কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন বলেন, “আমরা আশা করছি, সরকার আমাদেরকে ইতিবাচক খবর দেবে।”
Published : 30 Dec 2024, 07:02 PM
এক মাস বিরতি দিয়ে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ফের চালু হবে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র পরিচালিত ‘ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি’।
কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা তো চাই, এটি বন্ধ না হোক। বর্তমান সরকারও যথেষ্ট আন্তরিক। আমরা আশা করি ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের চালু হবে ‘ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি’। এর আগে জানুয়ারি মাসে লাইব্রেরি কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।”
সরকার অর্থ বরাদ্দ না করলেও কি কেন্দ্র লাইব্রেরি কার্যক্রমটি চালিয়ে নেবে- এমন প্রশ্নে শামীম আল মামুন বলেন, “আমরা আশা করছি, সরকার আমাদেরকে ইতিবাচক খবর দেবে। এখন দেখা যাক।”
গত শতকের শেষ বছর ১৯৯৯ সাল থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি পরিচালনা করে আসছে। এ প্রকল্পের তৃতীয় পর্ব শেষ হচ্ছে চলতি বছরের শেষ দিন মঙ্গলবার।
ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্প চালিয়ে নিতে সরকারের কাছ থেকে নতুন করে অর্থ বরাদ্দের খবর এখন পর্যন্ত মেলেনি। আর টাকার যোগান না পেলে লাইব্রেরির কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিপুল ব্যয়ভার চালিয়ে নেওয়ার ‘সঙ্গতি নেই’ বলে সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।
তাই কার্যক্রমটি আপাতত ‘স্থগিত করার চিন্তা করছে’ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। এই খবরে মন খারাপ করেছেন বইপ্রেমী বহু মানুষ। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি বন্ধের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এ কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বই পড়ুয়ারা।
ঢাকার বাংলা মোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সামনেও লাইব্রেরি বন্ধ না করার দাবিতে বই পড়ুয়া এবং লাইব্রেরি সংশ্লিষ্টরা শনিবার থেকে অনশন শুরু করেন। তারা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সংস্কারেরও দাবি তুলেন।
মধ্যরাতে অনশন প্রত্যাহার
ভ্রাম্যণন লাইব্রেরি ফের চালুর আশ্বাস পেয়ে রোববার মধ্যরাতে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন লাইব্রেরি কর্মীরা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সামনে অনশনরত কর্মীদের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙার অনুরোধ করেন কেন্দ্রের ট্রাস্টি ইফতেখারুল ইসলাম।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদসহ কেন্দ্রের কর্মকর্তারাও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের লাইব্রেরি কর্মকর্তা আজাদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদেরকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে লাইব্রেরি ফের চালু হবে। আমরা রাতে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছি।”
কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন বলেন, “ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কিছুসংখ্যক কর্মী দাবি করছেন যে, প্রকল্পের কর্মকাণ্ড একদিনও স্থগিত না রেখে এটিকে অব্যাহতভাবে চালিয়ে যেতে হবে। তারা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অনশন কর্মসূচি পালন করেছে। “সেই প্রেক্ষিতে এবং পাঠকদের কথা বিবেচনা করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি সেবা কার্যক্রম চালু করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। এতে কর্মীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।"
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভাষ্য, “আগামী ৩১ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের তৃতীয় পর্ব শেষ হচ্ছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পুনরায় এই কার্যক্রমে অর্থায়ন করার আভাস পাওয়া গেছে। কিন্তু প্রকল্পের নতুন পর্বের অনুমোদন পেতে কিছুটা সময় লেগে যাবে। ফলে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ এর পর এই কার্যক্রমটি কিছুদিনের জন্য স্থগিত রাখতে হবে।”
‘আলোকিত মানুষ চাই’ প্রতিপাদ্যে মানুষের হাতে বই পৌঁছে দিতে মাত্র কয়েকটি গাড়ি নিয়ে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির পথচলা শুরু করেছিল ২৫ বছর আগে।
বর্তমানে লাইব্রেরির গাড়ির সংখ্যা ৭৬টি। এই গাড়িগুলো দেশের ৩ হাজার ২০০টি এলাকায় বই দেওয়া-নেওয়া করে। যাকে ৩ হাজার ২০০টি ছোট লাইব্রেরিও বলা চলে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বলছে, এই লাইব্রেরির নিয়মিত ও অনিয়মিত পাঠক সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ।
১৯৯৯ থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এককভাবে এই লাইব্রেরির যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করেছে।
এরপর ২০১৮ সাল থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই কর্মযজ্ঞে অর্থায়ন শুরু করে, ফলে এর পরিসরও বৃদ্ধি পায়।
২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির অনুমোদিত মেয়াদে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ১১১ কোটি ১৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
'আলো আমার আলো' বাজিয়ে চলা ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কি থেমে যাবে?
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি বন্ধ না করার দাবি