পুলিশ বলছে, শুক্রবার ভোর রাতে কর্মচারী মিরাজ ও তার জুয়া খেলার ‘পার্টনারদের’ হাতে খুন হন নূরে আলম।
Published : 10 Dec 2024, 11:24 PM
ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে চার দিন ধরে নিখোঁজ স্ক্রিন প্রিন্টের ব্যবসায়ী নূরে আলমের লাশ তার কারখানার মেঝে খুঁড়ে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি আমিরুল ইসলাম বলেছেন, লাশটি দু টুকরো করে কারখানার মেঝেতে পুঁতে আবার তা পাকা করে দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় কারখানার কর্মচারী মিরাজসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
৫৭ বছর বয়সী নূরে আলমকে গত বৃহস্পতিবার থেকে খুঁজে পাচ্ছিল না তার পরিবার। পরে তারা কামরাঙ্গীরচর থানায় খবর দেন।
পুলিশ কারখানায় গিয়ে কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, আলমকে হত্যা করে কারখানার মেঝেতেই পুঁতে রাখা হয়েছে।
এরপর মঙ্গলবার সকাল থেকে হাসান নগরের ভাণ্ডারীর মোড়ে আলমের স্ক্রিন প্রিন্টের দোকান ঘিরে পুলিশ অভিযান চালায়।
পুলিশ বলছে, শুক্রবার ভোর রাতে কর্মচারী মিরাজ ও তার জুয়া খেলার ‘পার্টনারদের’ হাতে খুন হন নূরে আলম। মিরাজকে ধরার পর লাশের অবস্থান জানতে পারেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কারখানার মেঝে
খুঁড়ে লাশ তোলা হয়। সিআইডির তদন্তকারীরা সেখান থেকে আলামত সংগ্রহ করেন।
ওসি আমিরুল ইসলাম বলেন, “ওই কারখানায় নূরে আলম ও কর্মচারী মিরাজ দুজন দুটি চৌকিতে ঘুমাতেন। শুক্রবার ভোররাতে মিরাজকে আরও তিনজনকে নিয়ে জুয়া খেলতে দেখে নূরে আলম বকাঝকা করলে তাকে খুন করেন মিরাজ ও তার জুয়ার পার্টনাররা।”
ভাণ্ডারীর মোড়ে একটি সরু গলির মধ্যে টিনশেড ছাপড়া ঘর ভাড়া নিয়ে এক বছর আগে এই কারখানা করেছিলেন নূরে আলম। তার পরিবার থাকে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে গ্রামের বাড়িতে।
কারখানার ভেতরে মালিকের লাশ পুঁতে রাখা হয়েছে শুনে সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষ ওই এলাকায় ভিড় করেন। বিকেলে যখন মেঝে খুঁড়ে লাশ তোলা হয়, তখন ভিড় সামলাতে পুলিশের গলদঘর্ম অবস্থা।
নূরে আলমের জামাতা আতাউল্লাহ খান সজীব বলেন, শুক্রবার তার শ্বশুরের গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। ভোরবেলায় গাড়ি ধরার জন্য বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শ্বাশুড়িকে (আলমের স্ত্রীকে) ফোন করে ভোরবেলা জাগিয়ে দিতে বলেছিলেন।
সে অনুযায়ী ভোরে যখন আলমের স্ত্রী ফোন করেন, তখন ফোনটি ধরা হলেও আলম কথা বলেননি, বরং কিছু চিৎকার-চেচামেচি শোনা যায়। এরপর থেকেই আলমের ফোন বন্ধ ছিল।
খোঁজ না পেয়ে পরিবারের লোকজন কারখানায় গিয়ে কর্মচারী মিরাজকে পায়। মিরাজও পরিবারের সঙ্গে কারখানা মালিককে খোঁজাখুঁজি করে। পরে তারা পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনার আদ্যোপান্ত বলার পর পুলিশ মিরাজকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে লাশের সন্ধান পাওয়া যায়।
আতাউল্লাহ বলছেন, তিনি পুলিশের কাছ থেকে যা শুনেছেন সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে বাইরে থেকে তিনজনকে এনে কারখানার ভেতরে জুয়া খেলছিলেন মিরাজ। ভোর রাত ৪টার পরে জুয়া খেলা নিয়ে তাদের মধ্যে হইচই হলে ঘুম ভেঙে যায় আলমের।
“উনি ঘুম থেকে জেগে মিরাজকে বকাঝকা শুরু করেন। এসময় মিরাজের সহযোগীদের একজন উনাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়, আরেকজন হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এরপর জবাই করে কোমর থেকে দুই টুকরো করে মেঝেতে দুই ফিটের মত খুঁড়ে সেখানে পুঁতে দেয় তারা। পরে ইট-সিমেন্ট এনে কারখানার মেঝেও পাকা করে দেয়।”
পুরনো খবর