তিনি বলেন, “অফিস দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, না দিলে হবে না, এটা মনে করার কোনো কারণ নাই।”
Published : 30 Oct 2024, 06:20 PM
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা একদিন আগে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা জানালেও ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
ওই কার্যালয় খোলার বিষয়ে সম্মতি-অসম্মতি বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “সম্মতি এবং অসম্মতি কিন্তু একসাথে হতে পারে না। সম্মতি এবং অসম্মতির প্রশ্ন আসে যখন, তখন বুঝতে হবে যে বিষয়টা নিয়ে আসলে আলাপ-আলোচনা চলছে অথবা এটা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এটাই বাস্তব অবস্থা।
“আসলে এখন কোনো সিদ্ধান্ত এই পর্যন্ত হয় নাই যে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অফিস দেওয়া হবে; দেওয়া হবে না এটাও বলা হয়নি। আমরা বিষয়টা এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি।”
মঙ্গলবার সফররত জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ফলকার টুর্কের সঙ্গে তিন উপদেষ্টার বৈঠকের পর সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছিলেন, “একটা খুব বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের একটা কার্যালয় চালু হবে।
“অফিসটা চালু হলে যে সুবিধাটা আমাদের সবচেয়ে বেশি, সেটা হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে ক্ষেত্রগুলো, ওরা সরাসরি তদন্ত করতে পারবে।”
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে একই বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও ছিলেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে সপ্তদশ দেশ হিসেবে ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের এমন কার্যালয় হতে যাচ্ছে।
বর্তমানে যেসব দেশে মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চাদ, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, গিনি, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, নাইজার, ফিলিস্তিন এবং সিরিয়া।
কার্যালয় খোলার প্রস্তাব আছে কি না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “প্রস্তাব বলতে কী বোঝান সেটার ওপর নির্ভর করবে। আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিতভাবে কোনো প্রস্তাব দেয়নি কিন্তু কথাবার্তা হয়েছে।”
কার্যালয়টি চালু হলে সব ঠিক হয়ে যাবে, তা না হলে বেঠিক থাকবে- এমন বিষয় আছে কি না জানতে চাওয়া হয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে।
তিনি বলেন, “অফিস দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, না দিলে হবে না, এটা মনে করার কোনো কারণ নাই। খুব অল্প কিছু দেশেই জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস আছে।”
কার্যালয় খুলতে দিলে সমস্যা কোথায়, এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “এটা এভাবে না বলে আমরা দেখি যে, আমাদের প্রয়োজন আছে কি না।”
জুলাই-অগাস্টে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত কমিটি ও অফিস খোলাকে ‘সম্পর্কিত’ বিষয় হিসেবে মনে না করার কথাও বলেন তিনি।
“সুনির্দিষ্ট কারণে, কাজে আমরা তাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি আসার জন্য। সার্বিকভাবে তো মানবাধিকার নিয়ে আমরা জানি যে, সমস্যা ছিল এবং আমরা আসলে এই সমস্যাগুলোর সমাধান চাই। বিশেষ করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেটা করছে, তাদের অন্যতম বিষয়ই হচ্ছে, মানবাধিকার যেন লঙ্ঘিত না হয়। আমরা তাদেরকে বলেছি্, আপনাদের এবং আমাদের লক্ষ্য একই; আমরা কীভাবে পরস্পরকে সহায়তা করব সেটা পরবর্তীতে দেখা যাবে।”
জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এক মাস হয়ে গেছে। প্রতিবেদন দিতে আরও এক মাস সময় লাগবে। বাংলাদেশে চার সপ্তাহ সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে ঘটনা ঘটেছে, সেটার ওপর তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করছেন।”
কোন সময় ধরে তদন্ত হচ্ছে, জানতে চাইরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা খোলামনে ছিলাম। বলেছি, আপনারা যা দেখতে চান দেখুন। যখন আমার সাথে দেখা করতে আসে, তখন বলেছিলাম, ‘আমি বা আমার লোকজন আপনার সাথে যোগাযোগ করবে না। আপনারা স্বাধীনভাবে করতে থাকুন কাজ। আপনাদের যদি কোনো প্রয়োজন অথবা সহযোগিতা লাগে, আমাদেরকে বা মিনিস্ট্রিকে জানাবেন, তারা সেভাবে হেল্প করবে’। এটাই তাদেরকে বলেছিলাম।
তদন্তের সময়সীমার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা বাধা দিব না কোনো তদন্তে। ৫ অগাস্টের পরেও যদি কিছু ঘটে থাকে, তারা তদন্ত করতে পারে।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়ার বিষয়ে ফলকার টুর্কের সঙ্গে বৈঠকে ‘সুনির্দিষ্টভাবে’ আলোচনা না হওয়ার কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।