একজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খুব শিগগির নিয়োগ করার কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
Published : 22 Aug 2024, 01:08 AM
বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়া অর্থ ফেরাতে দেশটির সহযোগিতা চেয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ কুক সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তার মাধ্যমে দেশটির সরকারের কাছে এই সহযোগিতা চান প্রধান উপদেষ্টা।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “প্রচুর মানুষ আগের রেজিমের, এরা যে অনেক টাকা মানি লন্ডারিং করেছে, সেটার বিষয়ে, এটাকে ট্র্যাক করা বা এই টাকাটা ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের হেল্প চেয়েছেন।
“আপনারা জানেন, ব্রিটেনে প্রাক্তন সরকারের অনেকে বাড়িঘর করেছেন। তো, টাকাটা কীভাবে গেল? এটা একটা বড় প্রশ্ন। সে বিষয়ে যে মানিটা লন্ডারিং হয়েছে, সে মানিটা কীভাবে ফেরত নিয়ে আসা যায়, সেজন্য ব্রিটিশ হাই কমিশনারের কাছে উনি সাপোর্ট চেয়েছেন।”
ব্রিটেনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বাড়িঘর নিয়ে ব্লুমবার্গে করা প্রতিবেদনের বিষয় তুলে ধরে করা এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, “পাচার হওয়া টাকাটা আনা খুব কঠিন। তবে উনি বলেছেন, উনারা দেখবেন, যাতে হেল্প করা যায়।“
সুনির্দিষ্ট কারও বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “পাচার করা টাকার বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নামের বিষয় না। এখান থেকে যে টাকাটা চলে গেছে, সেটা ব্রিটেনে হতে পারে, এটা আমেরিকায় হতে পারে, এটা কেম্যান আইল্যান্ডে হতে পারে।
“আপনি জানেন, অফশোর অনেক জায়গা আছে, যেখানে মানুষ টাকা পার্কিং করে। টরন্টোর বিষয়ে আমরা অনেক রিপোর্ট দেখেছি, বেগম পাড়া নিয়ে। তো, যে টাকাটাই চলে যাক না কেন, সেই টাকাটা ট্র্যাক করা এবং সেই টাকাটা ফিরিয়ে আনা।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব জায়গা থেকে পাচার করা অর্থ ফেরাতে চায় মন্তব্য করে শফিকুল আলম বলেন, “এই টাকাটা তো আসলে চুরি করা টাকা। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ব্লান্ডার করে ওরা এই টাকাটা বাইরে পাঠিয়েছে।
“এই টাকাটা আনার বড় ইচ্ছা এই সরকারের। আমরা চাই যে, এই টাকাটা ফিরে আসুক। বাংলাদেশের জনগণের উপকারে কাজে লাগুক।”
নাইজেরিয়াসহ কয়েকটি দেশ পাচার করা অর্থ ফেরাতে পেরেছে বলে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “অনেক দেশে হয়েছে। তবে, এটাতে সময় লাগে একদিনে হয় না।”
ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, “ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। সারাহ কুক বলেছেন, তিনি বিষয়টা দেখবেন।
“আপনারা জানেন, ব্রিটেন হচ্ছে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি গন্তব্য। উনি আশা করেছেন, ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীরা দায়িত্ববান হয়ে বিনিয়োগ করবেন।”
শফিকুল আলম বলেন, “সারাহ কুক বলেছেন, ব্রিটেন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবেই গভীর। তার একটা বড় কারণ, আমাদের প্রচুর ব্রিটিশ বাংলাদেশি, সাত লাখের মতো। তারা ব্রিটিশ সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তারা নানা অবদান রাখছেন।”
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগের উদ্যোগ
সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকের আলোচনায় বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয় ওঠার কথা তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, “উনি (প্রধান উপদেষ্টা) এটাও বলেছেন, একজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খুব শিগগিরই নিয়োগ হবে।”
গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বলেও ব্রিফিংয়ে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, শেখ হাসিনার সময়ে প্রচুর লোক ‘গুম’ হয়েছে, একটা মানবাধিকার সংগঠনের হিসাবে তাদের সংখ্যা সাতশ’র বেশি ছিল। তার মধ্যে দেড়শ’র বেশির এখনও কোনো হিসাব নাই। এটা নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে অনেক বক্তব্য এসেছে।
“আমরা উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বলতে পারি, খুবই দ্রুত এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক কনভেনশন আছে, আগের সরকার এটাতে সই করেনি, আমরা সই করব। ৩০ অগাস্ট গুমের শিকার মানুষদের আন্তর্জাতিক দিবস। ৩০ অগাস্টের আগেই এটা সই হবে।”
গুম নিয়ে একটা কমিশন করতে সরকারের চিন্তাভাবনা করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কেবিনেটে এই আলাপটা উঠেছে এবং এটা নিয়ে জোর দাবি আছে, ‘মায়ের ডাক’, এদের থেকে।
“আমরা এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, প্রত্যেকটি ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তির ঘটনা তদন্ত হবে, প্রত্যেকটা। গুমের ঘটনায় শ্রীলঙ্কাতে একটা কমিশন আছে, আপনারা জানেন। আমরা এটা দেখবে যে, বাংলাদেশও ওই আদলে একটা করতে পারে কিনা।”
তিনি বলেন, “মন্ত্রিসভায় মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা আছেন। তারা ভাবছেন। আপনারা খুব দ্রুতই এটা নিয়ে একটা ঘোষণা পাবেন।”
বন্যা প্রসঙ্গে
তিন জেলায় বন্যা মোকাবেলায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তুতি থাকার বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি, তিনটা বড় বড় জেলা, কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং ফেনী খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে, উনি বলেছেন যে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে, বন্যা মোকাবেলার।
“এটাতো মূলত বৃষ্টির কারণে হয়েছে, আবহাওয়া অফিস বলেছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা ২৬ অগাস্ট পর্যন্ত থাকবে। এই সময়ে খুব ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। খুব দ্রুত বন্যা ঠিক হয়ে যাবে, এটা আমি কারও কাছ থেকে শুনিও নাই। তবে, আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে।”
প্রেস সচিব বলেন, ফেনী থেকে একটা প্রতিবেদন এসেছে, প্রায় ১ লাখ লোক বন্যার প্রভাবে পড়েছে, ১৬০০ লোক আশ্রয় নিয়েছে, বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে।
“পর্যাপ্ত ওষুধ, খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি, কিন্তু বিস্তারিত এখনও পাইনি।”
’বর্তমান বাংলাদেশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানের মত’
এদিন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপানের সঙ্গে তুলনা করার কথা ব্রিফিংয়ে বলেছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
জাপানে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ, যুদ্ধ বিধ্বস্ত হওয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের পুনর্গঠনের সঙ্গে বাংলাদেশের পুনর্গঠনকে তুলনা করেছেন। এবং উনি মনে করেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবার নিজেকে পুননির্মাণ করবে।”
অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে অভিহিত করে জাপানি রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, “বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে তাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও শক্তিশালী হবে। আর বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিষয়ে বলেছেন। এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেছেন।”
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের কথা তুলে ধরে শফিকুল বলেন, “উনি আশা প্রকাশ করেছেন, জাপান খুব বড় রকমের অর্থনৈতিক সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশকে। উনি বলেছেন যে, উনি যে সরকারকে উত্তরারিধারী, এটা একটা ভেঙে পড়া একটা দেশকে উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছেন।
“সেজন্য এটার পুনর্গঠনে প্রচুর অর্থায়ন দরকার। সেজন্য উনি জাপানের কাছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা চেয়েছেন।”