“তিতুমীর ইংরেজদের বিরুদ্ধে যতগুলো আন্দোলন করেছিলেন, তার মধ্যে সবচেয়ে সফল হল বারাসাত বিদ্রোহ,” বলেন এক আন্দোলনকারী।
Published : 03 Feb 2025, 07:19 PM
সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে যে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ চলছে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সেই কর্মসূচির নাম রেখেছেন ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’।
এই নামকরণের কারণ কী বা কোথা থেকেই এল এই শব্দবন্ধ তা নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল।
আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্য’র উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান মুক্তার বলছেন, “উপমহাদেশের প্রথম বীর মীর নিসার আলী তিতুমীরের সংগ্রামের সুর দিয়েই আমাদের পথচলা। ‘বাঁশেরকেল্লা গঠন কর, তিতুমীর স্বতন্ত্র কর,’ এই স্লোগানে আমাদের সংগ্রাম চলছে।”
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা তিতুমীরের নামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষালয়টির আন্দোলনকারীরা নিজেদের দাবি পূরণে এখন তার সফল ‘বারাসাত বিদ্রোহে’ উৎসাহ পাচ্ছেন।
ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান সোমবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মীর নিসার আলী তিতুমীর ইংরেজদের বিরুদ্ধে যতগুলো আন্দোলন করেছিলেন, তার মধ্যে সবচেয়ে সফল হল বারাসাত বিদ্রোহ।
“তার সে বিদ্রোহের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তর আন্দোলনের সড়ক ও রেলপথ অবরোধকে বারাসাত ব্যারিকেড বলে অভিহিত করছি।”
তিতুমীরের আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার লক্ষ্য হলেও পরবর্তীতে তিনিই হয়ে ওঠেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা। ১৮২২ সালে তিতুমীর হজ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় যান, শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন সৈয়দ আহমেদ শহীদের।
সেখান থেকে ফিরে ১৮২৭ সালে তিতুমীর গ্রামের দরিদ্র কৃষকদের সাথে নিয়ে জমিদার এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এছাড়া মুসলমানদের উপর হিন্দু জমিদারদের বৈষম্যমূলকভাবে আরোপিত 'দাড়ির খাজনা' এবং মসজিদের ওপর খাজনার তীব্র বিরোধিতা করেন।
সেখানে ইংরেজ, জমিদার, নীলকরদের হাতে নির্যাতিত কৃষকরা দলে দলে তিতুমীরের বাহিনীতে যোগ দেন। সেখানে তিনি তার অনুসারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলেন।
ব্রিটিশদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হন তিনি। ১৮৩১ সালের ২৩ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বারসাতের কাছে নারিকেলবাড়িয়ায় বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন, যা ইতিহাসে তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লা নামে খ্যাত।
প্রজাদের ওপর অত্যাচারের প্রতিকার তিতুমীর করতে চেয়েছিলেন শান্তিপূর্ণভাবে ও সমঝোতার মাধ্যমে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তিনি চব্বিশ পরগনার কিছু অংশ, নদীয়া ও ফরিদপুরের একাংশ নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। এই বিদ্রোহ ‘বারাসাতের বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহে ৮৩ হাজার কৃষক সেনা তিতুমীরের পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন।