“কবে নাগাদ সেবা চালু করতে পারব তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না,” বলছেন চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র।
Published : 23 Jul 2024, 10:57 PM
কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলার সময় বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দু’দফা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়। হামলার সময় দুর্বৃত্তরা ওই ভবনের বিভিন্ন তলায় আগুন ধরিয়ে দেয়, চালানো হয় ভাঙচুর। লুট করা হয় মূল্যবান জিনিসপত্র।
ভাঙচুর, আগুনে বিআরটিএর ডেটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বিআরটিএর সব ধরনের সেবা বন্ধ হয়ে পড়েছে। সেটি কবে চালু করা যাবে, সেটিও নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছে দেশের যানবাহন নিয়ন্ত্রক এই সংস্থাটি।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের হামলায় বিআরটিএর কম্পিউটার, মনিটর, আসবাবপত্রসহ মূল্যবান মালামাল লুট করা হয়। আগুনে ভবনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং ভবনের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেছে। ভবনের বেইজমেন্টে থাকা চারটি গাড়ি এবং পাঁচটি মোটরসাইকেল পুড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ভবনের ডেটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেবা চালু করা যাচ্ছে না।
“আমাদের সিস্টেমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় আমরা আপাতত গ্রাহকদের সেবা দিতে পারব না। লাইসেন্সগুলো প্রিন্ট হয় হেড অফিস থেকে, ফিটনেস সনদ দেওয়া হয় মিরপুর থেকে; সেখানে ভিআইসি (যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষার যন্ত্র) ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের পক্ষে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। কবে নাগাদ চালু করতে পারব তাও এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।”
গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, ঘটনা তদন্তে বিআরটিএর ৭ সদস্যের একটি কমিটি করেছে। পাশাপাশি বনানী থানায় মামলা করা হয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার বনানীতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। এ সময় ভবনের নিচতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত আগুন দেওয়া হয়। ভবনের বেইজমেন্টে থাকা কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
পরদিন শুক্রবার দুপুরের পর বিআরটিএ কার্যালয়ে ফের হামলা চালানো হয়। এ সময় ১২ তলা ওই ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে গিয়ে ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় বিভিন্ন কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে তারা।
মঙ্গলবার বনানীতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে আনসার সদস্যরা ভবনটি পাহারা দিচ্ছেন। তখনও ভবনের আগুনের পোড়া গন্ধ। এখানে সেখানে পড়ে আছে ভাঙ্গা কাঁচের টুকরা; পুড়ে যাওয়া চেয়ার, আসবাবপত্র।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ঘটনার সময় বিআরটিএ ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সাইমুম হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার পর থেকেই বিমানবন্দর সড়কের পাশে থাকা এই ভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে আন্দোলনকারীরা। এতে ওই ভবনের বিভিন্ন তলার দেয়ালের গ্লাস ভেঙে যায়। ঘটনার সময় ছয়জন আনসার সদস্য এবং বিআরটিরএর কর্মী মিলিয়ে ওই ভবনে ১২ জনের মতো ছিলেন।
সাইমুম হাসান বলেন, “সন্ধ্যা ৬টার পর আন্দোলনকারীদের একটা অংশ প্রধান ফটক ভেঙে, আরেকটা অংশ দেয়াল টপকে ভবনের ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় প্রথমে তারা ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিন-চার তলা পর্যন্ত লুটপাট করে। হামলার পর নিরাপত্তাকর্মীরা পেছনের দরজার দিয়ে বের হয়ে দেয়াল টপকে বের হয়ে যান। পরে বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নেন।
“আমরা বের হয়ে রাস্তায় ঘোরাফেরা করেছি। আগুন জ্বলছে দেখছি, কিন্তু কিছু করতে পারছি না। আমাদের অফিস তো আর ফেলে চলে যাওয়া যায় না। রাত ১টার দিকে পুলিশ, র্যাবের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে আগুন নেভায়।”
তিনি বলেন, আগুন নেভানোর পর নিরাপত্তাকর্মীরা ভবনে অবস্থান নেন। তবে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ফের হামলা হয় ওই ভবনে। তাদের হামলার মুখে পুলিশ পিছু হটে। এবার যেসব ফ্লোর অক্ষত ছিল, তাতে আগুন দেওয়া হয়।
“আগুন দেওয়ার পাশাপাশি কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ মূল্যবান যা পেয়েছে নিয়ে গেছে। আমরা ১১ তলায় আটকে পড়ি। একপর্যায়ে আমাদের লোকজনকে ফোন করে বিষয়টি জানাই। চেয়ারম্যানবাড়ি থেকে পুলিশ গুলি করতে করতে এদিকে আসলে দুর্বৃত্তরা সরে যায়, আমরা নেমে আসি।”
শুক্রবার দুপুরের পর হামলা চালানো হয় বিআরটিএর মিরপুরে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে। সে সময় বিআরটিএর ভেহিকল ইনস্পেকশন সেন্টার-ভিআইসি, বিআরটিএর হেল্প ডেস্কসহ প্রতিটি কক্ষে ভাঙচুর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, মিরপুর কার্যালয়ের প্রবেশ মুখে থাকা হেল্প ডেস্ক আগুনে পোড়া। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের ব্যারাক। এছাড়া ভিআইসির প্রবেশমুখে থাকা চারটি কক্ষ ভাঙচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব কক্ষ থেকে ফিটনেস সংক্রান্ত কাগজপত্র পরীক্ষাসহ নানা ধরনের সেবা দেওয়া হতো।
ভিআইসির ভেতরেও চালানো হয়েছে তাণ্ডব। স্বয়ংক্রিয়ভাবে যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষার এই কেন্দ্রের সব যন্ত্রাংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। লুট করা হয়েছে কম্পিটার ও মনিটর। ভিআইসির ভেতরে থাকা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিআরটিএর ঢাকা বিভাগীয় পরিচালকের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিচালকের অফিসে ঢুকতে পারেনি হামলাকারীরা। তবে ইটপাটকেল ছুঁড়ে ওই ভবনের সব জানালার কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।