Published : 30 Apr 2025, 03:50 PM
জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর গুলশানে ভ্যানচালক জব্বার আলী হাওলাদার হত্যাচেষ্টা মামলায় ছোট পর্দার অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমানকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্যাহ এ আদেশ দেন।
গুলশান থানার আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই মোক্তার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
সিদ্দিককে সকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আনার পর প্রথমে হাজতখানায় রাখা হয়। পরে রিমান্ড শুনানির জন্য তোলা হয় আদালতে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই আব্দুস সালাম সিদ্দিককে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহবুব আলম সিদ্দিকের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
তিনি বলেন, “এই আসামি সুশীল মানুষের ভূমিকায় থেকে আন্দোলনের সময় রাস্তায় থেকে যা খুশি করেছে। মামলার ভিকটিম গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়েছিল। তাকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেয়। এছাড়া সে বিভিন্ন সময় খালেদা জিয়াকে নিয়েও কটূক্তি করে। তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।"
সিদ্দিকের রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করে তার আইনজীবী জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, “আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। ঘটনার সাথে জড়িত না। তিনি তার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন। ছেলেটা অসুস্থ। তিনি নিজেও অসুস্থ। তার রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি।"
দুই পক্ষের আইনজীবীর শুনানি নিয়ে বিচারক এই অভিনেতাকে পুলিশ হেফাজতে সাতদিন রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর বেইলি রোড এলাকা থেকে তাকে আটক করে একদল যুবক। পরে সিদ্দিককে মারধর করে রমনা মডেল থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রমনা থানা পুলিশ পরে তাকে গুলশান থানায় নিয়ে যায়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই গুলশানের শাহজাদপুরে কনফিডেন্স টাওয়ারের সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছোড়া হয়। সে সময় গুলিবিদ্ধ হন ভ্যানচালক জব্বার আলী হাওলাদার।
ওই ঘটনায় গুলশান থানায় একটি মামলা করেন জব্বার। সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১০৯ জনকে আসামি করা হয়।
গুলশান থানার ওসি মাহমুদুর রহমান মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
যেভাবে গ্রেপ্তার সিদ্দিক
মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে কাকরাইল এলাকায় সিদ্দিককে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে একদল যুবক।
হামলার ঘটনার একাধিক ভিডিও ছড়িয়েছে ফেইসবুকে, যাতে ফুটপাত দিয়ে চলন্ত অভিনেতাকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে মারধর করতে দেখা যায়। এরপর জামা ছেঁড়া অবস্থায় তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় কয়েক যুবক।
পাশেই পুলিশ সদস্যরা থাকলেও শুরুতে নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় থাকেন। মারধরের একপর্যায়ে কয়েকজন পুলিশকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। তখন সিদ্দিক কাঁদছিলেন।
পরে তাকে থানায় সোপর্দ করার কথা নিশ্চিত করা হয় পুলিশের তরফ থেকে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশানের শাহজাদপুর এলাকায় সিদ্দিকের বাসা ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটে বলে স্বদেশ প্রতিদিনের খবরে বলা হয়।
সেখানে বলা হয়, ঘটনার সময় অভিনেতা সিদ্দিক বাসায় অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে ওই বাসার সামনে অবস্থান নেন স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তখন স্বজনদের সহযোগিতায় একটি গাড়িতে করে পালিয়ে যান তিনি। পরে অভিনেতার এক স্বজনকে মারধর করা হয়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে জয়ী হন প্রয়াত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা হলে উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন সিদ্দিক। পরে নৌকা প্রতীকে সেখানে মোহাম্মদ আলী আরাফাত নির্বাচিত হন।
সেবার ভোটের টিকেট না পেয়ে ফেইসবুক লাইভে এসে ‘মন ভালো করতে’ দুবাই বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে আলোচনায় আসেন সিদ্দিক। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ওই আসনের পাশাপাশি জন্মভূমি টাঙ্গাইল-১ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন পাননি।
আরও পড়ুন:
অভিনেতা সিদ্দিককে হত্যাচেষ্টার মামলায় রিমান্ডে চায় পুলিশ
অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর, পুলিশে সোপর্দ
দুই আসনে নৌকার মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন অভিনেতা সিদ্দিক