এমপিওভুক্তির আবেদন প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি আঞ্চলিক উপপরিচালকের কাছে পাঠানোর বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।
Published : 06 Nov 2024, 11:36 PM
বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার চিন্তা করছে শিক্ষা প্রশাসন।
এক্ষেত্রে এমপিও ও অন্যান্য সুবিধার আবেদন যাচাইয়ের ধাপ কমিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) এ বি এম রেজাউল করীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এমনটাই জানিয়েছেন।
এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে ভোগান্তি অনেকটা কমবে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা।
প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা
এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তি এবং বিএড স্কেল, উচ্চতর গ্রেড, সিনিয়র শিক্ষক স্কেলের মত আর্থিক সুবিধা পাওয়ার জন্য এক মাস পর পর আবেদনের সুযোগ পান।
বেসরকারি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের এসব আবেদন দু’টি ধাপে যাচাই হয়। আর স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের আবেদনগুলো চারটি ধাপে যাচাই শেষে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধার অনলাইন আবেদন কলেজ থেকে আঞ্চলিক পরিচালকের কাছে যায়। আঞ্চলিক পরিচালক আবেদন যাচাই শেষে তা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিওভুক্তির সার্ভার ‘এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (ইমআইএস)’ এ পাঠান। ইএমআইএসে আসা আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় অধিদপ্তরের এমপিও কমিটি।
তবে, বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির অনলাইন আবেদন স্কুল থেকে প্রথমে উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা কাছে যায়। তিনি যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদন করলে তা যায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা কাছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তা যাচাই শেষে অনুমোদন করে পাঠান আঞ্চলিক উপপরিচালকের কাছে। আঞ্চলিক উপপরিচালক এসব আবেদন যাচাই করে ইএমআইএসে পাঠালে তা ফের যাচাই করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় এমপিও কমিটি।
বিভিন্ন সময়ে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমপিওভুক্তির আবেদন ‘অনুমোদন ও অগ্রায়ণে’ শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ নেওয়ার অভিযোগও ওঠে।
কমানো হবে আবেদন যাচাইয়ের ধাপ
শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার আবেদন যাচাইয়ের ধাপ কমিয়ে আনার চিন্তা করা হচ্ছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) এ বি এম রেজাউল করীম।
তিনি বলেন, “এতে পুরো প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ হবে। কলেজ শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন প্রতিষ্ঠান থেকে আঞ্চলিক উপপরিচালকের কাছে যায়। তিনি যাচাই করে আমাদের (ইএমআইএস) কাছে পাঠান। একইভাবে স্কুল শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আবেদন প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি আঞ্চলিক উপপরিচালকের কাছে পাঠানোর বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।”
এমনটি হলে এমপিওভুক্তি ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পেতে ‘ভোগান্তি’ অনেকটাই কমবে বলে মনে করছেন তিনি।
খুশি শিক্ষকরা
এমপিওর আবেদন যাচাইয়ের ধাপ কমানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের (বাশিফ)’ সভাপতি ও পাবনার সুজানগরের খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ্ রাজু এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এনটিআরসিএ থেকে প্রিলিমিনারি, রিটেন ও ভাইভায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একজন প্রার্থী সুপারিশ পেয়ে শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। তারপর বেতনভাতা পাওয়ার জন্য এমপিওভুক্ত হতে তাকে কয়েকটি ধাপের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
“প্রথম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, তারপর জেলা শিক্ষা অফিস, তারপর উপ-পরিচালক কার্যালয়ে পৌঁছায় এমপিওর আবেদন। এ ধাপগুলো সম্পন্ন করতে নতুন শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন সময়ে হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেকটা বাধ্য হয়েই অনেককে ‘অবৈধ পথ’ অবলম্বন করতে হয়।”
এমপিওসহ অন্যান্য সুবিধার আবেদন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সরাসরি উপপরিচালকের কাছে পাঠানোর বিধান হলে শিক্ষকদের ‘ভোগান্তি অনেকটা কমবে’ বলে মনে করছেন এ শিক্ষক নেতা।