সিইসি বলেছেন, ইভিএমের গতি ‘অবশ্যই’ ব্যালটের চেয়ে ধীর হবে, কারণ পুরনো পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ মেলানোর কোনো বিষয় ছিল না।
Published : 27 Dec 2022, 04:42 PM
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে ধীর গতির অভিযোগ থাকলেও দিন শেষে ৬০ শতাংশ ভোট পড়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
মঙ্গলবার বিকালে ভোট শেষে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “যেটা কাস্ট হয়েছে- ৪টা পর্যন্ত কোথাও ৬৭ শতাংশও পাচ্ছি, আবার কোথাও ৩৯ শতাংশও পাচ্ছি। এভারেজ অনুমান করছি এটা ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ এবং পরিশেষ ৬০ শতাংশের উপরে বা কমও হতে পারে। এটা অনুমান করে বলছি। চূড়ান্ত গণণার পর দেখা যাবে কত হল।”
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এ সিটির ২২৯টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বা গোলযোগ ঘটেনি।
শীতের সকালে কুয়াশার মধ্যে ভোটার উপস্থিতি তুলনামুলক কম থাকলেও বেলা বাড়ার পর কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটার বাড়তে থাকে। তারপারও প্রথম পাঁচ ঘণ্টায় ২৫ শতাংশের মত ভোট পড়ে থাকতে পারে বলে ধারণা দিয়েছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন।
তবে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ইভিএমের ‘ত্রুটি’ এবং ভোটগ্রহণে ধীর গতির অভিযোগ করেছেন। ইভিএম জটিলতায় তার নিজেরও ভোট দিতে আধা ঘণ্টা দেরি হয়েছে।
জাপা প্রার্থীর অভিযোগ ‘অসত্য নয়’ মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ব্যালট পেপারের প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ইভিএমের ভোটে কিছুটা ধীর গতি ‘হবেই’।
মঙ্গলবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে রংপুরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বসানো সিসি ক্যামেরায় মাধ্যমে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন সিইসি।
বেলা আড়াইটার দিকে (ভোট শুরুর ছয় ঘণ্টায়) নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ভোট পড়ার হারের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “কোথাও ৪৫ শতাংশ, কোথাও ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। গড়ে আমাদের এখানে ৪৫ শতাংশ ভোট কাস্টিং হয়ে গেছে।”
সিসি ক্যামেরায় কেন্দ্র পরিস্থিতি দেখে তিনি বলেন, “প্রচুর ভিড় আছে। যেহেতু ভোটটা স্লো হয়, বাহিরে প্রচুর ভিড় আছে এবং আগ্রহী ভোটারের সংখ্যা প্রচুর।
“আমরা বলে দিয়েছি- সাড়ে ৪টার মধ্যে যারা সীমানা মধ্যে থাকবে, রাত যতটাই হোক, তাদের সবার ভোট নিতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি এই ভোট পড়ার হার অনেকটা বাড়বে।”
আর বিকাল সাড়ে ৪টায় ভোট শেষে সিইসি বলেন, রংপুর সিটি নির্বাচন ‘অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ’ হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি ‘ব্যাপক’ ছিল. ‘স্বতস্ফূর্ত’ ছিল।
“ধীর গতির অভিযোগ অসত্য নয়। এখন যে অবস্থা দেখেছি অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। এটা শেষ করতে সাতটা আটটা পর্যন্ত গড়িয়ে যেতে পারে। শেষ হওয়ার পর একীভূত হওয়ার পর চূড়ান্ত হবে।”
২০১৭ সালের রংপুর সিটির আগের নির্বাচনে প্রায় চার লাখ ভোটারের মধ্যে মোট ২ লাখ ৯২ হাজার ৭২৩ জন ভোট দেন। ভোটের হার ছিল ৭৪.৩০%। সেবার মাত্র একটি কেন্দ্রের ছয়টি ভোটকক্ষে ইভিএমে ভোট হয়েছিল, যেখানে ভোটার ছিল দুই হাজারের বেশি। বাকি সব কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে নির্বাচন হয়।
বর্তমান ইসির অধীনে ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৫৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সেখানে সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হয়েছিল।
সিইসির স্বস্তি
রংপুরে ভোটগ্রহণ এবং ভোট দেওয়া– দুটোই ‘সুশৃঙ্খলভাবে’ হয়েছে মন্তব করে সিইসি বলেন, “ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ, আগ্রহ, উদ্দীপনা, আনন্দঘন পরিবেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রথম থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সহযোগিতা করে আসছে, তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে।”
তিনি বএলন, “কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, ঘটলেও মোকাবেলা করা সম্ভব। মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবেই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছে। কোনো রকম সংঘর্ষ, সংঘাত মোটেই নেই।
“একটা জিনিস খুবই সুখকর, সেটা হচ্ছে- মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে সংযমের সাথে দাঁড়িয়ে অবস্থান করছে। এটা একটা ভালো দিক।”
জাতীয় পার্টির প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে সিইসি বলেন, “জাপার একজনের ভোট দিতে অসুবিধা হয়েছিল, পরে ভোট দিয়েছেন। প্রার্থী তাৎক্ষণিকভাবে হয়ত দিতে পারেননি, পরপরই দিতে পেরেছেন। প্রযুক্তিতে প্রবলেম হতে পারে। এখানে কিছু মেকানিক্যাল প্রবলেম হয়ে থাকতেই পারে।
“আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বলে দিচ্ছি, সেনিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার (আঙ্গুলের ছাপ মেলাতে) করা হচ্ছে, কারও কারও মিলে যাচ্ছে, কারও কারও মিলছে না। তাদেরকে বলা হচ্ছে আপনারা পরে আসেন। যাদেরটা মিলছে না, তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে যাদেরটা মিলছে তাদের ভোট নিয়ে নিতে বলছি। যাদের মিলছে না, তাদের ভোটটা পরে নেওয়া হবে। এভাবে আমরা ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি।”
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা ইভিএম ‘হ্যাং’ হওয়ার যে অভিযোগ করেছেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, “আমরা বলেছি যে, ইভিএমের গতি অবশ্যই ব্যালটের চেয়ে ধীর হবে। এমনও হতে পারে এটা ইভিএমের সেকেন্ড জেনারেশন বা থার্ড জেনারেশন হতে পারে।”
ভোটগ্রহণে ধীর গতি নিয়ে সিইসির যুক্তি – “ইভিএমে ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাচিং করিয়ে, বায়োমেট্রিকস দিয়ে নিশ্চিত করার বিষয় রয়েছে। সেটা ব্যালটে থাকে না।
“এখানে একটা পজিটিভ বিষয় হচ্ছে, ইভিএমে কোনো রকম কারচুপি, একজনের ভোট আরেকজন দেওয়া এই জিনিসটা হচ্ছে না। এটা হচ্ছে ভালো দিক।”