“আমরা কোনো ঘটনায় এখনও সুরাহা পাচ্ছি না, ভুক্তভোগীরা সরাসরি আমাদের কাছে অভিযোগ করছেন। আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না”, বলেন সংগঠনের আহ্বায়ক।
Published : 05 Dec 2024, 07:03 PM
সম্প্রতি ধারাবাহিক ‘নির্যাতন-নিপীড়নের’ সঙ্গে ‘মিথ্যা মামলায় হয়রানি’তে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অতিষ্ঠ দাবি করে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চেয়েছে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশি মাইনোরিটিস বা এইচআরসিবিএম নামে একটি সংগঠন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন আহ্বায়ক আইনজীবী লাকী বাছাড়।
তিনি বলেন, "সারাদেশে যেসব ঘটনা ঘটছে, এরপর আবার নামে-বেনামে ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে সংখ্যালঘুদেরকেই হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা মামলার অবস্থা থেকে মুক্তি চাচ্ছি।"
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় গত ২৬ নভেম্বর শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থেকে আট জনকে থানায় নিয়ে মারধর করে পুলিশ। তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ৭-৮ ঘণ্টা পর তাদেরকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু গত ১ ডিসেম্বর পুলিশ ৫৫ জনের নামে এবং অজ্ঞাত আরও ৩০০-৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
লালমনিরহাট ও রংপুর বিভাগে ‘টার্গেটেড সহিংসতায়’ ভুক্তভোগীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বানোয়াট অভিযোগে সংখ্যালঘুদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, “খুলনার দাকোপ থানায় ‘মিথ্যা অজুহাতে’ আটক ভুক্তভোগীদের ভয়ভীতি ও আইনি হয়রানি করা হচ্ছে।”
এইচআরসিবিএমের আহ্বায়ক বলেন, “আমরা কোনো ঘটনায় এখনও সুরাহা পাচ্ছি না, ভুক্তভোগীরা সরাসরি আমাদের কাছে অভিযোগ করছেন। আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই, শান্তি চাই।”
গত ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর দিন চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার পরের ঘটনাও তুলে ধরেন তিনি।
লাকী বাছাড় বলেন, “চট্টগ্রামের ঘটনায় দলিত সম্প্রদায়সহ হিন্দু সংখ্যালঘুরা ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়নের সম্মুখীন। এ ঘটনায় ৫০০ থেকে ২১০০ জনের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা দায়ের করায় তাদের মধ্যে চরম অর্থনৈতিক ও সামাজিক দুর্দশা দেখা দিয়েছে।"
চিন্ময়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ দাবি করে তিনি বলেন, এর উদ্দেশ্য ‘হয়রানি’ করা।
“এর মাধ্যমে তাকে বাকরুদ্ধ করার অপকৌশলে সংখ্যালঘুরা ‘অস্তিত্বহীনতার সংকটে’ যখন ক্ষোভে ফেটে পড়ে, তখন সারাদেশে হাজার হাজার সংখ্যালঘুদের নামে ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ মামলা দেওয়া হয়।
“পাঁচ শতাধিকের উপরে ‘নিরীহ সংখ্যালঘুদের’ আহত করা হয়। শতাধিক ঘরবাড়ি লুটপাট করা হয়, সেবক কলোনিতে আগুন দেওয়া হয়, নারীদের ‘শ্লীলতাহানি’ করা হয় এবং বহু মন্দির ভাঙচুর করা হয়। চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবীদের নামে বহু মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করা হয়।”
চিন্ময়ের জামিন শুনানির দিন ‘নির্বিচারে’ পুলিশি ধর-পাকড়, চেম্বার ভাঙচুর ও প্রাণনাশের ‘হুমকি’ দিয়ে আইনজীবীদের আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন এইচআরসিবিএম আহ্বায়ক।
আগামী ২ জানুয়ারি ‘লিগ্যাল টিম’ গঠন করে চিন্ময় দাশের শুনানির ব্যবস্থা করার আহ্বানও জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে হৃদয় রবি দাশকে হত্যার কথা তুলে করে লাকী বাছাড় বলেন, “প্রান্তিক দলিত সম্প্রদায়ের হৃদয় রবি দাশের একটি মুসলিম মেয়ের সাথে নিছক প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে আইনপ্রয়োগকারীদের হাতে নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ‘বিচারবহির্ভূত সহিংসতার’ ন্যায়বিচার দাবি করছি।”
গত ১৫ নভেম্বর কিশোরগঞ্জে মারধরে আহত হয়ে পরদিন ভোরে হাসপাতালে মারা যান হৃদয় রবি দাশ।
লালমনিরহাট হাতীবান্ধা উপজেলায় শ্মশানের মন্দিরের জায়গাকে কেন্দ্র করে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। বলা হয়, “যেখানে পরবর্তীতে একজনের মৃত্যু হয়। বিষয়টি অবগত করার পরেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।”