নিখোঁজের ছয় মাস পর মিলল লাশ, খুনি ছিলেন তাবলীগে: পুলিশ

পুলিশ বলছে, ‘মুক্তিপণ না পেয়ে’ খুন করে লাশ সেপটিক ট্যাংকে রেখে পালিয়ে তাবলীগের দলে দলে ঘুরছিলেন খুনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2023, 10:29 AM
Updated : 18 May 2023, 10:29 AM

ঢাকার দক্ষিণখান থেকে নিখোঁজের প্রায় ছয় মাস পর এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ, যাকে ‘মুক্তিপণ না পেয়ে’ খুন করে পলিথিনে মুড়ে ফেলা দেওয়া হয়েছিল সেপটিক ট্যাংকে।

বুধরাত রাতে গাজীপুর শ্রীপুরের একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।

নিহত আমির হোসেনের (২৫) বাড়ি নোয়াখালী। ঢাকার দক্ষিণখানের আশকোনা মেডিকেল রোড এলাকায় বোন নুরনাহার বেগমের বাসা থেকে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর বের হয়ে আর ফেরেননি তিনি।

পুলিশ জানায়, নোয়াখালী থেকে তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে আমির ঢাকায় আসেন গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর। পাঁচ দিন পর ২২ ডিসেম্বর বোন নুরনাহার বেগম বাসায় যান। পরদিন ওই বাসা থেকে বের হয়ে যান। পরে ২৮ ডিসেম্বর আমিরের মোবাইল নম্বর থেকে তার আরেক বোন কামরুন্নাহারকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।

এ বিষয়ে আমিরের বড় ভাই বিল্লাল দক্ষিণখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। আমিরকে খুঁজে না পাওয়ার দীর্ঘদিন পর চলতি বছরের ১৩মে সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে পুলিশ।

এরপর তদন্তে নেমে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার এবং আমিরের লাশ উদ্ধারের পর ঢাকায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।

তিনি জানান, লাশ উদ্ধারের আগে মো. তারেক  আহাম্মেদ (৩১), মোহাম্মদ হৃদয় আলী (২৯), আশরফুল ইসলাম (২৩), রাসেল সরদার (২৫) ও তৌহিদুল ইসলাম বাবুকে (৩০) গ্রেপ্তার করা হয়।

“এদের মধ্যে তারেক ও হৃদয়কে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের হোতা তারেক, অন্যরা তাকে সহযোগিতা করেছেন। তারেকের দেওয়া তথ্যেই আমিরের লাশ উদ্ধার করা হয়।”

নিহতের হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে পলিথিনে মুড়িয়ে বস্তাবন্দি করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “পলিথিনে মোড়ানো থাকায় এতদিন পরেও মরদেহ পুরোপুরি পচেনি।”

খুন করে যোগ দেন তাবলীগে

আমিরের হত্যাকাণ্ডের মামলা তদন্ত করছেন দক্ষিণখান থানার এসআই রেজিয়া খাতুন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, খুন করে লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেওয়ার পর আত্মগোপনের সুবিধার জন্য তাবলীগের দলে যোগ দেন তারেক। তাকে নোয়াখালীর তাবলীগের একটি দল থেকেই ধরে আনা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রায় ছয়মাস আগে আমির যেদিন নিখোঁজ হন, তার পরদিনই (২৯ ডিসেম্বর) তাকে খুন করে সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখা হয়। মুক্তিপণ না পাওয়ায় ক্ষোভ থেকেই আমিরকে খুন করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, মেসেঞ্জারে আমিরকে গাজীপুরে ডেকে নিয়েছিলেন তারেক। সেখানে দুজনে ‘এনার্জি ড্রিংকস’ পান করেন। তবে কৌশলে আমিরের বোতলে ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছিলেন তারেক। এরপর আমিরকে মেসে নিয়ে আরও ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয় এবং মুক্তিপণের টাকা দাবি করা হয়।

“তারেক কৌশলে অপহরণ করেছিল এই ভেবে যে, আমিরের দুই ভাই সৌদি আরব থাকে। ফলে অনেক টাকা পাবে তার পরিবার থেকে। কিন্তু মুক্তিপণের কোনো টাকা পায়নি। এই ক্ষোভ থেকেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।”

মেসেঞ্জারে ডেকে নিয়ে ফাঁদে ফেলা হত

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ কর্মকর্তা মোর্শেদ আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারেক মেসেঞ্জার বিভিন্নজনকে ‘সমকামিতার প্রস্তাব’ দিতেন। যারা সাড়া দিতেন, তাদের গাজীপুর চৌরাস্তা কিংবা শ্রীপুর বা মাওনায় ডেকে নিয়ে মোবাইল ও টাকা-পয়সা লুটে নিয়ে ছেড়ে দিতেন।

“আমিরকেও মেসেঞ্জারে ডেকে গাজীপুর চৌরাস্তায় যাওয়ার জন্য বলেন তারেক। পরে আমির বোনের বাসা থেকে সেখানে গেলে তাকে আটকে রেখে তার বোনের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন। প্রত্যাশিত মুক্তিপণ না পাওয়ায় তাকে খুন করা হয়।”

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারদের মধ্যে আগে আশরাফুলকে ঢাকার সাভারের জিরাবো এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়। তার দেওয়া তথ্যে রাসেল ও বাবুকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়। এরপর তাদের দেওয়া তথ্যে তারেক ও তার সহযোগী হৃদয় আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়।