সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়াসহ শিল্পস্থাপনা, উপাসনালয়, মাজার, ভাস্কর্যের উপর হামলা ঠেকানো ও বিচারের দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কী চাই?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ দাবি তোলা হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ এবং সুশাসনে জন্য নাগরিকের- সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারও সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় লিখিত বক্তব্যে দীর্ঘমেয়াদে সরকারের করণীয় হিসেবে ১৩টি পরামর্শ দেওয়া হয়।
কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ পরে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রূপ নিলে ব্যাপক জনরোষের মুখে গত ৫ অগাস্ট পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা।
ক্ষমতার পালাবদলে এরই মধ্যে নোবেলবিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
শিক্ষক নেটওয়ার্কের সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “বিপদ আসতে পারে তিন দিক থেকে। পূর্ববর্তী সরকারের সুবিধাভোগী, সামরিক এবং বেসামরিক আমলাদের দিক থেকে এবং যারা ভিন্ন মতাদর্শ ও রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন এবং অপরের মত সহ্য করতে রাজি নন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রথমেই বলতে হবে, তারা কী কী কাজ করবেন। আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হচ্ছে-
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান সকল জাদুঘর এবং আয়নাঘরের মতো স্বৈরাচারী জাদুঘর সংরক্ষণের দাবি জানান।
- সভায় লিখিত প্রস্তাবনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যেসব দাবি তুলে ধরা হয় সেগুলো হল-
- দীর্ঘ মেয়াদে গণমাধ্যমকে সরকারের প্রভাব মুক্ত করা, জনগণের মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিতে প্রথমেই সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা ও এই আইনে আটক সকল নিরাপরাধ ব্যক্তির মুক্তি দিতে হবে।
- অবিলম্বে পণ্যের বাজারে সকল সিন্ডিকেট বিলুপ্ত করতে হবে ও কৃষি খাতের বাজার ব্যবস্থাপনা পুনরুদ্ধার করতে হবে।
- আমলাতন্ত্র সংস্কার করে জনবান্ধব প্রশাসনিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে হবে এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হলে যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে তা যেন নিরপেক্ষ হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
- প্রশাসনকে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। যত দেশি-বিদেশি গোপন চুক্তি আছে, সেগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। দুর্নীতিদমন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে যেন দুর্নীতি দমনের কাজটি শুধু কতিপয় ব্যক্তিকে দায়বদ্ধ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে।
- স্বৈরাচারী সরকারের সময় সংঘঠিত দুর্নীতি ও লুটপাটেরও বিচার করতে হবে।
- শিক্ষা নীতি নিয়ে নতুন একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে, যার উদ্দেশ্য হবে পরিবর্তিত বাস্তবতায় বাংলাদেশের পটভূমিতে যথাযোগ্য ও বাস্তবায়নযোগ্য একটি নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। বিদ্যমান শিক্ষাক্রম বাতিল, পুনর্বিন্যাস এবং যুগোপযোগী করা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
- পাহাড়িদের তাদের জমি ফিরিয়ে দিতে এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কী করা যায়, যেন ভবিষ্যতে এই ভূমিদখল বন্ধ হয় তা নিয়ে পাহাড়িদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
- প্রবাসীদের কেবল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস হিসেবে না দেখে তাদের প্রতি মানবিক আচরণ নিশ্চিত করার জন্য তাদের প্রাণ ও জীবনমানকে যথাযথ মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
- আশু করণীয় হিসেবে জনগণের জানমালের সুরক্ষায় অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে নামতে হবে ও সকল জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ, শ্রেণি নির্বিশেষে সকলের জন্য সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
- জুলাই হত্যাকাণ্ড এবং জনগণের ওপর নৃশংস জোর-জুলুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের জন্য জাতিসংঘের সহযোগিতায় তদন্ত কমিটি এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত তদন্ত ও বিচার কাজ করতে হবে।
- অর্থনীতির চাকা সকল করতে শিল্প-কলকারখানা খুলে দিয়ে সকলের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।