বাবলুর সঙ্গে সাংসদের বাকবিতণ্ড থেকে হাতাহাতি হয়। এ নিয়ে কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। সংবাদ সম্মেলন করে সাংসদ লিটনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা।
এছাড়া এমপির নির্দেশে রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর ডিজিএম আব্দুল হালিম এবং সোনালী ব্যাংকের সুন্দরগঞ্জ শাখার ম্যানেজার আবদুল কাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মুকুল বলেন, “সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ নির্দেশ অনুযায়ী কাজ না করায় তাকে লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ছুড়েছিলেন এমপি লিটন। এ কারণে তিনি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান।”
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম বলেন, “এমপি লিটন দিনের বেলা ঘুমান আর রাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নিজে পাজেরো গাড়ি চালিয়ে ঘুরে বেড়ান। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ভোরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে লোকজনকে গালিগালাজ করেন। শুধু তাই নয়, তিনি সরকারি কর্মকর্তাদেরও গালিগালাজ করে থাকেন।”
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমপি লিটনের নিরাপত্তার জন্য একটি পিস্তুল ও একটি শটগান ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি অস্ত্র দুটি বিভিন্ন অপকর্ম ও অনৈতিক কাজে ব্যবহার করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
“এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অহেতুক পিস্তল ও শটগানের গুলি ছুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার একাধিক অভিযোগ পুলিশের কাছে রয়েছে।”
শিশু সৌরভ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সাংসদের কাছ থেকে অস্ত্র ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে পুলিশ।
শনিবার সন্ধ্যায় সাংসদের পক্ষে তার স্ত্রীর বড় ভাই তারিকুল ইসলাম সুন্দরগঞ্জ থানায় অস্ত্র জমা দেন বলে ওসি ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ সৌরভ ও তার স্বজনরা জানান, শুক্রবার ভোরে চাচা সাজা মিয়ার সঙ্গে রাস্তায় হাটাহাটি করছিল সৌরভ। সাংসদ লিটন সে সময় নিজের গাড়িতে করে সুন্দরগঞ্জ থেকে বামনডাঙ্গা যাচ্ছিলেন।
“পথে আমাদের দেখে এমপি আমাকে তার গাড়িতে উঠতে বলেন। আমি ভয় পেয়ে দৌড়ে পালাই,” বলেন সাজা মিয়া।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাংসদ লিটন পরপর গুলি ছোড়েন জানিয়ে তিনি বলেন, দুটি গুলি সৌরভের দুই পায়ে বিদ্ধ হয় এবং একটি গুলি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তাজুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তির পরনের কাপড় ভেদ করে বেরিয়ে যায়।