বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ ও পানি পরিশোধন ব্যবস্থায় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন আলোচকরা।
Published : 27 Jan 2025, 12:04 AM
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুপেয় পানির সংকটের পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ার ফলে নারীদের ওপর তার প্রভাব পড়েছে, এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনে।
সেখানে বলা হয়েছে, এই সংকট সমাধানে পানি বণ্টন নীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
রোববার পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতের একটি রিসোর্টে শুরু হওয়া ‘দশম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন’ এর প্রথম দিনের সর্বশেষ অধিবেশনে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ ও পানি পরিশোধন ব্যবস্থায় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন আলোচকরা।
এছাড়া ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, পানির ঘাটতি এবং রোগের বর্ধিত প্রকোপ সম্পর্কিত স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ জলবায়ু পরিবর্তনে স্বাস্থ্যের প্রভাব মোকাবিলায় নীতি গ্রহণের কথাও বলেছেন তারা।
স্কুল থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষার উন্নতি, স্বাস্থ্যবিধি, পানিবাহিত রোগ, প্রজনন স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং টেকসই অনুশীলনে জোর দিয়েছেন আলোচকরা।
জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত এবং নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতে প্রচারণায় গুরুত্ব আরোপ করে সরকারের পক্ষ থেকেও এসব খাতে ভর্তুকি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এ অধিবেশনে ‘পানি ব্যবস্থাপনায় নারীবাদী দৃষ্টিতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্ষমতার সম্পর্ক মূল্যায়ন’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ নেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. সুফিয়া খানম, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের পলিসি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রিসার্চ ম্যানেজার তামাজের আহমেদ, ভারতের ওয়াটার রিসোর্সেস কাউন্সিল অব দ্য উইমেনস ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ড. মানসী বাল ভার্গব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইয়াং হুই ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাহমিনা আক্তার রাইনা।
‘পানির ভূ-রাজনীতি এবং সমুদ্রের ভবিষ্যৎ’- স্লোগানে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে পানি কূটনীতির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর অলটারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ।
আন্তঃসীমান্ত নদীর ব্যবস্থাপনা ও পানি বণ্টন বিষয়ে তিনি বলেন, “সংকট কাটিয়ে উঠেছে এখানে নতুন সুযোগ এবং আশা রয়েছে। ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন বিষয়ে দ্বি-রাষ্ট্র আলোচনার বাইরে যেতে হবে।
“এ আলোচনায় চীন এবং অন্যদের যুক্ত করতে হবে। আমরা যখন তাদের তিস্তা নদী বিষয়ে বললাম, তারা সহায়তা করেনি। এখন চীন যখন বাঁধ নির্মাণ করছে, তখন তারা আমাদের আলোচনায় ডাকছে।”
তিস্তায় সিকিম থেকে ৩৪টি বাঁধ রয়েছে তুলে ধরে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, সেখানে প্রতিটি বাঁধ ৫ শতাংশ করে পানি কমিয়ে দেয়।
“বাঁধ হলে সেখানে নতুন করে বসতি এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ড সৃষ্টি হয়। ফলে পানি কমতে থাকে। এভাবে হলে তো শেষ পর্যন্ত পানি থাকার কথা না, তাই হচ্ছে এখন। এসব বাঁধ নির্মাণে বিশ্বব্যাংকও অর্থায়ন করেছে।”
বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ে মমতার দাবি যৌক্তিক মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তাদেরও পানি দরকার।”
বাংলাদেশের নদীগুলো খননের প্রস্তাবনা যৌক্তিক মন্তব্য করে তাতে তিনি একমত বলেছেন।
একই সঙ্গে খালগুলোও খনন করা যেতে পারে তুলে ধরে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “খননের ফলে নদীগুলোর পানি ধারণ বাড়বে, সেটি শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা যেতে পারে।
“সেজন্য আমাদের নীতি, গবেষণা এবং বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের ‘আউট অব দ্যা বক্স’ চিন্তা করতে হবে।"
অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডের পানি, জ্বালানি ও জলবায়ু বিষয়ক লিড স্পেশালিস্ট ড. জন ডোর বলেন, এক্ষেত্রে ন্যায্যতার নীতিতে যাওয়া উচিত।
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর অভিন্ন পানি প্রবাহ নিশ্চিতে ম্যাকং নদী কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো আমলে নেওয়া যেতে পারে।
“এক্ষেত্রে গবেষণা এবং যোগাযোগ বাড়াতে কাজ করা যেতে পারে।”
সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একশনএইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির।
রোববার সম্মেলনের প্রথম দিনে ‘তিস্তা ও সীমান্তবর্তী নদীসমূহের ভবিষ্যৎ’, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয় উদ্ভাবন’, ‘জলবায়ু ভবিষ্যৎ’, ‘পানি অর্থায়ন এবং পানি কূটনীতির ভূমিকা’ নিয়ে আলোচনা হয়।
দেশের নদী-উপনদীগুলো নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে নানা সংকট এবং করণীয় বিষয়গুলো। বক্তারা বলেন, আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর নাব্যতা এবং প্রবাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনে নদীর উৎস দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে।”
এ ক্ষেত্রে ভারতের পাশাপাশি চীন ও নেপালকেও সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে সম্মেলন থেকে।
পানির নায্য বণ্টন নিশ্চিতের দাবিসহ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবারে আলোচ্যসূচিতে থাকছে ‘পানি বিষয়ক শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্তকরণ’, ‘সহযোগিতার ভূ-রাজনীতি এবং ‘সমুদ্র ও পানিসম্পদ রক্ষা’ এর মত বিষয়গুলো।
সম্মেলন থেকে পাওয়া সুপারিশ এবং প্রস্তাবনাগুলো পরবর্তীতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরা হবে।
দেশের পানিসম্পদ ও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের চিন্তার প্রসার, উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ, বিভিন্ন ধরনের সংলাপকে উৎসাহিত করা, জোট গঠন, আন্তঃসীমান্ত কার্যক্রমে উৎসাহ দিতে ২০১৬ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন আয়োজন করে আসছে একশনএইড বাংলাদেশ।