প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলছে, বিগত সরকারের শেষ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ‘অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ে’।
Published : 22 Aug 2024, 01:22 AM
আওয়ামী লীগের সরকারের বিদায়ের পর বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
শ্বেতপত্র প্রস্তুতে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠনের কথা বুধবার জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো শ্বেতপত্রের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি' নামে প্রস্তাবিত কমিটি আগামী ৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে।
“শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং এলডিসি থেকে উত্তরণে করণীয় বিষয়ে প্রতিফলন থাকবে।”
শ্বেতপত্রটি প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিটি বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও মতবিনিময় করবে।
দেশের অর্থনীতিকে সুসংহত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোর একটি তালিকাও প্রস্তাবে করেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
সেগুলো হল- অর্থনীতি পুনরায় সচল করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো নিরসনে কাঠামোগত সংস্কার; নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি; দুর্নীতি দূরীকরণ; ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা; কর ও শুল্ক নীতির সংস্কার এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সামগ্রিক চিত্র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার শুরুতেই সরকারের হাতে থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রস্তাবে।
সেখানে বলা হয়েছে, “গত প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে নিপতিত রয়েছে। বিগত সরকারের চরম অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থ-পাচার এবং অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশি- বিদেশি ঋণ গ্রহণ ইত্যাদি কার্যক্রমের কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে।
“অর্থ বিভাগের সূত্রে পত্রিকান্তরে প্রকাশ যে, পতনকালে শেখ হাসিনা সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের যে স্থিতি ছিল, তা বাংলাদেশের তিনটি বাজেটের মোট অর্থ বরাদ্দের সমান। অন্যদিকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কর আদায়ের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির চেষ্টা না করে, দেশি ও বিদেশি দুই ধরনের ঋণের প্রতি বিগত সরকার ঝুঁকেছিল।”
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, “সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপির তুলনায় কর সংগ্রহের হার ১৪ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও গত ছয় সাত বছরে এ অনুপাত ১১ শতাংশ থেকে উল্টো ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার এটি একটি দিক মাত্র।
“সামগ্রিকভাবে দুর্নীতি, অর্থ-পাচারের অবাধ সুযোগ, বাজার সিন্ডিকেট ইত্যাদির ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, গত জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বেশি, তা ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বলা যেতে পারে, বিগত সরকারের শেষ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ে।”
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলছে, “বিগত সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনার ফলে সৃষ্ট অর্থনীতির নজিরবিহীন নাজুক পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে।”
কমিটি গঠনের রূপরেখা সম্পর্কে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কমিটির সদস্যরা অবৈতনিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন; পরিকল্পনা কমিশন কমপ্লেক্সের যথোপযুক্ত কোনো ভবনকে কমিটির দপ্তর হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে; পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ওই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিতে পারে এবং সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর বা সংস্থা প্রস্তাবিত কমিটির চাহিদানুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করবে।
শ্বেতপত্রে যা থাকবে
>> সরকারি অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা: অভ্যন্তরীণ সম্পদ, সরকারি ব্যয় (বিনিয়োগ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, ভর্তুকি ও ঋণের সুদ পরিশোধ), ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন।
>> মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য পরিধারণ: উৎপাদন, সরকারি ক্রয় ও সরকারিভাবে খাদ্য বিতরণ ।
>> বহিঃলেনদেন ভারসাম্য: রপ্তানি, আমদানি, প্রবাসী আয়, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও ঋণ প্রবাহ।
>> বিদ্যুৎ ও জ্বালানি: চাহিদা, সরবরাহ, মূল্য নির্ধারণ, খরচ ও ক্রয় চুক্তি।
>> বেসরকারি বিনিয়োগ: ঋণ প্রাপ্তি, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও লজিস্টিকস।
>> কর্মসংস্থান: দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থান, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে মজুরি; যুব কর্মসংস্থান।