Published : 28 Dec 2022, 08:12 AM
ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলের এমআরটি-৬ লাইনের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন হল বুধবার।
উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পুরা মেট্রো লাইনের দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার, নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা
শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের ৯টি স্টেশন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার পর বৃহস্পতিবার শুরু হবে ট্রেন চলাচল।
প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০ টাকা।
মেট্রোরেলের উদ্বোধনী যাত্রায় উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ট্রেন ছাড়ে ১টা ৫৩ মিনিটে। আর আগারগাঁও পৌঁছায় ২টা ১১ মিনিটে। প্রধানমন্ত্রীর ট্রেনের চালক ছিলেন মরিয়ম আফিজা, যিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর করে মেট্রোরেলের চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
এই যাত্রায় শেখ হাসিনার সহযাত্রী ছিলেন দুই শতাধিক নাগরিক, যাদের মধ্যে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, পোশাক কর্মী, রিকশা চালক, সবজি বিক্রেতা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, কূটনীতিক আর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
ট্রেনে প্রধানমন্ত্রী ও তার বোন শেখ রেহানা মাঝের আসনে বসেছিলেন আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা মতিয়া চৌধুরী। যাত্রাপথে আসন থেকে উঠে অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।
ধীর গতিতে চলে ১৮ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী দেশের প্রথম মেট্রোরেল। বেলা ২টা ১১ মিনিটে আগারগাঁও স্টেশনে নেমে অপেক্ষমাণ গাড়িতে চড়ে প্রধানমন্ত্রী চলে যান গণভবনের দিকে।
আমার জন্যও এটা গর্বের একটা মুহূর্ত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আমরা সবাই জানি, ঢাকা শহরের যানজট কতটা সমস্যার। মেট্রোরেল তাতে কিছুটা স্বস্তি দেবে বলেই আমি আশা করি।প্রধানমন্ত্রীর ট্রেনের চালক ছিলেন মরিয়ম আফিজা
উদ্বোধনের পর টিকেট কেটে মেট্রোরেলের যাত্রী হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে তিনি অবতীর্ণ হন গার্ডের ভূমিকায়। সবুজ পাতাকা নেড়ে মেট্রো ট্রেন চলাচলের সবুজ সংকেত তিনি দেন। তারপর সেই পতাকায় স্বাক্ষরও করেন সরকারপ্রধান।
বুধবার সকালে দিয়াবাড়ি স্কুলের মাঠে সুধী সমাবেশে মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি উত্তরা উত্তর স্টেশন ঘুরে দেখেন এবং বুথ থেকে মেট্রো রেলের টিকেট কাটেন। পরে মেট্রোরেলের যাত্রী হয়ে রওনা দেন আগারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে।
উদ্বোধনের পর দেশের প্রথম মেট্রোরেলের যাত্রী হতে টিকেট কেটেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। এই টিকেট নিয়েই তারা উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও যাবেন। তাদের সঙ্গী হচ্ছেন দুই শতাধিক নাগরিক, যাদের মধ্যে থাকবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, পোশাক কর্মী, রিকশা চালক, সবজি বিক্রেতা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী আর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করার পর উত্তরা উত্তর স্টেশনে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকালে দিয়াবাড়ি স্কুলের মাঠে সুধী সমাবেশে উপস্থিত হয়ে প্রথমে ফলক উন্মোচন করে মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সরকারপ্রধান। পরে সুধী সমাবেশে যোগ দেন।
সেখানে বক্তৃতা করার পর মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন শেখ হাসিনা। পরে তাকে উত্তরা উত্তর স্টেশন ঘুরিয়ে দেখানো হয়। স্টেশন দেখার পর ফলকের পাশে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করেন তিনি।
এগিয়ে যাবে বাঙালি দুর্বার গতিতে: শেখ হাসিনা
দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘হবে জয়’ কবিতার শরণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, “অসম সাহসে আমরা অসীম সম্ভাবনার পথে ছুটিয়া চলেছি, সময় কোথায় পিছে চাব কোনো মতে!”
এই কবিতাংশের সঙ্গে যুক্ত করে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এগিয়ে যাব আমরা দুর্বার গতিতে, এগিয়ে যাবে বাঙালি দুর্বার গতিতে। গড়ে তুলব সকল বাধা অতিক্রম করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”
দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘হবে জয়’ কবিতার শরণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, “অসম সাহসে আমরা অসীম সম্ভাবনার পথে ছুটিয়া চলেছি, সময় কোথায় পিছে চাব কোনো মতে!”
এই কবিতাংশের সঙ্গে যুক্ত করে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এগিয়ে যাব আমরা দুর্বার গতিতে, এগিয়ে যাবে বাঙালি দুর্বার গতিতে। গড়ে তুলব সকল বাধা অতিক্রম করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”
মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিকভাবে মেট্রোরেল ব্যবহার করার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “একটা অনুরোধ থাকবে, অনেক টাকা খরচ করে এই মেট্রোরেল করা হয়েছে। এটাকে সংরক্ষণ করা, এটার মান নিশ্চিত রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা- এই সবকিছু কিন্তু যারা ব্যবহার করবেন তাদের দায়িত্ব।
“এখানে অনেক আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার হয়েছে। এই সমস্ত জিনিস যেন নষ্ট না হয়। ব্যবহারের ক্ষেত্রে সকলে যত্নবান হবেন। খেয়াল রাখবেন কেউ যেন আমাদের রেল স্টেশনগুলিতে আবর্জনা-ময়লা না ফেলে, অপরিচ্ছন্ন করতে না পারে- সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।”
সরকারপ্রধান বলেন, “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সুন্দরভাবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে এটা ব্যবহার করার জন্য আমি সবাইকে আন্তরিক আবেদন জানাচ্ছি, অনুরোধ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ জানাব, যদি আপনারা কথাগুলি মেনে চলেন।”
মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামালায় নিহত জাপানি নাগরিককে স্মরণ করেছেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ের ওই ঘটনার পর মেট্রোরেলের কাজ পুনরায় চালু করার পেছনে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র যে ভূমিকা, তাও স্মরণ করেছেন শেখ হাসিনা।
জাপানি নাগরিকদের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের স্মৃতি যেন স্মরণে থাকে, আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ঢাকার মেট্র্রোরেল নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের কিছুদিন পর ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় সাত জাপানি নাগরিক নিহত হন।
ওই হামলায় মোট ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। দুই নারীসহ সাত জাপানি নাগরিকের মধ্যে ছয় জন ছিলেন দুটি মেট্রো রেল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত।
গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত এমআরটি-১ এবং নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে বাড্ডা, মিরপুর গাবতলী, ধানমণ্ডি, বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ) হয়ে হাতিরঝিল লিংক রোড পর্যন্ত এমআরটি-৫ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাছাইয়ের কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা।
ওই হামলার পর জাইকা ও ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদুতসহ বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা বেশির ভাগ জাপানি নিজ দেশে ফিরে যান। পরে বাংলাদেশের তরফ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সেপ্টেম্বরে জাপানিদের ফিরিয়ে আনা হয়।
হামলায় নিহতদের মধ্যে হিরোশি তানাকা, হিদেকি হাশিমতো ও নোবুহিরু কুরোসাকি ছিলেন ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবাল লিমিটেডের কর্মকর্তা। আর নিহত ওকামুরা মাকোতো, ইউকো সাকাই, শিমোদায়রা রুই ছিলেন এএলএমইসি করপোরেশনের কর্মকর্তা।
বাকি একজন কোহিও ওগাসাওয়ারা ছিলেন কাটাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যুক্ত। তবে মেট্রো রেলের কাজে তার সম্পৃক্ততা ছিল না।
এছাড়া হলি আর্টিজানে হামলায় আহত হয়েছিলেন যানজট নিরসনের জন্য প্রণয়ন করা কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) সংশোধন দলের প্রধান ওয়াতানা বি তামাকি। এমআরটি লাইন-১ ও ৫-এর সম্ভাব্যতা যাছাই দলের প্রধানও ছিলেন তিনি।
চলতি বছরের জুলাইয়ে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রো রেল ডিপোতে নিহতদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে সরকার।
তাদের নির্মম প্রাণক্ষয়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”
চলতি বছর ঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারানো শিনজো আবের ভূমিকা কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ওই ঘটনার পর কিছুদিনের জন্য কাজ বন্ধ ছিল; তার নির্দেশে আবার কার্যক্রম শুরু হয়।”
মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক দিতে পারলাম, ঢাকাবাসীকে, আরেকটি পালক সংযোজিত করতে পারলাম।”
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “বাংলাদেশ করে দেখিয়েছে। মেট্রোরেল আর স্বপ্ন নয়, মেট্রো রেল এখন বাস্তব।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এরিয়াল ভিউ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশে মেট্রোরেল নির্মাণযজ্ঞের ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হয়। পরে মেট্রোরেলের থিম সং ‘অর্থনীতির চাকা ঘুরবে পেছনে ফেলে যানজট’ পরিবেশন করেন সংগীত শিল্পী, এমপি মমতাজ বেগম।
তার গানের কথা বলা হয়–
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায়, স্বপ্নের মেট্রো রেলের শুভ যাত্রায়।
শেখ হাসিনা আজ অনন্য উচ্চতায়; মেট্রো রেল, আমাদের স্বপ্নের মেট্রো রেল।
বাঁচবে সময়, বাঁচবে পরিবেশ; অর্থনীতির চাকা ঘুরবে পেছনে ফেলে যানজট, এগিয়ে চলবে বাংলাদেশ।
মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাপানের নতুন রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি ইওয়ামা এবং জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে বাংলা কথায় মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের।
রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি ইওয়ামা তার বক্তব্যের সূচনা করেন বাংলায়। মাত্র ১০ দিন আগে রাষ্ট্রদূত হয়ে ঢাকায় আসার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের, আমি সেই সম্পর্কে আরও গভীর করতে চাই।”
অতীতের মত বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় ভবিষ্যতেও পাশের থাকার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার প্রথম মেট্রো রেল দুই দেশের সহযোগিতার ‘প্রতীক’ হয়ে থাকবে।
জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে-ও তার বক্তব্যের শুরুতে বাংলায় শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “আমি এখানে এসে খুবই খুশি হয়েছি।”
মেট্রো কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে, তা অল্প কিছুদিনের মধ্যে দৃশ্যমান হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ এই পরিবহন “ঢাকার সাধারণ মানুষের জীবনকে বদলে দেবে।”
তাদের আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী এবং ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক।
এম এ এন সিদ্দিক বলেন, “সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে মেট্রোরেল আজ অনন্য, দৃশ্যমান। লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ।”
তিনি বলেন, “আগামী ২০২৪ সালের জুন মাসে এমআরটি-৬ লাইন চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দুরদর্শী নেতৃত্বে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই প্রথম অংশ উদ্বোধন করতে সক্ষম হয়েছি।“
ডিএমটিসিএল এমডি জানান, এমআরটি লাইন-৬ এর মতিঝিল অংশ আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে। কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করার কাজ পুরো দমে এগিয়ে চলছে। ২০২৫ সালের জুন মাসে উত্তরা-কমলাপুর ট্রেন চালানো সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দিয়াবাড়িতে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার বেলা ১১টায় তিনি দিয়াবাড়ি খেলার মাঠে তৈরি উদ্বোধনী মঞ্চে আসেন এবং ফলক উন্মোচন করে এ বৈদ্যুতিক ট্রেনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এরপর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুনাজাত করেন।
মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম রওশন আরা মান্নান, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবীব আহসান, সচিব এ বিএম আমিনুল্লা নূরী, প্রকল্প পরিচালক আফতাব উদ্দিন এবং ডিএমসিটিএল এর এমডি এম এ এন ছিদ্দিক।
উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন।
মেট্রোরেলের উদ্বোধন দেখতে হাজারো মানুষ নানা রঙের পোশাকে বাদ্যবাজনা বাজিয়ে দল বেঁধে সমবেত হয়েছেন উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরে। সেখানে সুধী সমাবেশের পর উত্তরা উত্তর স্টেশনে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনিই হবেন প্রথম যাত্রী।
দিয়াবাড়ি খেলার মাঠে তৈরি উদ্বোধনী মঞ্চে দশটি চেয়ার রাখা হয়েছে। আর পেছনের ব্যনারে একপাশে বঙ্গবন্ধু, অপর পাশে প্রধানমন্ত্রীর ছবি, মাঝখানে দুটি মেট্রো রেলের ছবি শোভা পাচ্ছে।
মঞ্চ থেকে জানানো হয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মসজিদের ইমাম, স্কুল কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, রিকশা চালক, সবজি বিক্রেতা, পোশাক কর্মী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা মেট্রোরেলের উদ্বোধনী যাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হবেন।
বেলা ১১টা ১ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন। গার্ডের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সবুজ পতাকা দুলিয়ে মেট্রোরেলের যাত্রার সংকেত দেবেন তিনি। টিকেট কেটে যাত্রী হয়ে চড়বেন ট্রেনে।
মিরপুর থেকে উদ্বোধন দেখতে আসা আছিয়া বেগম বলেন, "মেট্রো রেল চলবে এটা দেখতে আসছি, প্রধানমন্ত্রীকেও দেখব।"
শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন চলাচলের জন্য খুলে দিচ্ছে সরকার।
মেট্রোরেলে যাতায়াতে যাত্রীদের জন্য দুই ধরনের টিকেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে; একটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহারের এমআরটি পাস, অন্যটি দিয়ে চড়া যাবে একবার।
শুরুতে কেবল মেট্রোরেল স্টেশনের কাউন্টার থেকে নির্দিষ্ট জামানত দিলে মিলবে এমআরটি পাস।
আর একবারের যাত্রার (সিঙ্গেল জার্নি) জন্য টিকেট মিলবে স্টেশনে থাকা কাউন্টার এবং পাশের স্বয়ংক্রিয় ‘টিকেট মেশিন’ থেকে।
যাত্রা শেষে নির্ধারিত মেশিনে টিকেট কার্ডটি ফেরত দিলে তবেই স্টেশন থেকে বের হতে পারবেন যাত্রীরা।
এমআরটি পাস সংগ্রহের পর নিয়মিত যাতায়াতের জন্য কাউন্টারের পাশাপাশি ‘টিকেট মেশিন’, মোবাইল ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও টপ-আপ করা যাবে।
এমআরটি পাস থেকে ‘দূরত্ব অনুযায়ী’ নির্ধারিত ভাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হবে। যাত্রী যে কোনো সময় এমআরটি পাস ফেরত দিয়ে জামানতের অর্থ ও অব্যবহৃত টাকা ফেরত নিতে পারবেন।
পাসটি হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেলে ‘রেজিস্টার্ড কার্ডের বাহক’ নতুন এমআরটি পাস সংগ্রহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অব্যবহৃত অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন এমআরটি পাসে স্থানান্তরিত হবে।
আর টিকেট অফিস মেশিন বা টিওএম অপারেটরকে অবহিত করে হারানো পাসটির অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করা যাবে।
আপনি যদি একবার ট্রেনে চেপে যেতে চান, সেক্ষেত্রে স্টেশনের দোতলায় থাকা মেশিনে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে নিজেই টিকেট কাটতে পারবেন।এ মেশিনের টাচ স্ক্রিন প্যানেল ব্যবহার করা যাবে স্মার্ট ফোনের মতই।
শুরুতে ভাষা নির্বাচন করে মেশিনের বাঁ পাশের উপর দিকে থাকা ‘একক যাত্রা টিকেট’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। তখন আপনি যে স্টেশনে অবস্থান করছেন, সেটি সবুজ রঙে স্ক্রিনে দেখাবে।
এরপর আপনাকে গন্তব্যের স্টেশনের নাম নির্বাচন করতে হবে। তখন স্ক্রিনের ডান পাশে ভেসে উঠবে ভাড়ার পরিমাণ।
এরপর আপনাকে স্ক্রিনের নিচের দিকের অপশন থেকে টিকেটের সংখ্যা নির্বাচন করতে হবে। একজন যাত্রী একবারে সর্বোচ্চ পাঁচটি টিকেট কিনতে পারবেন।
টিকেটের সংখ্যা নির্দিষ্ট হওয়ার পর ‘ওকে’ বোতাম চাপতে হবে। এরপর মেশিনের নির্দিষ্ট জায়গায় টাকা প্রবেশ করানোর নির্দেশনা আসবে স্ক্রিনে।
নির্ধারিত জায়গায় টাকা প্রবেশ করালে কত টাকা দিলেন সেই তথ্য উঠতে থাকবে স্ক্রিনে।
নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়ার টাকা যদি আপনি প্রবেশ করান, তাহলে স্ক্রিনের নিচের বাঁ দিকের নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বেরিয়ে আসবে একক যাত্রার টিকেট। আর আপনি যদি কিছু টাকা ফেরত পান, সেটাও বেরিয়ে আসবে নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে।
টিকেট কাটার সময় স্ক্রিনে দেখানো হবে, আপনার নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়ার জন্য আপনি কত টাকা পর্যন্ত ব্যাংক নোট মেশিনে প্রবেশ করাতে পারবেন। কম ভাড়ার জন্য একেবারে বড় নোট প্রবেশ করানো যাবে না।
হাতে ভাংতি না থাকায় বা বড় নোটের কারণে টিকেট কাটতে না পারলে ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ নেই; চলে যান টিকেট কাউন্টারে।
বাংলাদেশে চালু সব ব্যাংক নোটই গ্রহণ করবে টিকেট বিক্রয় মেশিন। তবে বেশি পুরনো ও ছেঁড়া নোট মেশিন নেবে না।
এমআরটি পাসের জন্য শুরুতে মোট ৪০০ টাকা জমা করতে হবে। এর মধ্যে ২০০ টাকা জামানত (ফেরতযোগ্য) এবং ২০০ টাকা ভাড়া। পরে ১০০ টাকা বা তার গুণিতকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত টপ আপ করা যাবে ওই পাসে।
আপাতত শুধু স্বয়ংক্রিয় টিকেট বিক্রয় মেশিন কিংবা স্টেশন কাউন্টারের মাধ্যমে এমআরটি পাস টপ আপ করা যাবে।
স্টেশনের ভেতরে
সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে, এমআরটি পাস (দীর্ঘমেয়াদী টিকেট) থাকলেও
স্টেশনের দোতলায় প্রবেশ ও বহির্গমন গেট টপকানোর চেষ্টা করা যাবে না
মেট্রোরেল স্টেশনের লিফটে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে
চলন্ত সিঁড়িতে বাঁ দিক ঘেঁষে দাঁড়াতে হবে
গন্তব্যস্থান সম্পর্কে ধারণা পেতে মেট্রোরেল ম্যাপ দেখতে হবে
দৃষ্টিহীনদের যাতায়াতের জন্য হলুদ রঙের ট্যাকটাইল পথ ছেড়ে দাঁড়াতে হবে
স্টেশন এলাকায় ধূমপান করা যাবে না
পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে
প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোরের ওপর দিয়ে মাথা বাড়িয়ে মেট্রোরেল দেখার চেষ্টা করা যাবে না
বিনা টিকেটে মেট্রো রেলে ভ্রমণ করা যাবে না। তা করলে বা ভাড়া এড়ানোর জন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করলে নির্ধারিত ভাড়ার ১০ গুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে।
ট্রেনে চড়ার সময়
আগে নামতে দিন, পরে উঠুন
প্ল্যাটফর্ম ও মেট্রোরেল কোচের মাঝের ফাঁক থেকে সতর্ক থাকতে হবে
নিরাপত্তার স্বার্থে প্ল্যাটফর্মে হলুদ দাগের বাইরে দাঁড়াতে হবে
ওঠা-নামার সময় হুড়োহুড়ি বা ধাক্কাধাক্কি করা যাবে না
মেট্রোরেলে ওঠা-নামার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না
মেট্রোরেলের দরজায় কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না
বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত স্থান ছেড়ে দিতে হবে
কোচের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ানো যাবে না
মোবাইল ফোনের স্পিকার অন করে রাখা যাবে না
নিচু স্বরে কথা বলতে হবে
একাধিক সিট দখল করে বসা যাবে না
সহযাত্রীদের অস্বস্তি বা অসুবিধা তৈরি করা যাবে না
ড্রাইভিং ক্যাবের দরজা খোলা যাবে না
মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখতে হবে
দুই কোচের মাঝখানের চলাচলের পথে দাঁড়ানো যাবে না
নিরাপত্তা কর্মীদেরকে দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করতে হবে
এমআরটি পাস সঙ্গে রাখতে হবে
মেট্রোরেলে পানাহার করা যাবে না
ট্রেনের ভেতরের নির্দেশিকা চিহ্ন ও ডিসপ্লে দেখতে হবে। যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকবে সেখানে
ঘোষণা শুনতে হবে
নির্ধারিত স্থান ব্যতীত থুথু বা পানের পিক ফেলা যাবে না
কোনো ধরনের পোষা প্রাণী বহন করা যাবে না।
মেট্রোরেল এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন ইত্যাদি নিষিদ্ধ
দেশের অন্যতম বড় এ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নগরবাসীকেও কম ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি।
যে পথ দিয়ে ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলের পথ গেছে, বলতে গেলে সেটা রাজধানীর মেরুদণ্ড। রাস্তার মাঝ বরারবর দখল করে সেখানে বসানো হয়েছে উড়াল রেলপথের পিয়ার, নির্দিষ্ট দূরত্বে নির্মাণ করা হয়েছে স্টেশন। চারপাশে রাখা ছিল নির্মাণ সামগ্রী।
ফলে টানা কয়েক বছর চলাচলের পথ ছিল সরু, যার অবশ্যম্ভাবী ফল হল অসহনীয় যানজট। আর এর ফলে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে মিরপুরবাসীকে।
সেই দীর্ঘ কষ্টের দিন পেরিয়ে মেট্রো রেল পেয়ে খুশির কথা জানিয়েছেন মিরপুর, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে পুরো সুবিধা পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে তাদের।
ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা তাহমিনা সুলতানা চাকরি করেন মিরপুর ১২ নম্বরে একটি বেসরকারি ব্যাংকে। মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সময়টার কথা মনে করে এই নারী বলেন, “এই কাজ কতদিনে শেষ হবে সেই অপেক্ষায় ছিলাম। এমনও দিন গেছে অফিসে যেতে দুই-আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে গেছে। গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।"
শুধু পথের কষ্ট নয়, মিরপুরের বইখাতার দোকানি রাজিব শেখের ব্যবসাও লাটে উঠতে বসেছিল উন্নয়ন কাজের যন্ত্রণায়। তার মত রাস্তার পাশের সব দোকান আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেই ভুগতে হয়েছে গত কয়েক বছর। বিক্রি কমে যাওয়ায় অনেক দোকান বন্ধও হয়ে গেছে।
“মেট্রোরেলের কাজ শেষ হওয়ায় গত কিছুদিন ধরে ভালো আছি। মেট্রোরেল চালু হলে এই এলাকা আগের চেয়ে দ্বিগুণ সরগরম হবে। এখানে অনেক নামকরা স্কুল-কলেজ আছে। পাশেই ক্যান্টনমেন্ট এলাকা। রোকেয়া সরণির দুই পাশেও বড় জায়গা নিয়ে আবাসিক এলাকা। আমাদের বেচাবিক্রিও বাড়বে।”
শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসনুভা ইসলামের বাসা পল্লবীতে। নির্মাণ কাজের সময়টায় যানজটে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হলেও এখন মেট্রোরেল চালু হওয়ার খবরে আনন্দের শেষ নেই তার।
তাসনুভা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললো, "মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর থেকে আমার স্কুলে যেতে অনেক সময় লেগে যেত। আগারগাঁও পর্যন্ত আসতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় যেত। এখন মেট্রোরেল চালু হলে আমার অনেক সময় বেঁচে যাবে।
“আর মেট্রোরেলে যাতায়াত করাটাও সেইফ হবে। আমার খুবই ভালো লাগছে। কবে যে রেলে চড়ে স্কুলে যাব, সেই অপেক্ষায় আছি।"
মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মানুষের ঢল নেমেছে। আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে দলে দলে হাজির হচ্ছে উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরে, সেখানেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে হবে সুধী সমাবেশ।
ঢাকার মেট্র্রো রেলের প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শোকের ঘটনাও। নির্মাণকাজ উদ্বোধনের কিছুদিন পর ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় সাত জাপানি নাগরিক নিহত হন।
ওই হামলায় মোট ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। দুই নারীসহ সাত জাপানি নাগরিকের মধ্যে ছয় জন ছিলেন দুটি মেট্রো রেল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত।
গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত এমআরটি-১ এবং নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে বাড্ডা, মিরপুর গাবতলী, ধানমণ্ডি, বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ) হয়ে হাতিরঝিল লিংক রোড পর্যন্ত এমআরটি-৫ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাছাইয়ের কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা।
ওই হামলার পর জাইকা ও ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদুতসহ বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা বেশির ভাগ জাপানি নিজ দেশে ফিরে যান। পরে বাংলাদেশের তরফ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সেপ্টেম্বরে জাপানিদের ফিরিয়ে আনা হয়।
হামলায় নিহতদের মধ্যে হিরোশি তানাকা, হিদেকি হাশিমতো ও নোবুহিরু কুরোসাকি ছিলেন ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবাল লিমিটেডের কর্মকর্তা। আর নিহত ওকামুরা মাকোতো, ইউকো সাকাই, শিমোদায়রা রুই ছিলেন এএলএমইসি করপোরেশনের কর্মকর্তা।
বাকি একজন কোহিও ওগাসাওয়ারা ছিলেন কাটাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যুক্ত। তবে মেট্রো রেলের কাজে তার সম্পৃক্ততা ছিল না।
এছাড়া হলি আর্টিজানে হামলায় আহত হয়েছিলেন যানজট নিরসনের জন্য প্রণয়ন করা কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) সংশোধন দলের প্রধান ওয়াতানা বি তামাকি। এমআরটি লাইন-১ ও ৫-এর সম্ভাব্যতা যাছাই দলের প্রধানও ছিলেন তিনি।
জাপানি নাগরিকদের নামে মেট্রো রেল স্টেশনের নামকরণের আলোচনা এক সময় উঠলেও প্রথম মেট্রোরেলের বেলায় তা হয়নি। চলতি বছরের জুলাইয়ে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রো রেল ডিপোতে নিহতদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে ‘জীবন উৎসর্গকারী’ এই জাপানিদের স্মৃতির প্রতি ‘গভীর শ্রদ্ধা’ জানিয়েছেন।
মেট্রোরেলে চড়তে প্রতি কিলোমিটারে জন্য ৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে সরকার। সেই হিসাবে দিয়াবাড়ির উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রত্যেক যাত্রীকে গুণতে হবে ৬০ টাকা করে।
মেট্রো রেলের বিপরীতে রাজধানীতে ডিজেল চালিত বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা।
যাত্রীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে মেট্র্রো রেলের ভাড়া ৫০ শতাংশ কমানোর দাবি জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। অন্যদিকে, মেট্রোরেলে পর্যাপ্ত যাত্রীসংখ্যা নিশ্চিত করতে ভাড়া কমানো এবং মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে বহুমাধ্যমভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
মেট্রো রেলের নিম্ন আয়ের মানুষকে আকৃষ্ট করার মত ভাড়া না হওয়ার পেছনে নির্মাণ ব্যয় বেশি হয়ে যাওয়া এবং মেট্রোরেল-কেন্দ্রিক ‘নন-অপারেশনাল’ আয়ের সুযোগ সৃষ্টি না করাকে কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের থেকে দুর্বল অর্থনীতিতেও আছে, তারা মেট্রোর ভাড়াটা আমাদের থেকে অনেক কম রেখেছে। কেন রেখেছে? আমরা খরচ করতে জানি না, বেহিসেবিভাবে বানানোর সময় খরচ করে ফেলেছি বেশি। তুলতে গেলে এখন নিশ্চিতভাবে জনগণের উপরে বেশি চাপ দিতে হবে, এটা স্বাভাবিক।
“আমি খরচ করার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিলাম না, আমার অক্ষমতাটা আমি চাপিয়ে দিচ্ছি ভাড়ার উপরে। এটা কিন্তু ভাবনার বিষয়। অন্যান্য দেশ পারে, আমি কেন পারি না। অন্যান্য দেশ চার-পাঁচ বছরের মধ্যে উদ্বোধন করে ফেলতে পারে, তাহলে আমি কেন পারি না।”
যাত্রীদের উপর বেশি খরচ না চাপিয়ে নন-অপারেশনাল ইনকামের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে এ যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, “যাত্রীর ভাড়াটাকে কমিয়ে রাখলে নিজ থেকে না চাইলেও ফেয়ারের অ্যাট্রাকশনে সে উঠে আসবে। এর নাম হল একসেসেবল অ্যাফোর্ডেবল ফেয়ার।
“আমি বাসকেটের মধ্যে একটাই রেখেছি, রেভিনিউ স্কিম। তার মানে বোঝা যায়, একবিংশ শতাব্দীর যেই পরিপক্ক নলেজ, সেটা আমরা কাজে লাগাই নাই। শুধু যাত্রী থেকে (টাকা) তুলছি। কলকাতাতেইতো ১৭% নন-অপারেশনাল সার্ভিস থেকে আসছে। তাহলে আমি কেন পারলাম এতদিন পর এসে।”
ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে কৌশলী হওয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখন যারা ঝুলে ঝুলে যাচ্ছে, লেগুনাতে যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে? পাঁচ টাকায় যাওয়া যায়। এদের কাছে কমফোর্ট থেকেও টাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। এই গ্রুপটাকে অ্যাট্রাক্ট করতে না পারলে (মেট্রোরেলের) নিচের রাস্তায় কিন্তু কিলবিল করবে।
“হোক ওই সনাতনী পদ্ধতি, কমফোর্ট নেই। কিন্তু একেকজনের অগ্রাধিকার একেক রকম। ডেমোগ্রাফির বটমে যারা আছে, এরা দেখবে তার জন্য ভাড়াটা দুবেলা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে কি না। সুতরাং তারা আগের মতই যাবে এবং বিভিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। যে শৃঙ্খলা আসার কথা, প্রত্যাশা অনুযায়ী সেটা হবে না।”
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবশ্য বলেছেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা বিবেচনায় নিয়ে ভাড়ার এই হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
বুধবার আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমি একটা কথা ইন-জেনারেল বলি, এখন যে অবস্থা ঢাকা সিটিতে, আপনি উত্তরা থেকে কমলাপুরে আসবেন, ১০০ টাকায়। কত মিনিটে আসছেন? ৩৮ মিনিটে। তাহলে কোথায় লস হল?
“প্রতিটি আনন্দের সঙ্গে যন্ত্রণা থাকে। ভাড়া একটা বিষয়, এটা কখনো জেনারেলি একসেপ্টেবল হবে না, কোথাও। কিন্তু বাস্তবে সবাই একসেপ্ট করবে। মিনিমাম রিকশা ভাড়া এখন ২০ টাকা, এটা কি ভাবেন?”
বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে ইতোমধ্যে মানুষকে মেট্রোরেলে সেবা দেওয়া হচ্ছে। কেবল চীনেই ৪৬টি মেট্রো সিস্টেম রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে রয়েছে ১৫টি করে। অবশেষে বাংলাদেশও সেই ক্লাবে যোগ দিচ্ছে।
৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সহযোগিতায়।
উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এই লাইনের নাম দেওয়া হয়েছে এমআরটি-৬। সরকারের পরিকল্পনা হল, এরকম মোট ছয়টি মেট্রো রেলপথ ঢাকার বিভিন্ন অংশকে যুক্ত করবে। এরমধ্যে একটি হবে পাতাল রেল।
সূচি ধরে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকা যানজটের যন্ত্রণা অনেকটাই লাঘব হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
২০১৬ সালে ২৬ জুন এমআরটি-৬ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাড়ে ছয় বছর পর তিনিই এ নতুন বাহনের উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন।
ঢাকায় অসহনীয় হয়ে ওঠা যানজট নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় ২০০৫ সালে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) প্রণয়ন করে বাংলাদেশ সরকার। ২০ বছর মেয়াদি (২০০৪-২০২৪) ওই পরিকল্পনায় মেট্রোরেল, বাসভিত্তিক উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা-বিআরটিসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ আসে।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ।জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে সমীক্ষা পরিচালনার পর সবার আগে ‘এমআরটি লাইন-৬’ নির্মাণের সুপারিশ আসে। পরের বছরই ওই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে জাইকা।
ওই সমীক্ষায় প্রথমে উত্তরা থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। পরে তা পরিবর্তন করে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত (২০.১০ কিলোমিটার) করার সিদ্ধান্ত হয়।
২০১১ সালে ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ নির্মাণ’ প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। পরের বছরের ১৮ ডিসেম্বর একনেক সভায় প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।
এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা জাপান সরকারের আর বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিলে থেকে যোগান দেওয়ার কথা ছিল। ২০২৪ সালে মধ্যে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল সে সময়।
উড়াল এই মেট্রোরেল বাস্তবায়নে ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাইকার সঙ্গে ঋণ চুক্তি করে সরকার। সে বছরই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল) নামে বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণকারী কোম্পানি গঠন করা হয়।
২০১৫ সালে জাপানের সহায়তায় এসটিপি সংশোধন (আরএসটিপি) করে মেট্রোরেলের রুট সংখ্যা বাড়ানো হয়। পরের বছরের ২৬ জুন এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নির্মাণকাজ উদ্বোধনের কয়েক দিনের মাথায় ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার কারণে কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও ফলে সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন আশ্বাসে কাজ পুনরায় চালু হয়।
২০১৬ সালের শেষ ভাগে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণে কাজ শুরু হয়। পরের বছর দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার ৫০ বছরে মেট্রোরেল উদ্বোধনের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বাধ সাধে কোভিড মহামারী। লকডাউনের কবলে পড়ে পিছিয়ে যায় নির্মাণকাজ। ফলে শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আর স্বপ্নের পথচলা শুরু করা সম্ভব হয়নি।
এর মধ্যে গত ১৯ জুলাই মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ দেড় বছর এবং প্রায় ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয় একনেক সভায়। ফলে মোট ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত আরও ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল বাড়ানো হবে। সেই অতিরিক্ত কাজসহ প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেট্রোরেল চালু হওয়াকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনন্য মাইলফলক হিসেবে দেখছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার এই বৈদ্যুতিক ট্রেনের উদ্বোধন উপলক্ষে আগের দিন পৃথক বাণীতে তারা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, “বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের শুভ উদ্বোধন দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি অনন্য মাইলফলক। আমি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগসহ প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।”
মেট্রোরেলের যাত্রা ঢাকা মহানগরীর যাতায়াত ব্যবস্থায় ভিন্ন মাত্রা ও গতি যোগ করবে মন্তব্য করে রাষ্ট্র প্রধান বলেন, “এতে নগরবাসীর কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে। প্রকল্পটি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
“…মেট্রোরেল চালুর মাধ্যমে ঢাকা মহানগরী তথা দেশের যোগাযোগ ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশেষ করে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও এর সুফল পাওয়া যাবে।”
আলাদা বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের গর্ব ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক মেট্রোরেল বাংলাদেশের নগর গণপরিবহন ব্যবস্থায় একটি অনন্য মাইলফলক। ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঢাকা মহানগরবাসীর বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্ন।
“ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৬ এর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে মহানগরবাসীর সেই স্বপ্ন পূরণ হল। মেট্রোরেল উদ্বোধনের এ মাহেন্দ্রক্ষণে আমি দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধনের বাণীতেই দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণকাজ শুরুর বার্তাও দেন সরকার প্রধান।
“পরিকল্পনা অনুযায়ী শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড এর আওতায় চারটি মেট্রোরেল লাইনের নির্মাণ বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন আছে। আগামী মাসেই বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।”
বুধবার বেলা ১১টায় উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। ধাপে ধাপে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুইশ জন আমন্ত্রিত অতিথিকে সঙ্গে নিয়ে মেট্রোরেলে চেপে তিনি আগারগাঁও প্রান্তে যাবেন।
পদ্মাসেতুর উদ্বোধনের আদলে মেট্রোরেল উদ্বোধনের দিনও একটি সুধী সমাবেশ হবে। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরে সেই অনুষ্ঠানে মেট্রোরেলের ফলকের একটি প্রতিরূপ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে পয়রা অবমুক্তকরণ ও ফায়ারওয়ার্কসের পরিকল্পনা থাকলেও সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে মোনাজাত হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশ শুরু হবে ১১টা ২৫ মিনিটে। ডিএমসিটিএল এমডি এম এ এন ছিদ্দিকের সঞ্চালনায় সেখানে কয়েকজন বক্তব্য দেবেন।
১২টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন। এরপর এরিয়াল ভিউ প্রদর্শনী এবং থিমসং পরিবেশন হবে।
সুধী সমাবেশে বক্তব্য শেষে উত্তরা উত্তর স্টেশন পরিদর্শন করবেন শেখ হাসিনা। মূল ফলক পরিদর্শন করে ফলকের পাশে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপন করবেন।
এরপর সেখান থেকে প্ল্যাটফর্মে উঠে তিনি টিকিট মেশিন ব্যবহার করে টিকেট কিনবেন। সেখানে তাকে মেট্রোরেল ও প্ল্যাটফর্মগুলো সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে।
প্ল্যাটফর্মে প্রধানমন্ত্রী সবুজ পতাকা নেড়ে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের চলাচলের শুভ সূচনা করবেন। স্মারক হিসাবে সবুজ পতাকায় স্বাক্ষর করবেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী তার জন্য সংরক্ষিত কোচের দরজায় ফিতা কেটে ট্রেনে উঠবেন। ট্রেন তিনি আমন্ত্রিত অতিথির সঙ্গে কুশল বিনিময় করবেন।
তারপর আগারগাঁও স্টেশনে নেমে প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে গণভবনে ফিরবেন।
3 days to go! HPM #SheikhHasina will take a ride from Agargaon to Uttara, and Dhaka Metro will start its operation. https://t.co/9npFYN2dJ4
— Naoki Ito (@ito_naoki) December 25, 2022
যানজটের নগরীতে যাত্রীদের নতুন অভিজ্ঞতা আর স্বস্তির যাত্রার স্বপ্ন দেখিয়ে মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। বুধবার ঢাকার প্রথম এই বৈদ্যুতিক গণপরিবহনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে শুরু হচ্ছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের লাইভ ব্লগ।