“ডিসিদের কাছে জনগণের চাহিদা মূলত তিনটি; তারা নিরাপত্তা চায়, ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে জিনিসপত্র কিনতে চায় আর হয়রানি ছাড়া সরকারি সেবা পেতে চায়,” বলেন তিনি।
Published : 18 Feb 2025, 01:21 PM
দেশের প্রতিরক্ষায় অংশগ্রহণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতার জন্য তরুণ-যুবাদের ‘সর্বজনীন সামরিক প্রশিক্ষণ’ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন জেলা প্রশাসকরা।
তিন দিনের জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিন মঙ্গলবার প্রথম অধিবেশন শেষে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী আব্দুল হাফিজ।
তিনি বলেছেন, “ডিসিদের পক্ষে থেকে যুব সমাজের জন্য ইউনিভার্সাল মিলিটারি ট্রেনিং দেওয়া যায় কি না- তার প্রস্তাব করা হয়েছে। যুব সমাজের মধ্যে...তারা মিলিটারি ট্রেনিং পেতে পারেন ও দেশের প্রতিরক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।’’
অবসরপ্রাপ্ত এই লেফটেন্যান্ট জেনারেল বলেন, “সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল জেনারেল স্টাফ এ নিয়ে সুন্দর কথা বলেছেন, এটা ভালো দিক, তবে সিদ্ধান্তটা রাজনৈতিক। সরকার চাইলে সামরিক বাহিনী প্রশিক্ষণ দিতে প্রস্তুত।
“এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমরা চিন্তা করতেই পারি। আমরা সরকারকে জানিয়েছি, এটা জনগণের সিদ্ধান্ত, সরকারের সিদ্ধান্ত। সরকার চাইলে, নির্দেশনা পেলে সশস্ত্র বাহিনী করতে প্রস্তুত।’’
আব্দুল হাফিজ বলেন, ‘‘যুব সমাজকে প্রশিক্ষণ দিতে প্রত্যেক উপজেলায় ও ইউনিয়নে আনসার-ভিডিপি’র একটি কোম্পানির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এটি তো অলরেডি হচ্ছে, তবে তা সীমিত পর্যায়ে হয়। এটাকে আরো ব্যাপক আকারে করার প্রস্তাব করেছেন (ডিসিরা)।’’
মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সামরিক কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সঙ্গে সামরিক বাহিনী কীভাবে আরো সম্পৃক্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করা যায়, তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে।
“তারা (ডিসি) প্রস্তাব দিয়েছেন- প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যে ওরিয়েন্টেশন প্রগ্রাম হয়, তার সংখ্যা বাড়ানো ও ডিভিশন (বিভাগ) পর্যায়ে করার।’’
ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে চলমান ডিসি সম্মেলনে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বা বম পার্টির তৎপরতা ঠেকাতে কৌশল নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়।
সরকারপ্রধানের বিশেষ সহকারী হাফিজ বলেন, “কুকি-চিন কয়েকটি উপজেলায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের কারণে পার্বত্য এলাকায় পর্যটন শিল্প ক্ষতি হচ্ছে।
“এলাকার যুবকেরা কাজ হারাচ্ছেন, চাকরি হারাচ্ছেন, পর্যটন থেকে তাদের আয় কমে যাচ্ছে। তারা সন্ত্রাসীদের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছেন। তারা (কুকি-চিন) ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে।’’
জুম্ম জাতীয়তাবাদী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এমএন লারমা) গঠিত জনসংহতি সমিতি ভেঙে তৈরি হওয়া কয়েকটি দল পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয়। তার মধ্যেই কয়েক বছর ধরে কেএনএফের সক্রিয় হয়ে ওঠার খবর আসছে।
সংগঠনটিকে পাহাড়িরা চেনে ‘বম পার্টি’ নামে, যার সশস্ত্র উইংয়ের নাম কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। কেএনএফ ‘কুকি-চিন রাজ্যে’ নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চায়- যেখানে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরারা থাকবে না; থাকবে বম, খিয়াং, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি ও ম্রোরা।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ওই সময়ের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খোয়া যাওয়া অস্ত্রের মধ্যে এখনো ১৪০০টি উদ্ধার হয়নি। গুলি উদ্ধার হয়নি আড়াই লাখ।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদমর্যাদার কর্মকর্তা আব্দুল হাফিজ বলেন, “এসব অস্ত্র ও গুলি বিভিন্ন জেলাতেই আছে, তা যদি সন্ত্রাসীদের হাতে যায়- তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে। আমরা অভিযান অব্যাহত রাখব।’’
সন্ত্রাসীদের ধরতে কয়েকটি জেলার প্রশাসক তাদের জেলার প্রত্যন্ত এলাকা বিশেষ করে চর ও দুর্গম এলাকায় অভিযান বাড়ানোর প্রস্তাব রেখেছেন।
এ প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাফিজ বলেন, “নরসিংদী জেলা প্রশাসক তার জেলার ছয়টি দুর্গম ইউনিয়নে অভিযান পরিচালনা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এছাড়াও চর এলাকায় বেশি সংখ্যক সদস্য নিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে বলেছেন সন্ত্রাসীদের ধরতে।’’
জাটকা নিধন ঠেকাতে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের অভিযানের সুফল এখন মিলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ইলিশের উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়েছে। আমরা রপ্তানি করতে পারছি। বাজারে সবাই ইলিশ কিনতে পারছে।’’
‘ডিসিদের কাছে জনগণের চাহিদা ৩টি’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আব্দুল হাফিজ বলেন, জেলা প্রশাসকরা মাঠ পর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। তাদের কাছে জনগণের চাহিদা মূলত তিনটি।
“এসব প্রত্যাশা আকাশচুম্বী না- যা পূরণ করা যাবে না। তারা নিরাপত্তা চায়, রাতে শান্তিতে ঘুমাতে চায়। চলাফেরা করতে চায়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে জিনিসপত্র কিনতে চায় এবং তৃতীয়টি হচ্ছে, কোনো ধরনের হয়রানি-ঝামেলা ছাড়াই সরকারি সেবাগুলো পেতে চায়।”
আগামী রোজায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ‘ত্রিমুখী’ চ্যালেঞ্জ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এর মধ্যে রয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষকরা যাতে সেচের উপকরণ পায়। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা; স্বৈরাচারের দোসররা সক্রিয় হতে চেষ্টা করছে বিভিন্ন জেলায়, তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।”
সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান, নৌবাহিনীর সহকারী প্রধান (অপারেশন্স) রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, বিমান বাহিনীর সহকারী প্রধান (প্রশাসন) এয়ার ভাইস মার্শাল রুসাদ দীন আছাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।