এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ওই অংশে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা ছিল। তবে এখনও বাকি কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি।
Published : 07 Feb 2025, 09:19 AM
রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল পুরোদমে চললেও সেখান থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণকাজ এখনও ‘অর্ধেক’ বাকি।
এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ওই অংশে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা ছিল। তবে এখনও বাকি কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি। মেট্রোরেলে এর আগে কাজ করা ঠিকাদার কোম্পানির সঙ্গে চলছে দর কষাকষি।
সব মিলিয়ে কবে নাগাদ বাকি কাজ শুরু হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল পৌঁছাবে সেই সময়সীমা দিতে পারছেন না ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষের কেউ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন। ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। ২০২৪ সালের শুরুতেই উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনের সবগুলোই খুলে দেওয়া হয়।
আর মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলে কাজ চলছে তার সার্বিক অগ্রগতি ৫০ শতাংশ বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুর রউফ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ এর মতিঝিল-কমলাপুর অংশে গত মার্চের শেষ দিকে ভায়াডাক্ট সংযোজন শুরু হয়েছে। কমলাপুর মেট্রো স্টেশনের কাজও অনেক দূর এগিয়েছে। এই অংশের সার্বিক অগ্রগতি ৫০ শতাংশ।”
কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই অংশে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু সিভিলের কাজ ছাড়া বাকি টেকনিক্যাল কাজের ঠিকাদার নিয়োগ করা এখনও সম্পন্ন হয়নি। সেটা নিয়োগ হলে আমরা বলতে পারব।”
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিভিল অংশের কাজ প্রায় শেষ। এখন শুধু সিস্টেম, টেকনিক্যাল, লিফট, এক্সেলেটর, ট্রেনের দরজার সঙ্গে মিলিয়ে দরজা খোলার গেইট, টেলিভিশন সিসিটিভি, রেলের যোগাযোগসহ অন্যান্য টেকনিক্যাল কাজের ঠিকাদার পেলে বাকি কাজ কবে শেষ হবে তা বলা যাবে।
এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায় মতিঝিলের শাপলা চত্বর হয়ে কমলাপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার অংশ নির্মাণ করা হচ্ছে। মতিঝিল থেকে কমলাপুরের সিভিল অংশের কাজ প্রায় শেষ।
ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণ কাজের সুবিধার্থে সড়কের একপাশ বন্ধ রেখে অন্যপাশ দিয়ে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৩০টি পিলারের মধ্যে সবগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। স্প্যান বসানোর বেশিরভাগ কাজ বাকি। স্টেশনের কাজ শেষ হলেও কনকোর্স স্ল্যাব, রেলওয়ে লেভেল স্ল্যাব, প্ল্যাটফর্ম স্ল্যাব বসানো বাকি আছে। টেকনিক্যাল কাজগুলোতে হাত পড়েনি।
মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজের জন্য বেশকিছু বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙতে ও উচ্ছেদ করতে হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হয়েছে ক্ষতিপূরণ।
ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের কমলাপুর অংশের কাজের জন্য ৩৭ ধরনের মাটির পরীক্ষা করা হয়। প্রকল্প এলাকায় ১৭৭টি পাইলিং, ৬১টি পাইল ক্যাপ, ৩০টি স্টেশন কলাম, ৩৯টি পিয়ার বা ভায়াডাক্ট কলাম, ১৭টি পিয়ার হেড, ১২টি পোর্টাল বিম, ২৯৮টি প্রি-কাস্ট সেগমেন্ট, ২৮টি স্প্যান, ৪১০৭ বর্গমিটার কনকোর্স স্ল্যাব, ২৫৪০ বর্গমিটার রেলওয়ে লেভেল স্ল্যাব, ২৭২৩ বর্গমিটার প্ল্যাটফর্ম স্ল্যাব ও ১৬০০ টন ইস্পাত স্ট্রাকচার ব্যবহার করা হবে।
অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (ইলেকট্রিক্যাল, সিগন্যাল, টেলিকমিউনিকেশন এন্ড ট্র্যাক) মো. রেজাউর রহমান আকন্দ বলেন, স্প্যান বসানোর কাজ অনেকটুকু হয়েছে। স্ল্যাব ও স্প্যান বসানোর কাজ জুনের মধ্যে শেষ হবে। এ সময়ের মধ্যে সব রকমের সিভিল ওয়ার্ক শেষ হবে।
ডিএমটিসিএলের প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া বলেন, “চুক্তি ঠিকাদারের সঙ্গে না হওয়া পর্যন্ত সময় বলতে পারতেছি না। সামনে আমাদের বোর্ড মিটিং আছে, সেখানে যদি রাজি হয় তখন বলা যাবে কবে শেষ হবে।”
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ঠিকাদার পাচ্ছি না বিষয়টা তা না। আমাদেরই তো ঠিকাদার আছে। আর জাইকা বলছে তাদের দিয়েই করাতে। তারা (ঠিকাদার) প্রাইসটা দিয়েছে আমাদের প্রাক্কলিত মূল্যের দ্বিগুণ। ঠিকাদার আছে, এখানে আমরা এত টাকা দিয়ে পারব কিনা, সেটা দেখছি।
“তাছাড়া বিকল্পও নাই যে নতুন কাউকে নিয়ে টেন্ডার করব। কারণ সিগন্যালিং সিস্টেম ওদের (আগের ঠিকাদার) কাছ থেকেই নিতে হবে। যেহেতু উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত তাদের সিগন্যালে চলে। নতুন লাইন হলে যাকে খুশি নেওয়া যেত। এখানে তাদের কাছ থেকেই নিতে হবে, এখন তাদের সঙ্গে আমাদের প্রাইসটা ঠিক করা হচ্ছে বিষয়।”
রেজাউর রহমান আকন্দ বলেন, “টেন্ডার হয়েছে বলতে, আগের যে ঠিকাদার আছেন তাকে দিয়েই করানো হবে, ভেরিয়েশনের মাধ্যমে। মতিঝিল পর্যন্ত যে ঠিকাদার আছেন, তার মাধ্যমেই করার কথা। কিন্তু সেই ঠিকাদার যে প্রাইজ দিচ্ছে সেটা হাই হচ্ছে।
“মানে আমরা যে বাজেট করেছি তার থেকে বেশি চাচ্ছে। এই জন্য আমরা ঠিকাদার ঠিক করতে পারি নাই। সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে। সম্ভবত ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহের দিকে সমাধান হবে। তখন বলা যাবে আসলে কত সময় লাগবে।”
কাজের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “সিভিলের কাজ শেষ হয়ে গেছে, কিছু অংশে স্প্যান বসানো বাকি আছে। জুনের মধ্যে সব স্প্যান বসানো শেষ করে সিভিলের ওয়ার্ক পুরোপুরি শেষ হবে। এখন স্টেশনে যে যন্ত্রপাতিগুলো বসবে, লিফ্ট, এস্কেলেটর, ট্রেনের দরজার সঙ্গে মিলিয়ে দরজা খোলার গেইট, টেলিভিশন সিসি টিভি, রেলের যোগাযোগসহ সিভিল ছাড়া বাকি কাজের ঠিকাদার কনফার্ম হয় নাই। সেটা কনফার্ম হলে তখন আমরা বুঝতে পারব কবে কাজ শেষ হবে।”