গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মিরপুর থানার মামলায় আদালতে পাঠানো হয়।
Published : 14 Dec 2023, 11:17 PM
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক ইউপি চেয়ারম্যান, পাঁচ চিকিৎসকসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করার কতা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত দিনাজপুর, নীলফামারী ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের ধরা হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন, চিকিৎসক সোহানুর রহমান সোহান, ফয়সাল আহমেদ রাসেল, তৌফিকুল হাসান রকি, সাইফুল আলম বাদশা ও ইবরার আলম। এছাড়া রায়হানুল ইসলাম সোহান, বকুল রায় শ্রাবণ ও আবদুল হাফিজ ওরফে হাপ্পু নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিআইডি জানিয়েছে, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলা নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে অভিযান চালিয়ে তাদের ধরা হয়েছে।
গ্রেপ্তার সাজ্জাদ হোসেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নম্বর সিংড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তিনি ২০১০ সাল থেকে প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে সিআইডির ভাষ্য।
চক্রের হোতা জসীমের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী সাজ্জাদ ২০১৭ সালের মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের আরেকটি মামলারও আসামি জানিয়ে সিআইডি বলছে, সাজ্জাদ উত্তরবঙ্গের ‘অসংখ্য’ শিক্ষার্থীকে অনৈতিক উপায়ে মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে কোটি টাকার উপরে ‘আয়’ করেছেন।
“পূর্বে গ্রেপ্তারকৃত একাধিক আসামি ১৬৪ এ সাজ্জাদের নাম বলেছে এবং জসীমের গোপন ডায়রিতেও তার নাম ও ফোন নাম্বার পাওয়া গেছে।”
গ্রেপ্তার আবদুল হাফিজ ওরফে হাপ্পু নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ‘বিটস' নামের একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক। পাশাপাশি তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিকানায় আছেন।
সিআইডি বলছে, এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া জিল্লুর হাসান রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে হাপ্পু দীর্ঘদিন ধরে তার কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। ইতোমধ্যে এমন বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে শনাক্তও করা হয়েছে।
চিকিৎসক সোহানুর রহমান সোহান বিট'স কোচিং সেন্টারের হাপ্পুর কাছ থেকে ২০১৩ সালে প্রশ্ন পেয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল ভর্তি হন। পরে বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন।
ফয়সাল আহমেদ রাসেল ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে ২০১০ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়ে জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান লাভ করেন, ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। এরপর যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সার্ভেইলান্স মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন রাসেল। পরে নিজেও প্রশ্নফাঁস ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
সাইফুল আলম বাদশাও ২০১০ সালে সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর প্রশ্নফাঁস কারবারে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি করিয়েছেন।
সিআইডি বলছে, তৌফিকুল ইসলাম রকি এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া ডা. জিল্লুর হাসান রনির গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিলেন। তারা দুজনই রংপুর মেডিকেল থেকে পাস করেছেন। সেই সুবাদে প্রশ্নফাঁসের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। রকি বিট'স কোচিংয়েও ক্লাস নিতেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা চিকিৎসক ইবরার আলমও জিল্লুর হাসান রনির সহযোগী ছিলেন। তার কথাও রনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিলেন বলে সিআইডির ভাষ্য।
সংস্থাটি বলছে, ইবরার ২০১৩ ও ২০১৫ সালের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে তা সরবরাহ করেছিলেন। এদের অনেকেই বিভিন্ন মেডিকেলে চান্স পেয়েছে।
রায়হানুল ইসলাম সোহান ও বকুল রায় শ্রাবণ দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বাসিন্দা। দুজনই একই স্কুলে পড়ার সুবাদে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সোহান ২০১৫ সালে তার এক মামার মাধ্যমে মেডিকেলের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পায় এবং তা বকুলকে সরবরাহ করে।
বকুল তার ভর্তীচ্ছু চার ‘ছোট ভাইয়ের’ কাছে সেই প্রশ্ন বিক্রি করে। চারজনই দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে বলে সিআইডি জানিয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মিরপুর থানার মামলায় আদালতে পাঠানো হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েচে।