“বাজারে গেলে মানুষ এখন আর হাসিমুখে ঘরে ফিরতে পারেন না,” বলেন তিনি।
Published : 23 Jan 2024, 09:55 AM
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে মশা-মাছির সঙ্গে তুলনা করে বড় সিন্ডিকেটগুলোতে শাস্তির আওতায় এনে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (প্রাইস রেগুলেটরি অথোরিটি) গঠনের দাবি করেছেন অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ।
বুধবার রাজধানীর মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এমএম আকাশ বলেন, “বাজারে গেলে মানুষ এখন আর হাসিমুখে ঘরে ফিরতে পারেন না। প্রতি মুহূর্তে সাধারণ মানুষ টের পাচ্ছেন যে, তার টাকার দাম কমে গেছে। যে হারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে আয় বৃদ্ধি পায়নি।
“ফলে বাজেট থেকে প্রথমে শখের পণ্য, পরে প্রয়োজনীয় পণ্য ছেঁটে ফেলে কায়-ক্লেশে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।”
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভাঙা ও সারাদেশে রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন করে সিপিবি।
দেশের নিত্যপণ্যের অস্থির বাজারে লাগাম টানতে গত বৃহস্পতিবার ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেয়। খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, প্রতিকেজি আলু ৩৫-৩৬ টাকা ও প্রতিকেজি পেঁয়াজের দর ৬৪-৬৫ টাকা বেঁধে দেওয়া হলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
পরিস্থিতি সামাল দিতে গত সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আর বুধবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, দাম নিয়ন্ত্রণে না এলেও আলু আমদানিরও সুপারিশ করা হবে।
সরকার নির্ধারিত দামে বাজারে পণ্য মিলছে না জানিয়ে এমএম আকাশ বলেন, “সরকার আলু, পেয়াঁজ, ডিম, সয়াবিন তেল ও চিনির দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রীয় গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস ও বেসরকারি সংস্থা সানেমের জরিপ অনুসারে বাংলাদেশে করোনাকালে দারিদ্র্যসীমার নিচে যারা নেমে গিয়েছিলেন তারা এখন পর্যন্ত সবাই দারিদ্র্যসীমার উপরে উঠে আসতে পারেননি। আমরা তাই আবার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ দারিদ্র্যের হারের মধ্যেই আছি। সরকারের কমিয়ে দেয়া ২০ শতাংশকেই যদি হিসাবে ধরি তাহলে এখন এই মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি লোক প্রয়োজনীয় ক্যালরির খাবার পাচ্ছেন না।”
ইউনিয়ন ব্যাংক অব সুইজারল্যান্ডের পরিসংখ্যান তুলে ধরে অধ্যাপক আকাশ বলেন, “বিলিওনেয়ার ক্লাবে এক বছরেই নতুন করে বাংলাদেশের ২৬ জন যোগ দিয়েছেন। কোনো কোনো লোকের আয় অত্যন্ত দ্রুত লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “শাসকগোষ্ঠী ও মুনাফালোভীরা মানুষের কথা ভাবছে না। আমাদের করোনা থেকে উদ্ধার সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই দেশের ভেতরে এবং বাইরে কয়েকটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করেছে। উৎপাদক পর্যায়ে যদি দাম কমিয়ে আনা যায় তাহলে পণ্যর দাম এমনিতেই কমে আসবে।”
দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে নৈরাজ্য মন্তব্য করে সিপিবির সভাপতি শাহ আলম বলেন, “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চর্চা জাতীয় সংসদে না থাকায়, জবাবদিহিমূলক সংসদ না থাকায় আজ এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।”
আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওপেন মার্কেট সেল, মার্কেটিং অপারেশন, টিআর ও কাবিখা কর্মসূচি চালু করার দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, সিন্ডিকেট ভাংগা, সারাদেশে রেশন ব্যবস্থা, ন্যায্যমূল্যের দোকান চালুসহ উৎপাদক ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তোলার দাবিতে আগামী ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, কোষাধ্যক্ষ ফজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)