এ ধরনের মহড়া সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি দুই বছর অন্তর আয়োজন করতে হয়।
Published : 02 Jun 2024, 04:56 PM
ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১১টা। ৫০ জন যাত্রী ও ক্রু নিয়ে এবিসি এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এমন সময় কন্ট্রোল টাওয়ারকে পাইলট জানালেন, তার উড়োজাহাজের ডান দিকের ইঞ্জিনে আগুন দেখা যাচ্ছে, কাজ করছে না কন্ট্রোল কলামের কিছু বাটন।
মুহূর্তের মধ্যে সেখানে হাজির বিমানবন্দরের ফায়ার শাখার দুটি গাড়ি, একটি অ্যাম্বুলেন্স, বিমানবাহিনীর একটি অগ্নি নির্বাপণ গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, মেডিকেল টিম, উদ্ধারকর্মীসহ একটি বেল-২১২ মডেলের সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ হেলিকপ্টার, ফায়ার সার্ভিসের একটি অগ্নি নির্বাপক গাড়ি ও একটি অ্যাম্বুলেন্স।
পুরো দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ‘গুরুতর আহত’ এক যাত্রীকে হেলিকপ্টারে করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হলো। আর দুর্ঘটনায় আহত ১৯ যাত্রীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানো হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও জাহানারা ক্লিনিকে।
আর অক্ষত ৩০ জন যাত্রীকে বিমানবন্দরের সারভাইভার রিসিপশন সেন্টারে (এসআরসি) নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে তাদের কাউন্সেলিং করে নেওয়া হলো অপেক্ষমাণ স্বজনদের সান্নিধ্যে।
এতক্ষণ যে ঘটনার বিবরণ পড়েছেন তা সত্যিকারের কোনো দুর্ঘটনা নয়। রোববার সকালে শাহজালাল বিমানবন্দরের অগ্নি মহড়ায় দেখা গেল এমন চিত্র। বিমানবন্দর, বিমান বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও জাহানারা ক্লিনিকের যৌথ উদ্যোগে এই মহড়া হয়।
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিধি (আইসিএও) অনুসারে, প্রতি দুই বছর অন্তর সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের অগ্নি নির্বাপণ মহড়া আয়োজন করতে হয়।
মহড়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, “এই বছরই বাংলাদেশে আইকাও’র অডিট হবে। এই অডিটে আমরা কীভাবে এই ধরনের কার্যক্রমগুলো সম্পাদন করি, পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে তারা সেগুলো দেখবে।
“এছাড়াও আমরা এটাকে বাস্তবে কীভাবে করছি, আমরা সঠিকভাবে মহড়া করছি কি না, যারা অংশগ্রহণ করছে তারা কীভাবে অপারেশন করছে, এই ইউনিটের যে বিভাগগুলো আছে সেগুলো তারা প্রত্যক্ষ করবে। সে জায়গায় আজকের মহড়াটা খুব টাইমলি ছিল এবং খুব সুন্দরভাবে এটাকে উপস্থাপন করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এ ধরনের প্রত্যেকটা মহড়ায় আমরা আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ধরার চেষ্টা করি। আমাদের সিস্টেমগুলোকে আমরা রিভিউ করি। এভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ইকোনমিতে এ ধরনের মহড়া ক্যাটালিস্ট ভূমিকা রাখতে পারে। আর সেই ভূমিকাটা পালন করার জন্য আমাদের দক্ষতার প্রয়োজন আছে।
“আমরা যারা গ্রাউন্ডে আছি, আমাদের এয়ারলাইন্সগুলো আকাশে, যারা সাপোর্ট সংগঠন আছে, প্রত্যেককেই কিন্তু তাদের ক্যাপাসিটির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। আমরা যদি এসব না করি তাহলে আমরা ওই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব না।”
মহড়ার অন স্ক্রিন কমান্ডার ছিলেন শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আজকের এ মহড়ার উদ্দেশ্য হলো- বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে বিমানবন্দরে দুর্ঘটনা কবলিত উড়োজাহাজের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যাচাই করা। সেই সাথে মহড়ার মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের কোনো ঘাটতি থাকলে সেটি ঠিক করা।
“প্রকৃতপক্ষে আসল দুর্ঘটনার দৃশ্যটি মঞ্চায়ন করা খুবই দুরূহ কাজ। তবে আমরা একটি দৃশ্যপট সাজিয়েছি সকলকে অবহিত করার জন্য।”
এসময় অন্যদের মধ্যে বেবিচকের পরিচালনা ও পরিকল্পনা কমিটির সদস্য এয়ার কমডোর এ এফ এম আতিকুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।