কেউ পরেছিলেন শাড়ি, ছেলেরা পাঞ্জাবি, কারও হাতে গোলাপ; এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরছিলেন, পছন্দের বই কিনছিলেন।
Published : 14 Feb 2025, 12:50 AM
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হলদে শাড়ি-পাঞ্জাবি, হাতে গোলাপ, ফুলের টায়রা আর পদতলে ছড়ানো ঝরাপাতাই যেন বলে দিল ফাগুন এসেছে ধরায়।
পঞ্জিকার পাতা ওল্টানোর এক দিন আগেই বৃহস্পতিবার সেই ছোঁয়া লাগে অমর একুশে বইমেলায়; শিশু-কিশোর আর তরুণরা এসেছিলেন উৎসবের আমেজে।
কেউ পরেছিলেন শাড়ি, ছেলেরা পাঞ্জাবি, কারও হাতে গোলাপ; এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরছিলেন, পছন্দের বই কিনছিলেন।
মাঘের বিদায়ের আগেই প্রকৃতিতে ফাল্গুনের হাওয়া বইলেও আনুষ্ঠানিক দিন গণনা শুরু শুক্রবার থেকে। এদিনই আবার ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’। ফলে সবমিলিয়ে যেন এক ‘মহোৎসব’।
সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে বৃহস্পতিবার বইমেলায় আসেন অনেকে। কেউ ছবি তোলেন, কেউ যোগ দেন গল্প-আড্ডায়।
রংপুর থেকে বইমেলায় আসা তোফাজ্জল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেলায় এসে ভীষণ ভালো লাগছে। প্রতিবছর এই দিনটাতে আমরা আসি। মানুষের ঢল নামে। ফাগুনটা যেন একদিন আগেই আসে।
“সব মিলিয়ে একটা উৎসবের আমেজ যেন মেলায়। বই আর ফুলও দেখলাম প্রচুর বিক্রি হচ্ছে।”
রাজধানীর মিরপুর থেকে মেলায় এসেছিলেন শরীফ আহমেদ। সঙ্গে ছিলেন বাগদত্তা শিরীন সুলতানা।
শরীফ বলেন, “কিছু দিন পরেই আমাদের বিয়ে। ভালোবেসে বিয়ে করছি। ভালোবাসা দিবসের আমেজটা আগেভাগেই টের পেতে আসলাম। মেলায় ঘুরে বই কিনলাম। তাকে ফুলও কিনে দিলাম।”
কানে ফুল গুঁজে এসেছিলেন দুই বান্ধবী ফারিহা আজরীন ও ইসমত আরা শম্পা। দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ফারিহা বলেন, “ভালোবাসা তো আসলে নানা রকমের। বান্ধবীসহ সেই নানা রকমের ভালোবাসা দেখতে ঘুরতে এলাম।”
রসিকতার করে শম্পাও বললেন, “নিজেরা প্রেম করছি না। কিন্তু অনেকেই করছে সেটা দেখতে এলাম। বইও কেনা হল।”
ফুলের মালা হাতে ঘুরছিলেন শফিকুল ইসলাম ও বৃষ্টি রহমান; বিয়ে করেছেন সম্প্রতি।
শফিকুল বলেন, “বিয়ের পর একসঙ্গে বইমেলায় ঘুরতে এলাম। এসে দেখেছি আরও অনেকেই এসেছেন। ভালো লাগছে, খেলাম একসঙ্গে, ঘুরলাম-ফিরলাম।”
বৃহস্পতিবার ফুলের চাহিদাও ছিল বেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শাহবাগে ফুটপাতেই মালা বানাচ্ছিলেন সুমন নামের একজন।
বইমেলার কয়েকটা দিন ফুল বেশি বিক্রি হওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “সেজন্য শাহবাগ থেকে ফুল কিনে এনে আমরা মালা বানিয়ে বিক্রি করি। এমনি খোলাও বিক্রি কিরি। আজকে আর কাল বেশি বিক্রি হবে। প্রতিটি মালা ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করি।”
প্রতি বছরের মত এবারও ঢাকার তিনটি জায়গায় বসন্ত উৎসব উদযাপন করতে যাচ্ছে ‘জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ।’
এছাড়া রাজপুত্রের সঙ্গে বাঁদির প্রেম কাহিনি নিয়ে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সাধনা’ মঞ্চে নিয়ে আসছে নৃত্যনাট্য ‘দিলনাওয়াজ’। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চায়িত হবে এ নৃত্যনাট্য।
রাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িত ঐতিহাসিক দিবসগুলোকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য বাংলা বর্ষপঞ্জি পরিবর্তন করা হয়েছিল খ্রিস্টীয় ২০১৯ সাল বা ১৪২৬ বঙ্গাব্দ থেকে। তাতে ১৯৫২ সালের মত ২১ ফেব্রুয়ারি ৮ই ফাল্গুন কিংবা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পয়লা পৌষেই সমন্বয় করা গেলেও পহেলা ফাল্গুন ও ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হয়ে যায় এক দিনে। ফলে দুই উদযাপন হয়ে গেছে একাকার।