“এর মধ্যে দিয়ে ব্যক্তিগত দুর্নীতি উৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে”, বলেছে ঢাকার জাতীয় গণমাধ্যমে রিপোর্টারদের সংগঠনটি।
Published : 23 Jun 2024, 10:01 PM
গণমাধ্যমে পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের সম্পদের হিসাব প্রকাশের পর পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সাংবাদিকদের দুই সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)।
সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো কর্মকর্তা দুর্নীতি করলে সেটি তার ব্যক্তিগত দায়। এ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমকে দোষারোপ করা উচিত নয়।
রোববার ডিআরইউর বিবৃতিতে বলা হয়, “সংবাদ প্রকাশের পর কোনো কোনো মহল এবং সংগঠন যে ভাষায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন তা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি।”
কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক পুলিশ সদস্যের বিপুল পরিমাণ সম্পদের যেসব প্রতিবেদন গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে কোনো ‘বিশেষ
উদ্দেশ্য’ ছিল না বলেও মনে করে ঢাকার রিপোর্টারদের এই সংগঠনটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, “সাংবাদিকরা সবসময় দায়িত্বশীল এবং তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশ করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে যাদের নামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাদের কাজ হচ্ছে প্রকাশিত তথ্যগুলো সঠিক কি না তা প্রমাণ করা।”
দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিঘার পর বিঘা সম্পত্তি, রিসোর্ট, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ও ফ্ল্যাট, বেশি কিছু কোম্পানিতে তার ও পরিবারের সদস্যদের মালিকানার বিষয়টি নিয়ে মাস দুয়েক ধরে তুমুল আলোচনা চলছে।
আদালতের আদেশে বেনজীরের খোঁজ পাওয়া সব সম্পদ জব্দ এবং ব্যাংক হিসাব ও কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত। তবে এই আদেশ আসার আগেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সাবেক আইজিপি ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশ ছেড়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের তলবে একবার সময় চেয়েও তাদের কেউ হাজির হননি।
এরপর ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক প্রধান আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকে। আছাদুজ্জামানও দেশের বাইরে চলে গেছেন, যদিও দাবি করেছেন, তিনি ফিরবেন এবং সব প্রশ্নের জবাব দেবেন।
পুলিশের পদে থাকা একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিষয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, যাদের সম্পদের পরিমাণ তাদের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে পুলিশ সদস্যদের সংগঠন পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন শুক্রবার এক বিবৃতিতে এসব প্রতিবেদনকে ‘তথ্যসূত্রবিহীন বাস্তবতা বিবর্জিত’ বলে দাবি করেছে।
পুলিশ বাহিনী নিয়ে ভবিষ্যতে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে ‘অধিকতর সতর্কতা ও সাংবাদিকতার নীতিমালা’ যথাযথভাবে অনুসরণের অনুরোধ জানায় পুলিশের এ সংগঠন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিপুল সম্পদ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতেই তারা ওই প্রতিবাদলিপি দিয়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তাদের বিবৃতির এই ভাষা নিয়ে শনিবার উব্দেগ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
এর পরদিন ডিআরইউ সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ ও সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “আমরা বলতে চাই, সব তথ্যই গণমাধ্যমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাংবাদিকদের বড় কাজটি হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ পরিবেশন করা। সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করে তথ্য উপাত্ত বের করে থাকেন এবং পেশাদারত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেন। এসব সংবাদ কারো বিপক্ষে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
“কোনো কর্মকর্তা দুর্নীতি করে থাকলে এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়, এ নিয়ে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ মাধ্যমকে দোষারোপ করা শোভন কাজ নয়। বরং এর মধ্যে দিয়ে ব্যক্তিগত দুর্নীতি উৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপ করা যৌক্তিক নয়।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “বাধা বিপত্তির মুখেও সাংবাদিক সমাজ তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাবে। স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এমন বক্তব্য প্রদান থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানায় ডিআরইউ।”
“স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি”
টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের বিবৃতিতেও পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির সমালোচনা করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, “সম্প্রতি দেশের সাবেক ও বর্তমান উচ্চ এবং নিম্নপদস্থ পুলিশ সদস্যদের অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। এতে উদ্বেগ জানিয়ে দেশের সকল গণমাধ্যমের সম্পাদক বরাবর চিঠি দিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
“সকল শ্রেণি-পেশা ও সার্বিক জনস্বার্থে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ যখন ক্রমাগত উন্নত করা জরুরি, তখন কোনো একটি পেশার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে ঢালাওভাবে টার্গেট করে এমন বিবৃতি-সমাজে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি। পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের এ চিঠির বিষয়ে উদ্বেগ এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিজেসি।”