অধিকাংশই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষতিকর আচরণ বন্ধে নিয়ম-নীতি কঠোর করার পক্ষে, বলেছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থাটি।
Published : 12 Feb 2025, 01:00 AM
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ভুল তথ্য’ ও ‘ভুয়া খবর’ তরুণদের মানসিক চাপের ‘সবচেয়ে বড় কারণ’, এমন মত উঠে এসেছে ইউনিসেফের এক জরিপে।
তার পরেই রয়েছে বুলিং (অপদস্থ বা হেয় করা) ও নেতিবাচক মন্তব্য, যাকে ‘সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা’ বলছেন তরুণ-তরুণীরা।
সোমবার ইউনিসেফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জরিপে উঠে আসা এই চিত্র তুলে ধরেছে।
নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের প্ল্যাটফর্ম ইউ-রিপোর্ট এই জরিপ পরিচালনা করেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
ইউনিসেফ বলছে, তরুণ-তরুণীদের নিয়ে করা এই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষতিকর আচরণ বন্ধে নিয়ম-নীতি কঠোর করার পক্ষে বলেছেন। আর নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস উপলক্ষে অনলাইনে শিশুদের অধিকারগুলো রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।
ইউনিসেফের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ জরিপে প্রায় ২৯ হাজার শিশু ও তরুণ-তরুণী অংশ নিয়েছে।
এদের দুই-তৃতীয়াংশ বলেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘খুব বেশি পরিমাণে ‘ভুয়া খবর’ ও ‘ভুল তথ্য’ মানসিক চাপ তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ।
বুলিং (অপদস্থ বা হেয় করা) ও নেতিবাচক মন্তব্যকে ‘সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা’ বলেছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় এক অষ্টমাংশ।
আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ক্ষতিকর বা মন খারাপ করার মত’ বিষয়বস্তু দেখাকে মানসিক চাপের প্রধান কারণ মনে করেন জরিপে অংশ নেওয়া ১৪ শতাংশ তরুণ-তরুণী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আধেয় বা বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়ম-নীতি থাকা প্রয়োজন কি না সে বিষয়ে জরিপে অংশ নেওয়া শিশু ও তরুণ-তরুণীদের কাছে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। এমন নিয়ম প্রয়োগ করলে মানুষ সত্যই কী ভাবছে, সেটা প্রকাশ করা বন্ধ করে দিতে পারে বলে মত দিয়েছেন ২৩ শতাংশ শিশু ও তরুণ-তরুণী। আর ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছে, বুলিং (অপদস্থ বা হেয় করা) ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারের মতো ক্ষতিকর আচরণ বন্ধ করার জন্য কিছু নিয়ম থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।
ইউনিসেফ বলেছে, প্রচলিত নিয়মগুলো শিথিল করা হলে কমিউনিটির অসহায় জনগোষ্ঠী ক্ষতির শিকার হবে বলে মনে করছেন ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা। ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করছেন, এর ফলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আক্রান্ত হতে পারে।
প্রচলিত নিয়ম শিথিল করা হলে শিশু ও তরুণ-তরুণীরা আক্রান্ত হবে বলে মনে করছেন ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ২৩ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, এর ফলে নারী ও কন্যাশিশুরা আক্রান্ত হবে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্ল্যাওয়ার্স বলেন, “ইতোমধ্যেই দুঃখজনক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে ভুল তথ্য ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের প্রভাব কেবল অনলাইন জগতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বাস্তব জীবনেও এর ভয়ংকর পরিণতি দেখা যায়, যা শিশুদের মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকিতে ফেলে। বিশেষ করে সেসব শিশুদের যারা ইতোমধ্যেই নানাবিধ বৈষম্যের শিকার, যেমন মেয়ে ও সংখ্যালঘু কমিউনিটির শিশুরা।”
তিনি বলেন, “আধুনিক বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা জানে যে, ডিজিটাল জগৎ যোগাযোগ, শেখা ও উন্মুক্ত আলোচনার জন্য সহায়ক সুযোগগুলো তৈরি করে দেয়। কিন্তু এখন তারা ঝুঁকিগুলোও বুঝতে পারছে, নিয়ম-নীতির ঘাটতির কারণে এই জায়গায় অনেকে নিজেকে অনিরাপদ মনে করছে।”
ইউনিসেফ বলেছে, জরিপে উত্তরদাতাদের অর্ধেকেরও বেশি বলেছেন যে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন যে ধরনের বিষয়বস্তু দেখছেন তাতে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। এর প্রভাব সম্পর্কে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। ১৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে তারা অনলাইনে কম নিরাপদ বোধ করছেন।
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “শিশু ও তরুণ-তরুণীরা যেন অনলাইনে সঠিক ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পায়, কীভাবে ভুল তথ্যের ভিড়েও সত্যটা বের করতে হয়, নিরাপদে অনলাইনে বিচরণ করতে হয়, ক্ষতিকর কনটেন্ট (আধেয়), বুলিং ও হয়রানি থেকে কীভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে হয় সেসব বিষয়ে যেন তারা সচেতন থাকে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সবার।
“এর মধ্যে নীতি-নির্ধারক, নিয়ন্ত্রক, বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানি, প্রশিক্ষক, বাবা-মা ও সেবাদাতা এবং যে তরুণেরা এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে তাদেরও এই দায়িত্ব রয়েছে।”
ইউনিসেফ বলছে, সংস্থাটি এমন এক পরিবেশ তৈরিতে সহায়তার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেখানে বাংলাদেশের শিশুরা ক্ষতিকর আধেয়, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ভুল তথ্য থেকে নিরাপদ বোধ করে। বৈশ্বিক ডিজিটাল পরিবেশে ক্রমশ জটিল হতে থাকা বাস্তবতায়ও কীভাবে শিশু ও তরুণ-তরুণীদের জন্য নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করছে সংস্থাটি।
শিশুদের সুরক্ষা, অনলাইনে তাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার অধিকার সমুন্নত রাখতে নীতি গ্রহণসহ তাদের অনলাইন তথ্য মূল্যায়ন বা যাচাই ও ভুল তথ্য শনাক্ত করায় দক্ষ করে তুলতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে নীতি-নির্ধারক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও প্রযু্ক্তি কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।