‘‘একযুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মিলনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান নাই। আজকে সুযোগ পেয়েছেন, আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত, যে আমরা এই সুযোগ দিতে পেরেছি আপনাকে।”
Published : 21 Nov 2024, 07:42 PM
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কর্মসূচিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উপস্থিত হওয়ায় নিজেকে ‘সৌভাগ্যবান’ ও ‘সম্মানিত’ বোধ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়, যেখানে এক যুগ পর উপস্থিত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ইউনূসের পাশের আসনেই বসার ব্যবস্থা হয় তার। ছবিতে দুই জনকেই হাস্যোজ্জল দেখা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আজ আমরা বিশেষভাবে সৌভাগ্যবান এবং সম্মানিত, বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ এখানে আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন।
‘‘একযুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মিলনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান নাই। আজকে সুযোগ পেয়েছেন, আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত, যে আমরা এই সুযোগ দিতে পেরেছি আপনাকে। শারীরিক অসুস্থতা স্বত্বেও এই বিশেষ দিবসে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ, আমরা তার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি এবং এই অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে স্বাগত জানাচ্ছি।”
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রতিবছর দিনটি ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ।
এক সময় সেনাকুঞ্জের এ অনুষ্ঠান আলোচনায় থাকত অন্য রাজনৈতিক কারণে। দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দুজনেই এ অনুষ্ঠানে যেতেন। চির বৈরী এ দুই নেতার সারা বছর দেখা না হলেও সেনাকুঞ্জে তাদের সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা থাকত।
সর্বশেষ ২০১২ সালে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেও সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দুই নেত্রী। তবে সেদিন তাদের কথা হয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সর্বশেষ ২০০৯ সালে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল।
গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকার সরকার পতনের পর গত ৫ অগাস্ট ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। জুলাই-অগাস্টের ‘গণহত্যার’ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার খালেদা জিয়াকে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণ পৌঁছে দেন সেনাবাহিনীর কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে সেনা বাহিনীর প্রটোকল পাহারাতেই তিনি রওয়ানা হন।
এই অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের ‘নক্ষত্রসমূহকে’ এক যোগে এই মহাসম্মিলনে আনতে পেরেছেন, সেটা দেখে অবাক লাগছে আজকে। অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করছি আপনাদের সবাইকে দেখে।
“আর যে ‘নক্ষত্ররা’ শরিক হতে পারেন নাই, জায়গার অভাবে জায়গা দিতে পারেন নাই তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। যেই নক্ষত্র সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে তাদেরকে এখানে সবার পক্ষ থেকে সালাম জানাচ্ছি।”
বক্তব্যের শুরুতে ইউনূস মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিতা নারীদেরকে স্মরণ করেন। পরে তিনি জুলাই-আগস্ট মাসের গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের দুঃসাহসিক আত্মত্যাগ ও সাহসের কথা উল্লেখ করেন।
‘দেশ পুনর্গঠনের’ একটি ‘নতুন সুযোগ’ সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘তাদের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।’’
সশস্ত্র বাহিনী দেশের মানুষের কাছে ‘আস্থার প্রতীক’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এবং তৎপরিবর্তিত সময়ে দেশের ক্রান্তিলগ্নে সশস্ত্র বাহিনী বরাবরের মত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের ছাত্র জনতা ও সাধারণের পক্ষে দাঁড়িয়ে সশস্ত্র বাহিনী আবারও দেশের মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।’’
প্রতিবেশীসহ সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ শ্রদ্ধাশীল সহযোগিতা কামনা
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘বাংলাদেশে শান্তিপ্রিয় এক দেশ। প্রতিবেশীসহ সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ শ্রদ্ধাশীল সহযোগিতার মাধ্যমে সহাবস্থানই আমাদের মূল লক্ষ্য। তথাপি যেকোনো আগ্রাসী বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমরা সদা প্রস্তুত এবং দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।’’
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্তির প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কাজের প্রসঙ্গও উঠে আসে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে।
‘‘শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ১২ মিশনে শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত আছেন। বাংলাদেশ বর্তমানে অন্যতম বৃহৎ নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণ কারী দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচয় লাভ করেছে।’’
মুক্তিযুদ্ধে বিদেশিদের অবদানও স্মরণ করেন ইউনূস। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্যও তাদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতেও এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করেন তিনি।
আরও পড়ুন: