গাবতলীতে শ্যামলী কাউন্টারের মাস্টার সহদেব দাশ বলেন, “দুপুর পর্যন্ত আমাদের সবগুলো গাড়িই ঠিক টাইমে ছেড়ে গেছে, রাস্তায় তেমন ভোগান্তি নেই।”
Published : 14 Jun 2024, 08:23 PM
ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনেও গাবতলী বাস টার্মিনালে খুব বেশি ভিড় দেখা যায়নি। কাউন্টারের সামনে শ্রমিকদের এলাকার নাম ধরে চিৎকার শুনে খানিকটা খটকাই লেগেছে যাত্রীদের।
শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের পথে বাসের প্রধান এই টার্মিনালে বাসের তুলনায় যাত্রী কমই দেখা গেছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সড়কে যানজটও নেই খুব একটা। সকাল থেকে যেসব গাড়ি ছেড়ে গেছে, কোনো ভোগান্তি ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছে গেছে।
দুই সন্তান সিয়াম ও শাম্মীকে নিয়ে সাইদুল ইসলাম বাসের অপেক্ষায় বসেছিলেন শ্যামলী কাউন্টারে। তারা কাউন্টারে এসেই টিকেট পেয়েছেন। তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি।
সাইদুলের পাশেই উচ্ছ্বসিত দেখা যায় দুই সন্তানকে। গ্রামে যাওয়ার আনন্দে ভীষণ খুশি তারা।
শ্যামলী কাউন্টারের মাস্টার সহদেব দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমাদের সবগুলো গাড়িই ঠিক টাইমে ছেড়ে গেছে, রাস্তায় তেমন ভোগান্তি নেই।”
তবে দূরপাল্লার বাসে স্বল্প দূরত্বে কম ভাড়ায় যাওয়ার যে সুযোগ বছরের বাকি সময় থাকে, ঈদে তা দেখা যায়নি। ফলে টাঙ্গাইলের যাত্রী হুমায়ুন আজম রেওয়াজ বগুড়াগামী একটি বাসে উঠেন তার গন্তব্যের দ্বিগুণ দূরত্বের বগুড়ার টিকেট কেটে।
রেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেউই স্বল্প দূরত্বের টিকেট বিক্রি করছেন না। কয়েকটা কাউন্টারে গেলাম, এর মধ্যে একটা কাউন্টার তো ২ হাজার টাকা দিয়ে রংপুরের টিকেট নিতে বলেছে। পরে বগুড়ার টিকেট কিনেছি।”
ঢাকার আশেপাশের জেলায় চলাচল করা বাস, এমনকি ঢাকা নগরীতে চলাচল করা বাসও হুট করে দূরপাল্লার বাস হয়ে গেছে বলে জানান আশিক নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, “বেশি ভাড়া পাওয়ার জন্য তারা এখন রংপুরে ট্রিপ দিচ্ছে।”
রাস্তার পাশেই ঢাকায় চলাচল করা একটি দ্বিতল বাস দেখিয়ে আশিক আহমেদ নামে এক যাত্রী বলেন, “এই বাসটি তো ঢাকার ভেতরে চলাচল করে। এটি এখন রংপুরে যাচ্ছে যাত্রী নিয়ে।”
এইচ কে ট্রাভেলসের কাউন্টার মাস্টার মনির হোসেন বলেন, “আজকে যাত্রী কম। ফলে অনেকে তাৎক্ষণিক এসেই টিকেট কিনতে পারছেন। আর রাস্তায়ও তেমন যানজট নাই।”
গাবতলীতে পুলিশকেও তৎপর দেখা গেছে; রিকশা বা অটোরিকশাকে অহেতুক কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ভিড় করতে দেয়নি তারা।
গাবতলীর বিপরীত চিত্র মহাখালীতে। এখানে যাত্রীর তুলনায় বাস কম। টিকেট কেটেও দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে যাত্রীদের।
বিকেলে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে এনা পরিবহনের টিকেট কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের দীর্ঘ সারি দেখা গেল। সেখানে কাউন্টারে ব্যানারে লেখা, ‘ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয় না’।
এনা কাউন্টারের সামনেই ব্যাগ নিয়ে বসে ছিলেন ষাটোর্ধ্ব আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, “টিকেট কেটে এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি, গাড়ি আসলে ছাড়বে। কতক্ষণ বসে থাকতে হবে জানি না।”
তবে এনায় বাড়তি ভাড়া আদায় না হলেও ঈদ যাত্রায় বহু যাত্রীকেও বাড়তি খরচ করতে বাধ্য করা হয়।
দুপুরে মহাখালী এসেছিলেন শাহনাজ রহমান, সঙ্গে শ্বশুর বজলুর রহমান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যেতে লাবিবা বাসে চড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু এসে শোনেন কোনো বাস নেই। যেগুলো সকালে ছেড়ে গেছে, সেগুলো ফিরে এলে আবার ছেড়ে যাবে।
পরে অটোরিকশায় করে তারা কমলাপুর যান, সেখানেও সোহাগ, বিআরটিসিসহ কোনো বাসই নেই। টিকেট না পেয়ে যখন হতাশ হয়ে বাসায় ফেরার পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই তিশা বাসে দুটি সিট পেয়ে যান। তবে টিকেটের জন্য নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০০ টাকা করে বেশি দিতে হয় তাদের।
টার্মিনালে শৃঙ্খলার অভাবও দেখা গেছে। ভ্রাম্যমাণ দোকানের কারণে হাঁটাচলায় সমস্যা হওয়ার কথাও জানিয়েছেন একাধিক যাত্রী।
নাবিলা মনসুর নামে একজন বলেন, “কাউন্টারের সামনে লোকজনের দাঁড়ানোর জায়গা নেই, কিন্তু এখানে আঁখের রস, আর পরোটা ভাজার ভ্যান বসে আছে। এসব দোকান এই ভিড়ের ভেতরে থাকবে কেন?”
নাবিলা যখন বিরক্তির সুরে কথাগুলো বলছিলেন, তখন পাশেই উচ্ছ্বসিত দেখা যায় তারে মেয়ে সাফিয়াত ও রাফিয়াতকে। তারা জানায়, গ্রামের বাড়ি যাবে বলে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে তাদের।
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া সাফিয়াত বলে, “গ্রামে ঈদ করতে ভালো লাগে। কারণ সেখানে আমার চাচাতো ভাই-বোনেরা আছে।”