“আমরা আলোচনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম। আমরা সহিংসতার ফলে যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর বিচারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম।”
Published : 04 Aug 2024, 07:01 PM
সন্ত্রাস ও সহিংসতা চালিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, প্রয়োজনে শক্তহাতে সন্ত্রাস দমন করা হবে।
তিনি বলেছেন, দেশে সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করলেই দাবি-দাওয়া পূরণ করা সম্ভব।
সরকারের অবস্থান জানিয়ে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে আরাফাত বলেন, “আমরা সংঘাতে যেতে চাই না। একই সাথে এটাও বলে রাখছি, সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস করলে আইনের প্রয়োগও ঘটাতে হবে।”
রোববার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের টানেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কথা বলছিলেন আরাফাত।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আন্দোলন কিন্তু আন্দোলনের জায়গায় নাই, এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এখন সন্ত্রাস, সহিংসতায় চলে যাচ্ছে। আমাদের কিন্তু শান্তির পক্ষে অবস্থান ছিল। আমরা আলোচনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম। আমরা সহিংসতার ফলে যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর বিচারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম।”
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলন এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার আহ্বান উপেক্ষা করে শনিবার সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সেই অসগযোগের প্রথম দিন রোববার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত ও প্রাণহানির খবর আসছে।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে আরাফাত বলেন, “কোটা, অধিকার এগুলো কিন্তু তাদের আসল জায়গায় তারা নাই। তারা কী চাচ্ছে কালকে বলেছে। বোঝা যাচ্ছে। পরিষ্কার কিন্তু একদম। এই ঘোষণা দেওয়ার পর তারা এটা অর্জন করতে চাচ্ছে সন্ত্রাস এবং সহিংসতার মাধ্যমে। যদি তা না হয় তাহলে কেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে হামলা করতে হবে? সাধারণ মানুষ কিন্তু তাদের বিপক্ষে যাচ্ছে এবং যাবে। এটাই বাস্তবতা।
“অনেকেই বলে যারা আহত-নিহত হয়েছেন, এদের মধ্যে অনেক শিশুরাও ছিল। শিশুদের জন্য মনঃকষ্ট অনেকের আছে। অনেকে কেঁদেছেন। অনেকে রাস্তায় মিছিলে কেঁদেছেন, অনেকে টিভি ক্যামেরার সামনে কেঁদেছেন; আমরা দেখেছি।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন “এই যে মৃত্যুগুলো, এগুলো আমাদের কী করতে হবে? বিচার করতে হবে। ইনভেস্টিগেট করতে হবে। জানতে হবে, কারা এই হত্যাগুলো করেছেন। আমার কথা হল এই শিশুগুলো সরকার পতনের আন্দোলন তো করছিল না। এই শিশুগুলো বেঁচে থাকলে সরকারের কি ক্ষতি হত? তাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সরকারের কী লাভ হয়েছে? আমি সাধারণ মানুষকে তাদের বিবেকের কাছে এই প্রশ্নগুলো করতে চাই।
“আপনারা চিন্তা করে দেখবেন। এবং ঘরে বসে থাকা নারী, তারা তো ঘরে বসে ছিলেন। এই মৃত্যুগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে কারা এটার সুবিধা নিচ্ছে এবং বেনিফিট নিয়েছে, মানুষকে উস্কে দিয়েছে? এবং কারা উস্কে দিয়ে মানুষকে এক ধরনের বিপথে পরিচালিত করেছে?
সরকারও ‘বিচার চায়’ জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন আপনি বিচার চাইবেন, আমরা সবাই বিচার চাই। কিন্তু আপনি রায় দিয়ে দিচ্ছেন তো। তার মানে আপনি বিচার চাচ্ছেন না। আমরা বলেছি বিচার চাই, সেজন্য একটা বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন করা হয়েছে। কমিশন আজকে কাজ শুরু করেছে। আজকে তারা রংপুরে গেছে।
“কমিশন কিন্তু বিদেশি এক্সপার্টদের আনছে। তারা কিন্তু এই তদন্তে ঢুকবে। তারা বলবে কিন্তু তদন্তে কী আসছে কী আসছে না। একেবারে স্বচ্ছতার সাথে। তদন্তের পর আমি জানব, কে কীভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ভেতরে কেউ মেরে দিল কিনা, আন্দোলনকে উস্কে দেওয়ার জন্য নাকি পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এমন মৃত্যুও আছে, যারা আগুনে ঝলসে যাদের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না। তো আগুন তো দিয়েছিল সেই বিক্ষোভাকারীরাই। সেই আগুনে পুড়ে বিল্ডিং পুড়ে গেছে, মানুষও মরে গেছে। সেই দায় আপনি সরকারকে দিবেন? এরকম বিভিন্নভাবে মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে।”
আরাফাত বলেছেন, 'আমরা সন্ত্রাস এড়ানোর জন্য আলোচনার দরজা খোলা রেখেছি। আমরা সংঘাতে যেতে চাচ্ছি না। কিন্তু এও বলতে চাই সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস করলে আইনের প্রয়োগও ঘটাতে হবে। অশান্তি সৃষ্টি করা হলে তা শক্তহাতে দমন করা হবে। আমরা সন্ত্রাসকে দমন করবো।'
ব্রিটেনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “সাউথপোর্টে গুজবের ওপর ভিত্তি করে যে সংঘর্ষ হয়েছে, সেখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ‘দ্যা রায়েটার্স উইল ফেস ইনফোর্স অব ল’। মানে সন্ত্রাস দমনে আইনের পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ করা হবে। এটা ব্রিটেন বলছে। গোটা দুনিয়াতেও এটা হয়। আমাদেরও কথা হচ্ছে আইনের প্রয়োগ হবে। আমরা সন্ত্রাসকে দমন করবো।”
সরকার পতনের এক দফা দাবি বিষয়ে এক প্রশ্নে আরাফাত বলেন, “এটা বিএনপির আগেরই দাবি। বিএনপি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। আন্দোলনকারীরা বিএনপির সঙ্গে একাক্মতা প্রকাশ করেছে। এখন আর তারা আলাদা থাকল না। এটা বিএনপি-জামায়াতের জোট হয়ে গেল। প্রকৃতপক্ষে এত দিন তাদের দাবি ছিল কোটা। সেটা পুরন হল। তারপর দাবি ছিল আলোচনা, সেটার দ্বার খুলে দেওয়া হলো।
“দাবি ছিলো বিচার সেটাও পুরণ হচ্ছে। তাদের সকল দাবি পুরণ হয়ে গেল। তারপর এখন তাদের এক দফার দাবি। এখন ওখানে তারা যেতেই চাইবে। তারা বিএনপি-জামায়াতের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নিজস্ব পরিচয় ডিজলভড করে ২৮ অক্টোবর যাদের মোকাবিলা করেছিলাম তারাই সামনে চলে এসেছে। এটা এখন জনগণ আর ছাত্রদের অধিকারের জায়গায় নেই। এখন যদি তারা সন্ত্রাস করে সেটা আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব।
তিনি বলেন, “গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচিগুলো হয়েয়েছে। কোটা আন্দোলনকারীরা শহীদ মিনারে কর্মসূচি পালন করেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা কোথাও কোনো কর্মসূচি দেইনি। আমাদের অবস্থান ছিল পুরো শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল। আমরা অশান্তি ও সংঘাত চাই না।”
রোববারের সহিংসতায় বিভিন্ন স্খাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে তুলে ধরে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে তারা কীভাবে আগুন লাগিয়েছে। সিএমএম কোর্টে, ধুপচাচিয়া এসিল্যান্ড অফিস, গাইবান্ধা ডিসি অফিস, এসপি অফিস, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের অফিস, রংপুরে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস, নারায়ণগঞ্জ ডিসি অফিস, ইশ্বরগঞ্জ ইউএনও এর বাসা, বগুড়া সদর এসিল্যান্ড অফিস, বগুড়া, ও কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আক্রমণ ও আগুন দিয়েছে। নেত্রকোণা পুলিশ স্টেশন থেকে জঙ্গি কায়দায় অস্ত্র ছিনতাই করেছে। এ রকম আরও অনেক ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা।
‘সহিংসতা ও হতাহত এড়াতে সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ’
এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “গোটা বিশ্বে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে টেনশন বাড়িয়ে উত্তেজনা তৈরি করা হয়। মানুষকে বিপথে পরিচালিত করে সংঘাত-সহিংসতা এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটানো হয়। এই ধরনের মৃত্যু ও হতাহত এড়ানোর জন্য আমরা সাময়িকভাবে এই পদক্ষেপ নিয়েছি।
“আমরা যা কিছু করছি বৃহত্তর স্বার্থে করছি। কোনো কিছু আটকানোর জন্য করছি না। কাউকে থামানোর জন্য করছি না। কোনো কিছু বন্ধ করার জন্য করছি না। আমরা হতাহত, উত্তেজনা, সহিংসতা-সংঘাত এড়ানোর জন্য করছি। কারণ এটা সরকারের দায়িত্ব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ধরনের দায়িত্ব নেওয়া হয়। এ ধরনের কাজের নজির পাবেন।”