আদালতে অসুস্থ সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
Published : 05 Jul 2023, 04:23 PM
দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় হাজিরা দিতে এসে আদালতের হাজতখানায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বুধবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার কথা জানান হাজতখানার ইনচার্জ সাদিকুল ইসলাম।
আদালতপাড়ায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আজ (বুধবার) সকাল ৯টায় কেরানীগঞ্জ জেলখানা থেকে অন্য আসামিদের সঙ্গে এ মামলার আসামি বাবর ও এএইচএম ফুয়াদকে আদালত চত্বরে আনা হয়। এরপর তাদেরকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
“এর কিছুক্ষণ পর তিনি (বাবর) অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে পুলিশ পাহারায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”
অর্থ পাচারের এই মামলায় গত ২২ জুন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাবেক অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত, তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেল ও মোহতেশাম হোসেন বাবরসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি।
বুধবার এই সম্পূরক অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি গ্রহণ করেন ঢাকার ৯ নম্বর মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমান।
এ আদালতের পেশকার শরীফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র গ্রহণের বিষয় শুনানি হয়েছে। বিকালে বিচারক আদেশ দিতে পারেন।”
বিচারক আগামী ২৩ অগাস্ট এই মামলার পরবর্তী তারিখ রেখেছেন বলেও জানান তিনি।
কাফরুল থানার এই মামলায় ২০২১ সালের ৩ মার্চ তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) উত্তম কুমার সাহা ১০ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর মামলাটির অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির জন্য ছিল।
সেদিন মামলাটিতে কিছু অসঙ্গতি পাওয়র কথা জানিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সিআইডিকে আবার তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারক। সেই নির্দেশনা মেনে নতুন করে আরও ৩৭ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৪৭ জনের নামে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এপিএস সত্যজিৎ মুখার্জী, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহান, এএইচএম ফুয়াদ, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাহিম, কামরুল হাসান ডেভিড, মুহাম্মদ আলি মিনার, তারিকুল ইসলাম ওরফে নাসিম।
২০২০ সালের ১৬ মে রাতে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মহল্লার মোল্লাবাড়ী সড়কে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে দুই দফা হামলা হয়। পরে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তিনি।
ওই ঘটনায় ৭ জুন রাতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হন বরকত ও রুবেল। তাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অর্থপাচারের খবর এরপর বেরিয়ে আসতে থাকে, বেশ কয়েকটি মামলাও হয়।
অর্থপাচারের অভিযোগে ওই বছর ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে এ মামলাটি করেন সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০২০ বছর পর্যন্ত ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন বরকত ও রুবেল। ওই ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বরকত ও রুবেল বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হন।
তারা মাদক কারবার ও ভূমি দখল করেও অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন: এসি ও নন-এসিসহ ২৩টি বাস, ডাম্প ট্রাক, বোল্ডার ও পাজেরোর মালিক তারা। অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের মধ্যে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছেন বলে সিআইডির অভিযোগ।
১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর ফরিদপুরের এক আইনজীবী হত্যার মামলারও আসামি বরকত ও রুবেল।