“প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সমস্যা কোথায়? কিভাবে উন্নয়ন করতে পারি-সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত আশা করছি,” বলেন তিনি।
Published : 22 Mar 2025, 08:59 PM
অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও প্রাথমিক শিক্ষার ‘মান বাড়ছে না’ তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
শনিবার ময়মনসিংহে টাউন হলের তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, প্রাথমিকে বেতন নেই, বই বিনামূল্যে, উপবৃত্তিও দেওয়া হয়। তাহলে অভিভাবকরা টাকা খরচ করে কেন শিশুদের অন্যখানে পড়ান?
প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ময়মনসিংহ জেলার অংশীজনদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভার বিস্তারিত তুলে ধরে মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন দৃশ্যমান। সে অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়ছে না, বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।”
তিনি বলেন, “স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক স্কুল ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়া সম্ভব ছিল না। এখন কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা হয়েছে। মানুষ স্বাধীন-তারা কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসায় শিশুদের পড়াচ্ছে। আমরা প্রাথমিকে বিনা বেতনে পড়াচ্ছি, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দিচ্ছি, উপবৃত্তি দিচ্ছি- তারপরও অভিভাবকরা তাদের শিশুদের পয়সা খরচ করে অন্যখানে কেন পড়াচ্ছেন?
“আমাদের প্রাথমিকের শিক্ষার অবকাঠামো ভাল, শিক্ষকরা মানসম্পন্ন, পড়াশুনায় অগ্রসর, বেতনকাঠামো মোটামুটি ভাল, চাকরির নিশ্চয়তা আছে। অন্যসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে কম। তারপরেও অভিভাবকরা কেন তাদের শিশুদের অন্য বিদ্যালয়ে পড়াবেন?
“প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সমস্যা কোথায়? কিভাবে উন্নয়ন করতে পারি-সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত আশা করছি।”
‘মানসম্মত শিক্ষা সামাজিক বৈষম্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে’ মন্তব্য করে বিধান রঞ্জন বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শিশুদের সক্ষম করে তোলা। শিক্ষকরা শিশুদেরকে মুখস্ত না করিয়ে তারা যেন মাতৃভাষায় বলতে, পড়তে, লিখতে ও গণিত করতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। যদি শিশুরা পারে তাহলে বুঝবেন আপনি সর্বোচ্চ করে দিয়েছেন। এরপর সে নিজে নিজেই সর্বোচ্চ পর্যায়ে লেখাপড়া করতে পারবে।”
প্রধান শিক্ষকদের নিজ নিজ স্কুলের শিক্ষার মানোন্নয়নে লক্ষ্য ঠিক করার নির্দেশনা দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “শিশুদের টার্গেট সে যেন মাতৃভাষায় লিখতে, পড়তে, বলতে পারে, গণিত করতে পারে, কিছুটা ইংরেজি পারে। আমরা সহায়তা করব। মাতৃভাষায় দক্ষ হলে সহজেই ইংরেজিসহ বিদেশি ভাষা শিখতে পারবে।
“শিক্ষকের দায়িত্ব পড়াশোনার মান বৃদ্ধি করা, তাহলে অনেক সমস্যা কেটে যাবে। সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে উদ্যোগী হলে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে পারব।”
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ।
সেখানে বক্তব্য রাখেন- প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা প্রশাসক মফিদুল আলম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন, ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ওবায়দুল্লাহ।
ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা বা থানা পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কারিগরি ও পেশাগত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (ইউআরসি) এর প্রশিক্ষক ও সহকারী প্রশিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা অংশ নেন।