“পোলাডা অনেক কষ্ট পাইতাছে, হেইডা কেমনে সহ্য করুম? আমি না মা,” বলেন তানিয়া আক্তার।
Published : 29 Jul 2023, 07:08 PM
রাজধানীতে বড় দুই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির বিষয়টি জানতেন না তানিয়া আক্তার। মাতুয়াইল মেডিকেলের পেছনের এলাকায় এক স্বজনের বাসায় দাওয়াতে এসেছিলেন স্বামী আর ননদকে নিয়ে। সঙ্গে ছিল তার এক বছরের শিশু সন্তানও।
স্বজনের বাসায় আনন্দের মুহূর্তটা তার দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় দাওয়াত শেষে বাড়ি ফেরার পথে।
শনিবার দুপুরে মাতুয়াইল ফুটব্রিজের সামনে এসেই বিরোধী দল ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান তারা। অনেক মানুষ যখন দিগ্বিবিদিক ছুটছিল, তারাও একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান।
এসময় পুলিশের ছোড়া কাঁদুনে গ্যাসের ধোঁয়া এসে লাগে তানিয়ার এক ছেলে শিশুর চোখেমুখে। তীব্র জ্বালাপোড়ায় শিশুটি কান্না শুর করলে গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয়রা তাদরকে কাছেই জ্বালানো আগুনের পাশে নিয়ে যান।
বিভিন্ন সংঘাত-সহিংসতার সময় তাৎক্ষণিকভাবে কাঁদুনে গ্যাসের ধোঁয়ার প্রভাব কাটাতে সাধারণত এভাবে আগুন জ্বালিয়ে তার পাশে অবস্থান করার পদ্ধতি ব্যবহার করেন সাংবাদিকরা; টোটকা এই পদ্ধতিই বিপদের সময় বেশ কাজে দেয়।
শনিবারও মাতুয়াইল এলাকায় পুলিশের কাঁদুনে গ্যাসের ধোঁয়ায় পুরো এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে যায়। সে সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশের অবস্থান থেকে কিছুটা দূরে সরে আগুন জ্বালান গণমাধ্যমকমীরা।
আগুনের চারপাশ ঘিরে থাকা গণমাধ্যমকর্মীরাই দেখতে পান ছেলে সন্তানকে নিয়ে মা তানিয়া আক্তার হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছেন। দ্রুত তারা দুজনকে আগুনের পাশে নিয়ে আসেন।
কিছুক্ষণ পর টিয়ারশেলের ধোঁয়া কেটে গেলে পাশের গলিতে চলে যান তানিয়া। তখনও শিশুর চোখ দিয়ে পানি আর নাক দিয়ে পানি ঝড়ছিল। কেঁদে কেঁদে শুধুই সে মায়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল আর মুখ লুকানোর চেষ্টা করছিল; তার দুই চোখে তখনও লেগে ছিল ভয়ের ছাপ।
এ সময় তানিয়া আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাইনবোর্ড এলাকায় থাকি। আইজ যে গ্যাঞ্জাম লাগব তা জানতাম না। আব্দুল্লাহর বড় চাচা দাওয়াত দিছিল, তাগো বাসা মাতুয়াইল মেডিকেলের পিছনে। সেই দাওয়াতে আসছিলাম। এহন ফেরত যাইতে লাগছিলাম।
“ফুটপাত দিয়াই হাইটা যাইতাছিলাম, লগে আমার ননদ আর স্বামীও আছিল। আচমকা শব্দের পর কোনহান থাইকা ধোঁয়া আইল বুঝি নাই। আমার চোখেমুখে লাগছে। সেইডা না হয় আমি কষ্ট পাইলেও সহ্য করুম। পোলাডা অনেক কষ্ট পাইতাছে, হেইডা কেমনে সহ্য করুম? আমি না মা।”
কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ার সময় স্বামী ও ননদ একদিকে আর তিনি সন্তানকে নিয়ে আরেকদিকে চলে আসেন বলে জানান তিনি।
শনিবার ঢাকার প্রবশেমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনির আখড়ায় জড়ো হয়েছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কিন্তু সেখানে পুলিশের উপস্থিতির কারণে তারা সরে যান মাতুয়াইল এলাকায়।
মাতুয়াইল মেডিকেল মোড়ে পুলিশ-বিএনপির দফায় দফায় চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। বিএনপি কর্মীদের ঢিলের জবাবে পুলিশও পাল্টা ঢিল ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা।
সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।
সংঘর্ষের এক সময়ে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় যাত্রাবাড়ি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাতুয়াইল এলাকা। এসময় এক কিলোমিটারের ব্যবধানে তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তবে বাস পোড়ানের ঘটনায় আহত হয়নি কেউ।
সংঘর্ষের কারণে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এ মহাসড়কে যান চলাচল করেনি। ঢাকার সঙ্গে নায়ারণগঞ্জ, নরসিংদী, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার যোগাযোগের এ সড়ক পথে মাতুয়াইল-যাত্রাবাড়ির দীর্ঘ দুই কিলোমিটার পথ ফাঁকা রেখে যানবাহনের সাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল।
ঘটনাস্থলে র্যাব, আনসার ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যরা এসে পৌঁছার পর বেলা আড়াইটার পর বিএনপি নেতাকর্মীরা পিকেটিং বন্ধ করলে মহাসড়ক ফেল সচল হয়।