বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারিকরণ কমিশনকে একীভূত করতে নতুন আইনের খসড়ায় সায় দিয়েছে সরকার।
Published : 31 Aug 2015, 07:21 PM
সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৫’ নামের খসড়াটিতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
এই আইন কার্যকর হওয়ার পর বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারিকরণ কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নতুন এই কর্তৃপক্ষের সংযুক্ত হবেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “একীভূত করে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে।”
দুটি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে গঠিত এই কর্তৃপক্ষের একটি গভর্নিং বোর্ড থাকবে, যার প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী ও ভাইস-চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। ১৭ সদস্যের এই বোর্ডে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীরাও থাকবে।
“নির্বাহী চেয়ারম্যান হবেন নতুন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, যিনি গভর্নিং বডিরও সদস্য থাকবেন। সরকার নির্বাহী পরিষদে আরও ৬ জন সদস্য নিয়োগ দেবে।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রস্তাবিত এই কর্তৃপক্ষের কাজ হবে বেসরকারি খাতে স্থাপিত সব শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংযোগকারী শাখা ও প্রতিনিধি কার্যালয় নিবন্ধন করা।
তবে বেপজা, ইপিজেড, অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, ইকোনমিক জোন, বেসরকারি ইপিজেড, বিসিক শিল্পনগরী, হাইটেক পার্ক অথরিটির বিনিয়োগ এবং সরকারি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিনিয়োগ এই কর্তৃপক্ষের আওতায় আসবে না বলে জানান তিনি।
বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালের বিনিয়োগ বোর্ড আইনের মাধ্যমে বিনিয়োগ বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশনা অনুযায়ী বিনিয়োগ বোর্ড পরিচালিত হয়। বর্তমানে বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রয়েছেন নির্বাহী চেয়ারম্যান। এখানে ২৯৩ জনের জনবল রয়েছে।
আর ১৯৯৩ সালে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড’ কাজ শুরু করে, যা ২০০০ সালে আইনের মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে ‘প্রাইভেটাইজেশন কমিশনে’ রূপান্তরিত হয়। ৭০ জন জনবলের এই কমিশনে একজন চেয়ারম্যান রয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের কাজ ছিল সরকারি মালিকাধীন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে বিক্রি করা।
“কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, এই কাজটি খুব অগ্রসর হয়নি। ২০০০ সাল থেকে ১৫ বছরে এর কার্যক্রম প্রত্যাশিত মাত্রায় আমরা দেখতে পাচ্ছি না।”
“সরকার অনুভব করছে, রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যেগুলোকে লাভজনকভাবে চালানো সম্ভব সেগুলো চালু হবে। যেগুলো চালানো সম্ভব নয় হয়ত জমি আছে স্থাপনা নয়, সেগুলো অধিকতর লাভবান কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হবে।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এই প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারিকরণ কমিশনকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
আগের মতোই প্রস্তাবিত একীভূত বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন থাকবে বলে জানান তিনি।
নিবন্ধন কীভাবে করবে তা আইনে বলা আছে। আমদানি স্বত্ত্ব নির্ধারণ করবে এই কর্তৃপক্ষ। গেজেট বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কোনো এলাকাকে শিল্প এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে এবং নিবন্ধিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি অধিগ্রহণে সহায়তা করবে।
প্রাইভেটাইজেশন কমিশন যে কাজ করছিল সে কাজ করবে কর্তৃপক্ষ, দক্ষতার ব্যবহার নিশ্চিত করতে অব্যবহৃত জমি ও স্থাপনার তালিকা তৈরি এবং নীতিমালা তৈরির পর গেজেট করবে। তারপর অব্যবহৃত জমির প্লট তৈরি করে ব্যবহারের অনুমতি দেবে। বরাদ্দ বা হস্তান্তর- এই দুভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়তা দিতে কর্তৃপক্ষ একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিসের ব্যবস্থা করবে এবং এই আইনের অধীন নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামোগত সেবা দ্রুত প্রদানে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার থাকবে। সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিশ্চিতকরণ কমিটি করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এই আইন কার্যকর হওয়ার পর বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারিকরণ কমিশন বিলুপ্ত হবে কিন্তু সেখানে যারা কর্মরত আছেন তারা কেউ চাকরিচ্যুৎ হবেন না। তারা নতুন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে বিবেচিত হবেন। সেখানে কোনও সমস্যা দেখা দিলে প্রচলিত বিধান অনুসারে নিশ্চিত করবে।”
নতুন এই কর্তৃপক্ষ হবে বিনিয়োগ বোর্ডের উন্নত সংস্করণ এবং কাজের গতি বৃদ্ধি করতেই এ কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।