মামলায় সাবেক সরকারের ছয় মন্ত্রী, এমপি এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালকসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
Published : 14 Aug 2024, 05:30 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে মিরপুরে গুলিতে কলেজছাত্র নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের নিহত শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজনের ভাই মো. রাজীব (৩২) বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের মামলার আবেদন করলে শুনানি নিয়ে হাকিম আহমেদ হুমায়ুন কবির অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে কাফরুল থানাকে নির্দেশ দেন।
এর আগে হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে একটি হত্যা ও আরেকটি অপহরণ ও নির্যাতনের মামলা।
শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজন হত্যার মামলার প্রথম আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে।
অন্য আসামিরা হলেন- হাসিনা সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এমপি মইনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান কচি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজি মেজবাউল হক সাচ্ছু, এমপি কামাল আহম্মেদ মজুমদার, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মানুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ নেতা সালামত উল্লাহ সাগর, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সদস্য দীপংকর বাছার দীপ্ত।
এ ছাড়াও এই মামলায় আওয়ামী লীগের আরও ৫০০ থেকে ৬০০ নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজন ঢাকার কাফরুল থানার ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। গত ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
বাদীর অভিযোগ, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রসমাজ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করলে আমার ভাই ফয়জুল ইসলাম রাজন আন্দোলনে একমত পোষণ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে শরিক হন।
ছাত্রজনতার গণআন্দোলনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ১ নম্বর আসামি শেখ হাসিনা ওয়াজেদ গত ১৪ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ‘রাজাকরের বাচ্চা’ বলে অভিহিত করেন। আসামি শেখ হাসিনার এহেন ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য দেশের সব গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়। আসামি শেখ হাসিনার এই উসকানিমূলক এবং অপমানজনক বক্তব্যের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আরও জোরদার করেন।
“এই পরিস্থিতিতে মামলার ২ নম্বর আসামি ওবায়দুল কাদের গত ১৫ জুলাই ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘আন্দোলনকারীদের মোকাবিলা করার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ মর্মে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে ছাত্রলীগ নামীয় সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ‘গণহত্যার নির্দেশ’ প্রদান করেন।”
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, “আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, হাসান মাহমুদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাইনুল হোসেন খান নিখিল, শেখ ফজলে শামস পরশ, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, খসরু চৌধুরীদের পরিকল্পনা ও প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় আন্দোলনকারীদের নিষ্ঠুরভাবে দমনের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের দেখামাত্র গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন।
“আসামিদের অবৈধ ও বেআইনি দিকনির্দেশনা পালনের উদ্দেশ্যে নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর জন্য নিজ নিজ বাহিনীর সদস্যদের ওপর নির্দেশনা প্রদান করেন আসামি পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন তথা র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ এবং ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান।”
বাদী অভিযোগ করেন, “শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হত্যার ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আসামির সরাসরি অংশগ্রহণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৬০০ নেতাকর্মীর সশস্ত্র অংশগ্রহণ, উপস্থিতি ও হামলায় ওই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর ১৯ জুলাই শুক্রবার হত্যার উদ্দেশ্যে নির্বিচারে গুলি চালালে আমার ভাই ফয়জুল ইসলাম রাজন মিরপুর-১০ গোলচত্বর সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে পাকা রাস্তায় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়। এদিন ফয়জুল ইসলাম রাজন ছাড়াও আরও অনেক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত এবং নিহত হন।”
এর আগে বুধবার সকালে শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেছেন এক আইনজীবী।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলার আবেদন করেন।
এই মামলায় মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, র্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদ এবং র্যাবের অজ্ঞাতপরিচয় ২৫ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া মঙ্গলবার শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয় ঢাকার আদালতে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে মোহাম্মদপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে এক দোকান মালিকের মৃত্যুর ঘটনায় ওই মামলা দায়ের করা হয়। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে মোহাম্মদপুর থানাকে নির্দেশ দেয়।
আরও পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবার 'অপহরণ-নির্যাতনের' মামলা
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ